সুসংবাদ প্রতিদিন

কেশবপুরে শিম চাষে কৃষকরা স্বাবলম্বী

প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মশিয়ার রহমান, কেশবপুর (যশোর)

যশোরের কেশবপুরে গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ভরতভায়না থেকে সুফলাকাটি ইউনিয়নের কলাগাছি বাজার পর্যন্ত সড়কের বেশিরভাগ এলাকার রাস্তার পাশে শিমগাছে বেগুনি ও সাদা ফুলের সমারোহ ছড়াচ্ছে মুগ্ধতা। গাছের নিচে দেখা যায়, ছোট-বড় জলাশয়। জলাশয়ের পাড়ঘেঁষে এখন শুধু শিমগাছের লতা ঝুলছে। কোনো কোনো জলাশয়ের পাড়ে দেখা মিলবে লাউ কিংবা কুমড়াগাছ। উপজেলার গৌরীঘোনা ইউনিয়নের মধ্যে ভরতভায়না, সন্যাসগাছা, ভেরচি ও বুড়লি গ্রাম। এখানকার বেশিরভাগ মানুষ জলাশয়ে (ছোট-বড় পুকুর) মাছ চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে আবাদ করেছেন নানা সবজি। রবি মৌসুমে এই অঞ্চলের জলাশয়ের পাশঘেঁষে শোভা পাচ্ছে শিমগাছ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, তিন মৌসুমের মধ্যে এই উপজেলায় খরিপ-১ এ ৭৫০ হেক্টর, খরিপ-২ এ ৮৪১ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে কমবেশি ৯৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়। এর মধ্যে খরিপ-১ এ গৌরীঘোনা ইউনিয়নে সমতল ও ঘের মিলিয়ে ১৩৫ হেক্টর, খরিপ-২ এ ১৬৩ হেক্টর এবং রবি মৌসুমে ১৭০-১৮০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করেন তারা। পর্যায়ক্রমে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

সন্যাসগাছা গ্রামের কৃষক আফসার সরদার বলেন, ?শিমগাছগুলো পরিচর্যা করছি। এখন ফলন এসেছে। এই সময়ে বেশি যত্ন করতে হয় গাছের।’ আফসার সরদার জলাশয়ের পাশে ৩০০ মান্দা (মান্দা হচ্ছে কয়েকটি গাছের সমষ্টি, যা একই স্থানে লাগানো থাকে) শিমগাছ লাগিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এখন শিমের একটাই শত্রু, সেটি হলো কালোমাকড়। গাছের পাতার নিচে এই মাকড় লেগে পুরো পাতার রস খেয়ে ফেলে। এতে পাতা শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই ওষুধ ছিটানো লাগছে।’ কৃষি বিভাগের লোকজন পরামর্শ দিতে আসেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাঝেমধ্যে আসেন। দুই-একটা ওষুধের নাম বলে যান। কিন্তু তা দিলেও কাজ হয় না।’ পাশের গ্রাম ভরতভায়নার বাসিন্দা লাভলু হোসেন বলেন, ‘ঘেরের পাশে আমার দেড়শ’ মান্দা আর ১০ কাঠা জমিতে রয়েছে শিমগাছ। সবমিলিয়ে চার শতাধিক মান্দা। তবে গাছে কালোমাকড় খুব সমস্যা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একটু আগে ডিলারের কাছ থেকে পাইন ও আশামিল ৭২ নামে দুটি ওষুধ এনেছি। এগুলো গাছে প্রয়োগ করব।’

সন্যাসগাছা গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার পাঁচশ’ মান্দা গাছ রয়েছে। ঘের রয়েছে ৪৬ শতক জমিতে। ঘেরে চিংড়ি ও সাদা মাছ যেমন, রুই-কাতলা চাষ করছি। ঘেরের পাড়ে কিছু লাউগাছ আছে। গত মাস থেকে প্রতি দিন লাউ বিক্রি করছি। ১০-১৫টি লাউ প্রতিদিন তুলি। প্রতিটি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে বিক্রি করছি। সপ্তাহখানেক হলো কুমড়ার ফলন শেষ হয়েছে। দুই হাজার টাকার বেশি কুমড়া বিক্রি করেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘তিন মাস পরপর মাছ ধরে বিক্রি করি। গত সপ্তাহে ১৫ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি। আমাদের গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ ঘেরের সঙ্গে সাথী ফসল হিসেবে সবজি চাষ করেন। এতে সবাই স্বাবলম্বী হয়েছেন।

গৌরীঘোনা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) আফজাল হোসেন বলেন, ‘গৌরীঘোনা, সুফলাকাটি, মঙ্গলকোট ইউনিয়নের মানুষ ঘেরের পাশে সবজি চাষ করেন। এই অঞ্চলে যেমন মাছের উৎপাদন ভালো, তেমননি সবজিরও। বর্তমানে শিম চাষ হচ্ছে বেশি। এছাড়া লাউ, পালংশাক, কুমড়া ও টমেটোর আবাদ হয়। সবজি ও মাছ চাষ করে এসব গ্রামের প্রায় সবাই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন। কেশবপুর উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সুদীপ বিশ্বাস বলেন, ‘সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, গৌরীঘোনা ইউনিয়নে ছোট-বড় ১৪৫২টি ঘের রয়েছে, যার আয়তন ৭৬০ হেক্টর। সুপলাকাটিতে ১২১৬টি ঘেরের আয়তন ১৩৩০ হেক্টর। গত বছর গৌরীঘোনা থেকে মাছের উৎপাদন হয়েছে- ২ হাজার ৪২৬ মেট্রিক টন এবং সুফলাকাটি থেকে ৪ হাজার ৪৮৫ টন। গত অর্থবছরে কেশবপুর উপজেলায় মোট উৎপাদন ৩৬ হাজার ৭৮৯ মেট্রিক টন। এর মধ্যে গলদা চিংড়ি ২ হাজার ১৯২ টন, আর বাগদা চিংড়ি ২৫২ মেট্রিক টন। চিংড়ি মাছের ৭০ শতাংশের বেশি উৎপাদন হয় গৌরীঘোনা ও সুফলাকাটি ইউনিয়নে।

কেশবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘যশোর জেলার মধ্যে কেশবপুরে বেশি সবজি চাষ হয় বেশি। আগাম সবজি হিসেবে গৌরীঘোনা ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন এগিয়ে। এখানে বর্তমানে বেশি শিম চাষ হচ্ছে। কিছুদিন আগে আমরা গিয়েছিলাম তরমুজ চাষ দেখতে। এসব জায়গায় গ্রীষ্মকালীন তরমুজের আবাদও ভালো হয়।’ শিমগাছে কালোমাকড়ের আক্রমণ প্রতিরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে কালো মাকড় বলে কিছু নেই। অন্য কোনো পোকা কিংবা মাছি কি না, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে আমি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি। নমুনা আনতে বলা হয়েছে। আগে দেখি, তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।