রাজউককে মিথ্যা হলফনামা দিয়েছেন হাসিনা ও তার পরিবার

প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ৩০ কাঠা প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা আরও তিন মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। গতকাল বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ-৪ আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার তিনজন সাক্ষী। তারা হলেন দুদকের উপ-পরিচালক সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া ও এসএম রাশেদুল হাসান। আদালত সূত্রে জানা গেছে, সাক্ষীরা আদালতকে বলেছেন, রাজউকের সংশ্লিষ্ট বিধান অনুযায়ী, ঢাকায় যাদের প্লট-গাড়ি-বাড়ি কিছুই নেই, তারা মূলত সংস্থার প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করতে পারেন। কিন্তু শেখ হাসিনার পরিবার রাজউকের কাছে মিথ্যা হলফনামা দেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়, তাদের ঢাকা শহরে জমি-বাড়ি কোনো কিছুই নেই। কিন্তু দুদকের অনুসন্ধান ও তদন্তে বেরিয়ে এসেছে, শেখ হাসিনা পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের নামে বাড়ি-জমি-গাড়ি সবই আছে। ক্ষমতার অপব্যবহার করে তারা রাজউকের ৬০ কাঠার প্লট নিয়েছেন, যা অপরাধ।

সাক্ষীরা আরও বলেন, প্রভাব খাটিয়ে রাজউকের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা প্লট বরাদ্দ নিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি করেছেন। এই তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক ও ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি আসামি।

তাদের মধ্যে এক মামলায় শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ জন, আরেক মামলায় শেখ হাসিনা, আজমিনা সিদ্দিকসহ ১৮ জন এবং অন্য মামলায় শেখ হাসিনা, রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববিসহ ১৮ জন আসামি। তবে প্রতিটি মামলার আসামি শেখ হাসিনা এবং রাজউকের কয়েকজন কর্মকর্তা। তারা পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়েছে। এক এক করে তিনজন তিন মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার পর বিচারক রবিউল ইসলাম ২৮ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশনের বিশেষ পিপি তরিকুল ইসলাম সাক্ষ্য গ্রহণ এবং নতুন তারিখের বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এর আগে গত ৩১ জুলাই একই আদালত এই তিন মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।

মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ১৬১/১৬৩/১৬৪/৪০৯/১০৯ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। অনুসন্ধানের পর অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি দুদক এই মামলাগুলো করে। গত ২৫ মার্চ ছয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক। অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যসহ ২৯ জন আসামি। এরইমধ্যে প্রত্যেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা ও তার ছেলে-মেয়েসহ অন্যদের বিরুদ্ধে বাকি তিনটি মামলায় ১১ আগস্ট ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এ সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়।