আমরণ অনশনে যাওয়ার ঘোষণা প্রাথমিক শিক্ষকদের

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সহকারী শিক্ষকদের শুরুর পদের বেতন ১১তম গ্রেড করাসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে মহাসমাবেশ করেছেন দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা। মহাসমাবেশ চলাকালেই পুলিশের গাড়িতে করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে স্মারকলিপি দেন শিক্ষক নেতারা। তবে দাবি পূরণে সরকার থেকে আশ্বাস পাননি তারা। এ জন্য দাবি পূরণে এবং প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করার জন্য আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছেন তারা। যদি এ সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হয় তাহলে পরদিন ২৬ সেপ্টেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেই আমরণ অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক নেতারা।

প্রাথমিক শিক্ষকদের ছয়টি পৃথক সংগঠনের মোর্চা ‘সহকরী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’ এই মহাসমাবেশের ডাক দেয়। এতে সারা দেশ থেকে হাজারো শিক্ষক অংশ নেন। পুরো শহীদ মিনার চত্বর কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় শিক্ষকের পদচারণায়। সকাল থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচি বিকেলে চারটার পর নতুন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়। বর্তমানে সারা দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌনে চার লাখের মতো শিক্ষক আছেন। তাদের মধ্যে প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড এত দিন ১১তম ছিল। গত মাসে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়িয়ে দশম গ্রেড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আদালতের রায় এবং ‘প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে গঠিত পরামর্শক কমিটি’র সুপারিশের আলোকে এই সিদ্ধান্ত হয়।

তবে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১৩তমই (শুরুর মূল বেতন ১১ হাজার টাকা, এর সঙ্গে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যোগ হয়) রয়ে গেছে। পরামর্শক কমিটি ‘সহকারী শিক্ষক’ পদ বিলুপ্ত করে শুরুর পদ ‘শিক্ষক’ করার সুপারিশ করে ‘শিক্ষক’ হিসেবে শুরুতে বেতন গ্রেড ১২তম করতে বলেছে। এরপর দুই বছর পর চাকরি স্থায়ীকরণ ও আরও দুই বছর পর তারা ‘সিনিয়র শিক্ষক’ হবেন। তখন তাদের বেতন গ্রেড হবে ১১তম। তবে পরামর্শক কমিটির সুপারিশ সংশোধন করে সহকারী শিক্ষকদের শুরুর পদের বেতন গ্রেড ন্যূনতম ১১ তম গ্রেড করাসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন সহকারী শিক্ষকেরা। তাদের অপর দুটি দাবি হলো প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ শতভাগ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ করা এবং ১০ বছর ও ১৬ বছরের উচ্চতর গ্রেড পাওয়ার জটিলতা নিরসন করা। এই তিন দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকাল থেকে শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ শুরু করেন শিক্ষকেরা। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে শিক্ষকেরা বাস ভাড়া করে মহাসমাবেশে আসেন। শিক্ষক নেতা মুনির হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন, শিক্ষক নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ, শাহিনুর আল আমিন প্রমুখ। মহাসমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও অংশ নিয়ে সংহতি জানান। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শিক্ষক নেতা সেলিম ভূঁইয়া বর্তমান সরকার এই দাবি পূরণ না করলে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এই দাবি পূরণের আশ্বাস দেন। মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ ছিদ্দিক উল্লাহ মিয়া বলেন, শিক্ষকের দাবি পূরণ না করা হলে তিনি শিক্ষকের পক্ষে আইনি লড়াই করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করবেন। শিক্ষক মহাসমাবেশে অংশ নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার গুরুত্বারোপ করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী বলেন, যে দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া হয় না, সেই দেশে শিক্ষার মেরুদণ্ড ভঙ্গুর হয়ে যায়। আরও সংহতি জানান আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সেক্রেটারি জেনারেল এ বি এম ফজলুল করিম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মো. বাদিউল কবীর প্রমুখ।