দোহায় ইসরায়েলি হামলা

নেতানিয়াহুর ওপর অসন্তুষ্ট হোয়াইট হাউস

প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অসন্তোষ ক্রমেই বাড়ছে। কাতারে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর ওয়াশিংটনের আশঙ্কা, যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি-সংক্রান্ত আলোচনাকে বানচাল করতে চাইছেন নেতানিয়াহু। দোহায় হামলাটি ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনার অগ্রগতিকে ঠেকানোর পদক্ষেপ হতে পারে। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিবার যখন আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়, নেতানিয়াহু তখনই কাউকে বোমা মারেন। এ কারণেই ট্রাম্প ও তাঁর উপদেষ্টারা নেতনিয়াহুর ওপর এতটা হতাশ।

এদিকে কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে মঙ্গলবার ইসরায়েলি হামলার পর কাতার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি নিরাপত্তা চুক্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে শুক্রবার ওয়াশিংটনে গেছেন কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে তাঁর। এছাড়া বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে কাতারে হামলার ঘটনায় নিন্দা উঠেছে। বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে দেওয়া এক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৫ সদস্য রাষ্ট্রই কাতারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। তবে যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের নাম উল্লেখ করা হয়নি।

অক্সিওস জানায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শুক্রবার সন্ধ্যায় নিউইয়র্কে কাতারের প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল রহমান আল-থানির সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে। তারা দোহায় হামাস নেতাদের ওপর ইসরায়েলি হামলার পরের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন। ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির জন্য কাতারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টার অংশ। আল-থানি যুক্তরাষ্ট্র-কাতার নিরাপত্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছে একটি সূত্র। এই অবস্থায় দোহায় রবি ও সোমবার আরব-ইসলামিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ফিলিস্তিনের গাজা দখল পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে ফিলিস্তিদের হত্যা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। একই সঙ্গে হামাসের সঙ্গে যাতে কোনো ধরনের সমঝোতা না হয়, সেই চেষ্টা করছে দখলদার রাষ্ট্রটি। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে শুক্রবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৫০ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক পরিবারেরই রয়েছে ১৪ জন। গত ২৩ মাসে নিহত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৬৫৬ জন এবং এক লাখ ৬৩ হাজার ৫০৩ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েল গাজা দখলের প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত রেখেছেন নেতানিয়াহু।

ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারেৎজ জানিয়েছে, গাজা শহরের উত্তরাঞ্চলে একটি বাড়িতে হামলায় একই পরিবারের ১৪ সদস্য নিহত হয়েছেন। প্রতিবেদন অনুসারে, আল-সুলতান পরিবারের বাড়ি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছিল এবং হতাহতের আল-শিফা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পরে চিকিৎসকরা ১৪ জনকে মৃত ঘোষণা করেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও বেশ কয়েকজন আটকা পড়েছেন। আলজাজিরা জানায়, গাজা শহরের উঁচু টাওয়ারগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। এসব ভবনে হাজার হাজার মানুষ বাস করত। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইসরায়েলি বাহিনী শহরটিতে তাদের আক্রমণ চালিয়ে কমপক্ষে ৫০টি বহুতল ভবন ধ্বংস করেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়েছে।

আলজাজিরা জানায়, গাজায় কোনো নিরাপদ স্থান নেই। স্যাটেলাইট ছবিতে দেখা গেছে, ইসরায়েলি আক্রমণে পুরো এলাকা ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অনেক হাসপাতাল, স্কুল, উপাসনালয় এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। শেখ রাদওয়ানে বিরতিহীন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। প্রতিদিন হানা দিচ্ছে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক। গাজা শহরের উত্তর এবং দক্ষিণ রেমাল এলাকায় আল-শিফা হাসপাতাল বারবার হামলার শিকার হয়েছে। জেইতুনপাড়া হামলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাটি এখন আর চেনা যায় না। এখানকার শত শত বাসিন্দা ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে।