নারায়ণগঞ্জে বিস্ফোরণে একই পরিবারের চারজন নিহত
প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চারজন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দগ্ধ হাসান গাজী (৪০) মৃত্যুবরণ করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর দুপুরে মারা যায় তার চার বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত। এর আগে বিস্ফোরণের দিনই প্রাণ হারায় এক মাস বয়সী শিশু ইমাম উদ্দিন এবং শাশুড়ি তাহেরা আক্তার (৫৫)। একই পরিবারের চার সদস্যের করুণ মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
বার্ন ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক সার্জন ডা. সুলতান মাহমুদ শিকদার জানিয়েছেন, নিহত হাসানের স্ত্রী সালমা (৩৫) এবং তার শ্যালিকা আসমা (৩২) এখনো আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। দুজনেরই শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে, অবস্থাও সংকটাপন্ন। বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে গত শুক্রবার রাত ৩টা ৩০ মিনিটের দিকে, সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী সিআইখোলা এলাকার একটি টিনশেড বাড়ির ভাড়াটিয়া কক্ষে। সবাই যখন ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং মুহূর্তেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে নারী ও শিশুসহ নয়জন দগ্ধ হন।
বাড়ির মালিক জাকির খন্দকার থাকেন ঢাকার উত্তরায়। বিস্ফোরণে নিহত তাহেরার স্বামী আব্দুর রশীদ ছিলেন বাড়ির তত্ত্বাবধায়ক। তার মৃত্যুর পর বাড়িতে আত্মীয়স্বজনেরা বসবাস করছিলেন। প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস ধারণা করছে, ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণ থেকেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। তবে স্থানীয়দের দাবি, গ্যাস লাইন লিকেজই এই বিস্ফোরণের জন্য দায়ী। তাদের মতে, বাড়ির নিচ দিয়ে তিতাস গ্যাসের মোটা পাইপলাইন রয়েছে এবং দীর্ঘদিন ধরে গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পূর্বেও সেখানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয়রা আরও প্রশ্ন তুলেছেন, বিস্ফোরণের জন্য যে ফ্রিজের কম্প্রেসারের কথা বলা হচ্ছে সেটি এখনও অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। তাঁদের দাবি, যদি সত্যিই কম্প্রেসার বিস্ফোরিত হতো, তবে ফ্রিজ অক্ষত থাকার কথা নয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার এলাকাবাসী ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে মানববন্ধনও করেন। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ বলেন, ‘বাড়িটির গ্যাস লাইন বৈধ। রোববার ও সোমবার আমাদের দল এলাকাটি পরিদর্শন করেছে, তবে কোনো লিকেজ পাওয়া যায়নি।’
আদমজী ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা মিরন মিয়াও জানান, প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে গ্যাস লিকেজের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে অধিকতর তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে। এদিকে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল বিভাগও। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনূর আলম বলেন, ‘হতাহতের স্বজনেরা চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এখনো থানায় আসেননি। ফলে কোনো মামলা হয়নি।’
