ইসির সমালোচনায় বাগেরহাট আসন বাড়ায় খুশি গাজীপুর

* চারটি করে আসন চান মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের প্রতিনিধিরা * কামরাঙ্গীরচর থানা ছাড়া ঢাকা-২ আসন নয়

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আসন কমানোয় বাগেরহাটবাসী নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সমালোচনা করলেও বাড়ানোতে খুশি গাজীপুরবাসী। গতকাল মঙ্গলবার তৃতীয় দিনে ঢাকা অঞ্চলের ২৭টি আসনের তিন শতাধিক দাবি-আপত্তির শুনানিতে উঠে এসেছে এ সব তথ্য। সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বে চলছে এ শুনানি।

সংসদীয় আসনের সীমানা পুননির্ধারণের দাবি-আপত্তির শুনানিতে ইসিকে জানিয়েছেন তারা।

সীমানা পুননির্ধারণ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের দাবি-আপত্তির শুনানিতে বাগেরহাটের আসন কমানোর ক্ষোভ জানান আপিলকারীরা। তবে আসন বাড়ানোয় ইসির প্রশংসায় পঞ্চমুখ গাজীপুরবাসী।

গাজীপুরের প্রতিনিধিরা বলেন, আসন বাড়ানো ইস্যুতে ইসির পাশে থাকবেন তারা।

শুনানিতে বিএনপি নেতা এ কেএ ম ফজলুল হক মিলন বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ছিল গাজীপুরে আসন বাড়ানোর। সিইসি ও অন্য যে নির্বাচন কমিশনার বর্তমানে রয়েছেন, তারা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে সততা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতায় আপনার এক নম্বরে রয়েছেন।

বেশি প্রশংসা করব না জানিয়ে মিলন ইসির উদ্দেশে বলেন, আপনারা গাজীপুরবাসীর প্রতি যে বদান্যতা দেখিয়েছেন তাতে আমরা কৃতজ্ঞ, সময়যোপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যে কোনো ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস এসেছে বিএনপির এই নেতার কাছ থেকে।

মিলন বলেন, আপনাদের পাশে থেকে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। যে কোনো আন্দোলন, সংগ্রাম বলেন ন্যায় সঙ্গত বিষয়ে সাড়া দেব। অধিকার আদায়ে ইসিকে সহায়তা করব।”

কৃতজ্ঞতার জবাবে শুনানি শেষে মঞ্চ থেকে ইসি সচিব বলেন, আপনারা এসেছেন, এতেই আমরা ধন্য। গত ৩০ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্র্নিধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়। আর গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে করা হয় ছয়টি।

কামরাঙ্গীরচর থানা ছাড়া ঢাকা-২ আসন নয়: কামরাঙ্গীরচর থানা ছাড়া ঢাকা-২ আসন নয়। এক্ষেত্রে এ থানার অন্তর্গত ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড তিনটি ঢাকা-২ আসনের সঙ্গেই রাখার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।

মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সংসদীয় আসনের শুনানি শেষে এমন দাবি জানান তারা।

অ্যাডভোকেট নুরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডকে ঢাকা-২ আসন থেকে পৃথক করেছে কমিশন। সেখানে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ডকে ঢাকা-১০ আসনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডকে তারা ঢাকা-৭ আসনের সঙ্গে যুক্ত করেছে। ইসি এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৫৯টি আবেদন পড়েছে। ৫৯টি আবেদনের মধ্যে ৫৭টি আবেদন হচ্ছে বিপক্ষে আর ২টি আবেদন পক্ষে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বলেছি যে ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড কামরাঙ্গীরচরের অধীনে যেটা আছে, এই ৩টি ওয়ার্ড, ঢাকা-২ আসনের মধ্যেই থাকবে। কেন থাকবে, কারণ ঢাকা-২ আসনে একটি মাত্র থানা কামরাঙ্গীরচর। আর বাকি হলো কেরানীগঞ্জ ও সাভার উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। কামরাঙ্গীরচর থানা নিয়েই ঢাকা-২ আসন। সুতরাং কামরাঙ্গীরচর থানাকে যদি অর্থাৎ এই তিনটি ওয়ার্ডকে যদি ঢাকা-২ আসন থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে ঢাকা-২ আসনে কোনো থানা থাকে না। একটি থানাও অবস্থিত হয় না।

নুরে আলম সিদ্দিকী সোহাগ বলেন, কামরাঙ্গীরচরের জনগণ কেরানীগঞ্জ চাষাবাদ করেন। তারপর ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস-আদালত সবকিছু কেরানীগঞ্জের সঙ্গে কানেক্টেড। সুতরাং আমরা বলেছি যে আগের ঢাকা-২ আসনে কেরানীগঞ্জের ছয়টি সাতটি ইউনিয়ন, সাভারের কয়েকটি ইউনিয়ন এবং কামরাঙ্গীরচর থানার ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড; এটার সমন্বয়ে ঢাকা-২ আসন। এটাই কামরাঙ্গীরচরের জনগণ ও ঢাকা-২ আসনের সর্বস্তরের জনগণের চাওয়া।

চারটি করে আসন চান মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের প্রতিনিধিরা: নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে চারটি করে সংসদীয় আসনের দাবি জানিয়েছেন মানিকগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ জেলার প্রতিনিধিরা। এ দুই জেলার প্রতিনিধিরা ২০০১ সালের সীমানায় ফিরে যেতে চান বলে ইসিকে জানিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনে সংসদীয় আসনের শুনানিতে তারা এ দাবি জানান।

মানিকগঞ্জের প্রতিনিধি ব্যারিস্টার খাইরুল আলম চৌধুরী বলেন, ২০০১ সাল পর্যন্ত মানিকগঞ্জ জেলায় চারটি সংসদীয় আসন ছিল। ২০০৮ সালে মানিকগঞ্জে একটি আসন কমিয়ে তিনটি করা হয়। এতে সংসদে মানিকগঞ্জের জনগণের প্রতিনিধিত্ব কমেছে। চারটি আসন থাকায় আগে যে বরাদ্দ ছিল এখন তা কমে গেছে। আমরা চারটি আসনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি।

মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আফরোজা খানম রিতা বলেন, আমি এখানে এসেছি মানিকগঞ্জের সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে। ২০০১ সালের ন্যায় মানিকগঞ্জে চারটি আসন মানিকগঞ্জের সব স্তরের মানুষের দাবি।

অপরদিকে মুন্সীগঞ্জের প্রতিনিধিরা বলেন, মুন্সীগঞ্জে এখন তিনটি আসন রয়েছে। এটি বাড়িয়ে ২০০১ সালের মতো চারটি আসন করার জন্য আমরা দাবি জানিয়েছি। সেইসঙ্গে প্রবাসীদের ভোটাধিকারের বিষয়গুলো তুলে ধরেছি।