সুসংবাদ প্রতিদিন

দুর্গাপুরে কেঁচো সার উৎপাদন করে নারী উদ্যোক্তারা স্বাবলম্বী

প্রকাশ : ১৩ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  কলিহাসান, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পিঁছিয়ে থাকা গ্রাম মাকরাইল। এক সময় ওই গ্রামের নারীরা ছিলেন পুরোটাই গৃহকেন্দ্রিক। আয় বলতে ছিল স্বামীর সামান্য উপার্জনে সংসার চালানো। কিন্তু এখন দৃশ্যপট বদলে গেছে। কেঁচো সার তৈরির মাধ্যমে এখন সুজনা খাতুন হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী, সংসারে এনেছেন অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। শুরুটা ছিল ২০১৬ সালের দিকে সুজনা খাতুনের। স্থানীয় একটি এনজিও’র পরামর্শে তিনি গোবর দিয়ে কেঁচো সার তৈরির কাজ শুরু করেন। তখন ছিল অল্প পরিসরে, তবে খুব শিগগিরই তিনি টের পান এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। সেই উপলব্ধি থেকেই উৎপাদন বাড়াতে থাকেন তিনি। এখন তার সংসারের সব খরচই এখন তিনি নির্বাহ করতে পারেন নিজের উপার্জন থেকে।

সুজনা বলেন, গোবর ফেলে না দিয়েই এই গোবর দিয়ে প্রথমে আমি শুরু করি। এরপর আমাকে দেখে অনেকেই শুরু করে একেএকে এখন ৪৫ জন নারী আছে এই গ্রামে এই কাজে। আমার এই আয় থেকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছি, সংসারে দিচ্ছি এমনকি স্বামীকেও সহযোগিতা করতে পারছি। সুজনার পথ অনুসরণ করে আরেক নারী মজিদা খাতুন নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন কেঁচো সার উৎপাদনের একটি ইউনিট। তিনি বলেন, সংসারের কাজ সামলে সময় বের করে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন এই উদ্যোগ, দেখছেন সফলতার মুখ। স্বামীর পাশাপাশি সংসারে এখন তিনিও খরচ চালাতে পারছেন।

মধ্যবয়সী নারী সুফিয়া খাতুন কেঁচো সার বিক্রি করে উপার্জিত অর্থে কিনেছেন দুটো গরু। গরু থেকে পাচ্ছেন গোবর, যা আবার কাজে লাগছে সার তৈরিতে। সম্প্রতি তিনি ৪১ মণ কেঁচো সার বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, এই কেঁচো সার করে আমরা সবাই ভালো আছি এখন, যতদিন বেঁচে আছি এটাই করে যাব। এই নারীদের অগ্রযাত্রায় গর্বিত এলাকাবাসী। তারা বলছেন, এখন স্বামীরা বাইরে উপার্জন করছেন, স্ত্রীরাও ঘরে বসেই অর্থ উপার্জন করছেন তাতেই বদলে গেছে সংসারের ভাগ্য।

এদিকে তাদের উদ্যোক্তা হওয়ার এই খবর পৌঁছেছে কৃষি বিভাগেও। উদ্যোক্তা নারীদের উন্নয়নে গত দুই বছর ধরে সরকারি নানা সহযোগিতা পাচ্ছেন তারা। মাঠপর্যায়ের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ জানান, প্রতিকেজি কেঁচো সার বিক্রি হয় ১০ টাকা দরে, আর একজন নারী গড়ে মাসে ১ হাজার কেজি সার উৎপাদন করছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০ হাজার টাকা। স্থানীয় কৃষকরা যেমন আগ্রহ নিয়ে এই সার কিনছেন, তেমনি কৃষি অফিস থেকেও তা কেনা হয়।

এ নিয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. রায়হানুল হক বলেন, প্রাকৃতিক সার হিসেবে কেঁচো সার শুধু মাটির উর্বরতাই বাড়ায় না, বাড়ায় ফসলের ফলনও। মাকরাইল গ্রামের এই অংশ এখন পরিচিত পাচ্ছে কেঁচো সারের গ্রাম নামে। যা কৃষি অফিসের একটি মাইলফলক। আমরা তাদের পাশে আছি সবসময়ই। এই সাফল্যের গল্প শুধু জীবিকা নয়, এটা নারীর ক্ষমতায়নেরও গল্প। গ্রামের নারীরা এখন শুধু গৃহিণী নন, বরং হয়েছেন একজন প্রকৃত উদ্যোক্তা সংসার চালনার পাশাপাশি জীবিকার চাবিকাঠিও এখন তাদের হাতেই।