মার্কিনিদের বিশ্বাস গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক ভোটার বিশ্বাস করেন যে ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। গত বুধবার প্রকাশিত কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির জরিপে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। জরিপ অনুযায়ী, মার্কিন ভোটারদের ১০ জনের মধ্যে ৬ জনই চান না যে ওয়াশিংটন ইসরায়েলকে আরও সামরিক সহায়তা পাঠাক। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, যারা মনে করেন গণহত্যা ঘটছে তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশই ডেমোক্র্যাট ভোটার। রিপাবলিকানদের একটি বড় অংশ- প্রায় ৬৪ শতাংশ মনে করেন ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে না। যদিও ২০ শতাংশ রিপাবলিকান মনে করেন এটি গণহত্যা। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে কুইনিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয় জরিপে অংশ নেওয়া ভোটারদের এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা শুরু করেছে।

কুইনিপিয়াকের তথ্য অনুযায়ী, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং ইসরায়েলিদের প্রতি সহানুভূতিশীল মার্কিন ভোটাররা প্রায় সমানভাবে বিভক্ত। কারণ ৩৭ শতাংশ বলেছেন তারা ফিলিস্তিনিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল। আর ৩৬ শতাংশ বলেছেন তারা ইসরায়েলিদের প্রতি বেশি সহানুভূতিশীল।

কুইনিপিয়াক ইউনিভার্সিটির জনমত জরিপ বিশ্লেষক টিম মালয় এক প্রেস রিলিজে বলেছেন, “ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন বাড়ছে, আর ইসরায়েলকে সামরিকভাবে সহায়তা করার আগ্রহ তীব্রভাবে কমছে। আর ইসরায়েল যেভাবে গাজা অভিযানে এগোচ্ছে, তার একটি কঠোর মূল্যায়ন কুখ্যাত এক শব্দকে সামনে নিয়ে আসছে।” এই জরিপে এক হাজার ২২০ জন স্ব-পরিচিত নিবন্ধিত ভোটারকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ এনেছে, যদিও দেশটির সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে ফিলিস্তিনের গাজা নগরীর আরও ভেতরে ঢুকে পড়েছেন ইসরায়েলি সেনারা। ট্যাংক নিয়ে হামলা চালিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে সেখানকার বাড়িঘর। মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিগ্?বিদিক পালাচ্ছেন নগরীর বাসিন্দারা। গত মঙ্গলবার গভীর রাতে গাজা নগরীর উত্তর সীমানায় অবস্থিত এবাদণ্ডআলরহমান এলাকায় প্রবেশ করে ইসরায়েলি বাহিনী। এ সময় তারা বিভিন্ন আবাসিক ভবনে গোলাবর্ষণ করে। এতে অনেকে আহত হন। বাড়ি ছাড়তে বাধ্য করা হয় অসংখ্য বাসিন্দাকে।

এবাদণ্ডআলরহমান থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে গাজা নগরীর জালা স্ট্রিট অবস্থিত। সেখানকার বাসিন্দা সাদ আবেদ (৬০) বলেন, ‘হঠাৎ শুনতে পেলাম এবাদণ্ডআলরহমানে ট্যাংক ঢুকে পড়েছে। এর মধ্যে বিস্ফোরণের শব্দ তীব্র হতে থাকে। দেখি মানুষজন আমাদের এলাকায় পালিয়ে আসছে। যুদ্ধবিরতি না হলে আমাদের বাড়ির সামনেই ট্যাংক দেখতে পাব।’

ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা গাজা নগরীতে নতুন করে অভিযান শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের দাবি হামাসের শেষ ঘাঁটি সেখানে অবস্থিত। অপরদিকে উপত্যকাটির প্রায় ২২ লাখ মানুষের অর্ধেকই এখন সেখানে বসবাস করছেন। হামলার কারণে ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ এলাকা ছেড়েছেন। তবে নগরীর খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের নেতারা বলেছেন, তারা সেখানেই অবস্থান করবেন। কারণ, গাজা নগরী ছেড়ে দক্ষিণ দিকে পালানোর চেষ্টা মৃত্যুদণ্ডের শামিল।

এদিকে গত বুধবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আরবি ভাষার মুখপাত্র আভিচাই আদ্রেয়ি বলেন, ‘গাজা নগরী খালি করতেই হবে। আমি নিশ্চিত করতে চাই, দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল ফাঁকা এলাকা রয়েছে। এ ছাড়া গাজার মধ্যাঞ্চলের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির এবং আল-মাওয়াসিতেও ফাঁকা জায়গা রয়েছে।’ যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, গাজা নিয়ে আজ হোয়াইট হাউসের একটি বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। তিনি জানান, এ বছরের মধ্যেই ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলের যুদ্ধের মীমাংসা হবে।

অপরদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সারের সঙ্গে বৈঠক করবেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকাটিতে অনাহার ও অপুষ্টির কারণে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শিশু রয়েছে। এ নিয়ে যুদ্ধের মধ্যে এখন পর্যন্ত অনাহারে ৩১৩ জনের মৃত্যু হলো; যার মধ্যে ১১৯টিই শিশু। এ সময় ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে অন্তত ৭৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১৮ জন ত্রাণপ্রত্যাশী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে উপত্যকাটিতে ৬২ হাজার ৮১৯ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৬২৯ জন।

ভেনিসে বিক্ষোভ: গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদে ইতালির ভেনিসে বিক্ষোভ হয়েছে। গতকাল ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান ভবনের বাইরে এ বিক্ষোভ হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীদের হাতে ‘ফিলিস্তিন মুক্ত কর’ এবং ‘গণহত্যা বন্ধ কর’ প্ল্যাকার্ড ছিল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু নিজ দেশে যুদ্ধের জন্য সমালোচিত হচ্ছেন। গত মঙ্গলবার হাজার হাজার ইসরায়েলি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশ করেছেন। তারা যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়ে গাজায় হামাসের হাতে জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন।