সুসংবাদ প্রতিদিন

শরীয়তপুরে পেঁপে চাষে বাণিজ্যিক সাফল্য

প্রকাশ : ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এস এম মজিবুর রহমান, শরীয়তপুর

পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকার কৃষিপ্রধান জেলা শরীয়তপুরের পলিযুক্ত উর্বর জমি আর কৃষি বিভাগ ও কৃষকদের পরিশ্রম মিলে নতুন এক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে উচ্চমূল্যের ফসল পেঁপে চাষে। তুলনামূলক কম খরচ ও বেশি লাভজনক হওয়ায় কৃষক অন্যান্য ফলের তুলনায় বাণিজ্যিক সফলতার কারণে ঝুকছেন পেঁপে আবাদে। এছাড়াও পেঁপে শুধু একটি ফল নয়, এর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি পেঁপের লেটেক্স (দুধ) ওষুধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে ব্যাপক রপ্তানির সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। স্থানীয় পাইকারের মাধ্যমে শরীয়তপুরের পেঁপে চলে যাচ্ছে ঢাকার বাজারে। এতে কৃষকরাও অর্থনৈতিকভাবে আগের তুলনায় বেশি লাভবান হচ্ছেন। উচ্চমূল্যের ফসল এই পেঁপে আবাদ বৃদ্ধিকল্পে কৃষি বিভাগও কৃষকদের উন্নত জাত ব্যবহারের পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর শরীয়তপুর সূত্র জানিয়েছে, জেলায় এবার ২০১ হেক্টর জমিতে পেঁপের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ভেদরঞ্জ উপজেলায় ৬৫ হেক্টর, জাজিরা উপজেলায় ৬০ হেক্টর, নড়িয়া উপজেলায় ৩০ হেক্টর, গোসাইরহাট উপজেলায় ১৬ হেক্টর, ডামুড্যা উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও সদর উপজেলায় ১৫ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের পেঁপে আবাদ হয়েছে। আবাদকৃত পেঁপের মধ্যে রয়েছে উফশী জাতের শাহী, রেড মাস্টার, বাবু-১ ও রেড লেডিসহ স্থানীয় জাতের পেঁপে। উফশী জাতের পেঁপে হেক্টর প্রতি সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২৫ মেট্টিকটন ও গড় ফলন ১৫ মেট্টিক টন। ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারিয়া ইউনিয়নের কৃষক মোহাম্মদ আলী মোল্লা বলেন, গত তিন বছর থেকে আমি কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহায়তায় উফশী শাহী জাতের পেঁপে আবাদ করছি। প্রথম বছর এক বিঘা জমিতে পেঁপে আবাদ করে বিঘায় ৬৫ হাজার টাকা খরচ করে বিক্রি করেছি ২ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ভালো লাভ হওয়ায় দুই বছর ধরে ৩ বিঘা জমিতে পেঁপে চাষ করেছি। পেঁপে আবাদে অন্যান্য ফসলের চেয়ে ঝুকি কিছুটা কম হওয়ায় তুলনামূলক লাভ বেশি হয়।

জাজিরা উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের চরখোড়াতলা গ্রামের পেঁপে চাষি আলমগীর সদরদার বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের অনুপ্রেরণায় উচ্চমূল্যের ফসল পেঁপে আবাদ শুরু করি। গত চার বছর থেকে আমি পেঁপে আবাদ করে আসছি। প্রথম বছর বিঘায় লাভ হয়েছিল দেড় লাখ টাকা। তবে প্রথম বছরের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরের তিন বছর আরেকটু ভালোভাবে চাষ করায় যেমন ফলন বেড়েছে তেমনি লাভের পরিমাণও বেশি হয়েছে। আগে মৌসুমভিত্তিক বিভিন্ন সবজি আবাদ করতাম। তাতে শ্রমিক, বীজ, সার ও কীটনাশক খরচের তুলনায় লাভ হতো কম। এখন সেই তুলনায় বেশ লাভ হয়। আমাদের পেঁপেখেত থেকে স্থানীয় পাইকারদের মাধ্যমে শরীয়তপুরসহ ঢাকায় চলে যায়।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো: ওমর ফারুক বলেন, উচ্চমূল্যের ফসল পেঁপে আবাদে প্রথম দিকে কৃষক তেমন একটা আগ্রহী ছিল না। তবে মাঠ পর্যায়ে আধুনিক চাষপদ্ধতি, নিয়মিত প্রশিক্ষণ, উন্নত জাতের চারা সরবরাহ, রোগবালাই প্রতিরোধ ও বিপণনে পরামর্শ দেওয়ায় চাষিরা উৎসাহিত হচ্ছেন। ফলে কৃষকরা সঠিকপদ্ধতি ও উন্নত জাত ব্যবহার করে তুলনামূলক কম খরচে বেশি লাভবান হচ্ছেন। পেঁপে চাষিদের ভালো ফলন ও লাভ দেখে এখন জমির ধরন ও উপযোগিতা অনুযায়ী আশপাশের কৃষকরাও পেঁপে আবাদে আগ্রহী হয়েছেন। পেঁপে শুধু একটি ফল নয়, এর রয়েছে বহুমুখী ব্যবহার। কাঁচা পেঁপে সবজি হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি পেঁপের লেটেক্স (দুধ) ওষুধ শিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফলে রপ্তানির সম্ভাবনাও বেড়েছে। আমরা আশা করছি, উচ্চমূল্যের ফসল পেঁপে আবাদ করে আগামীতে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে আরো বেশি লাভবান হবেন।