সুসংবাদ প্রতিদিন
আঁশ ছাড়ানোর খরচ উঠে আসছে পাটখড়িতে
প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আশরাফ আহমেদ, হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ)

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, পাটের আঁশ ছাড়ানো ও শুকানোর কাজ নিয়ে ব্যস্ত পাটচাষিরা। ডোবায় জাগ দেওয়া পাট তুলে তা থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করেন সাধারণত দিনমজুররা। এলাকার নারীরাও অংশ নিয়ে থাকেন এই আঁশ ছাড়ানোর কাজে। সড়কের পাশে, ডোবার তীরে বসে পাটের আঁশ ছাড়িয়ে দিন শেষে এক আঁটি পাটখড়ি নিয়ে বাড়ি ফিরেই খুশি গ্রামের ঝি-বউয়েরা।
উপজেলাজুড়ে পাটচাষিরা যখন পাট নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন, তখন বসে নেই গ্রামের নারীরাও। তারা বাড়তি আয়ের আশায় আনন্দচিত্তে কৃষকদের পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে সহযোগিতা করছেন। মজুরি হিসেবে নগদ টাকা নয়, নিচ্ছেন পাটখড়ি বা পাটকাঠি। সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার চরকাটি হারী, সাহেবের চর, চর বিশ্বনাথপুর, চর জামাইল এলাকায় নারীরা পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। বিশেষ করে গ্রামের নিম্নবিত্ত পরিবারের গৃহিণীরা দল বেঁধে সড়কের পাশে বসে পাট থেকে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। নিজেদের জমির পাটের আঁশ ছাড়ানোর পাশাপাশি অন্য কৃষকের পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে মজুরি হিসেবে পাচ্ছেন পাটখড়ি। এতে পাটের আঁশ ছাড়াতে কৃষককে আলাদা কোনো মজুরি দিতে হচ্ছে না। অন্যদিকে নারীরা পাটখড়ি বাড়ির জ্বালানি, আঙিনার বেড়া দেওয়াসহ সংসারের নানা কাজে লাগাচ্ছেন। অনেকে প্রয়োজন মিটিয়ে পাটখড়ি আঁটি হিসেবে আশপাশের হাটে বা পাইকারের কাছে বিক্রি করে বাড়তি কিছু টাকাও আয় করছেন।
চরকাটি হারী এলাকার পাটচাষি হেলাল উদ্দিন বলেন, গত বছর পানির অভাবে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে দুর্ভোগ হয়েছিল। এবার ভালো বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটখেতসংলগ্ন নদী, খাল-নালা পাট জাগ দিতে পেরেছেন। এতে পরিবহন খরচ যেমন কমছে, তেমনি গ্রামের নারীরা পাটখড়ির বিনিময়ে আঁশ ছাড়ানোর কাজ করায় খরচও অনেক কম হচ্ছে। চর বিশ্বনাথপুর গ্রামে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত গৃহবধূ ফরিদা খাতুন পাশের বাড়ির কৃষক হিরা মিয়ার পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ করছেন। তিনি বলেন, সংসারের নানা কাজে ব্যবহারের পর যা অবশিষ্ট পাটখড়ি যা ছিল তা বিক্রি করেছেন। এতে বাড়তি কিছু আয় হয়েছে।
হোসেনপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এ কে এম শাজাহান কবির জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় বিভিন্ন গ্রাম ও চরাঞ্চলের সমতল ও অসমতল জমিতে এবছর পাটের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ হাজার ৩৯৭ হেক্টর জমিতে। তবে এ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে পাটচাষের আবাদ হয়েছে। তন্মধ্যে দেশীয় পাট ২ হাজার হেক্টর ও তোষা জাত ৩০০ হেক্টর ও অন্যান্য জাতের ৯৭ হেক্টর পাট রয়েছে।
আগাম বৃষ্টিপাতের কারণে চাষিরা পাট কেটে খেতের আশপাশেই জাগ দিতে পারছেন। গ্রামের নারীরা পাটখড়ির বিনিময়ে আঁশ ছাড়িয়ে দেওয়ায় কৃষকের ব্যয় কম হচ্ছে। চলতি মৌসুমে বিভিন্ন হাটে পাটের দাম প্রতি মণ ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে চাষিরা ভালো মুনাফা করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
