বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন
৪৩ বছরে দেশে অনুভূত তাপমাত্রা বেড়েছে ৪.৫ ডিগ্রি
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯৮০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে মানুষের কাছে অনুভূত তাপমাত্রা বা ফিলস লাইক টেম্পারেচার বেড়েছে ৪ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই সময়ে ঢাকার তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা উদ্বেগজনক।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘অ্যান আনসাস্টেইনেবল লাইফ: দ্য ইমপ্যাক্ট অব হিট অন হেলথ অ্যান্ড দ্য ইকোনমি অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি গবেষণার ফলাফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। এই গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করে বিশ্বব্যাংক।
গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বাংলাদেশে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে, পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা হ্রাসের ফলে অর্থনীতিতেও বড় ক্ষতি হচ্ছে। এর ফলে ডায়রিয়া, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগের প্রকোপ বেড়েছে। একইসঙ্গে হিটওয়েভের কারণে বিষণ্ণতা ও উদ্বেগের মতো মানসিক সমস্যাও বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংকের এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, তাপমাত্রার প্রভাবে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশ দ্বিতীয়। রাজধানী ঢাকার হিট ইনডেক্স জাতীয় গড়ের তুলনায় প্রায় ৬৫ শতাংশ বেশি। শুধু ২০২৪ সালেই তীব্র গরমণ্ডসম্পর্কিত শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার কারণে ২৫০ মিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে। এর অর্থনৈতিক ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় ১.৭৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা দেশের জিডিপির প্রায় শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানবিষয়ক বিভাগীয় পরিচালক জ্যঁ পেসমে বলেন, হিটওয়েভ কেবল গরমের মৌসুমের অসুবিধা নয়। বছরের অন্যান্য সময়েও এটার প্রভাব থাকে। বাংলাদেশে আমরা দেখেছি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখানকার স্বাস্থ্য, উৎপাদনশীলতা এবং সামগ্রিক সমৃদ্ধিকে প্রভাবিত করছে। ক্লাইমেট অ্যাডাপ্টেশনে নিজেদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবং সমন্বিত পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারবে। সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো যেভাবে সমস্যা সমাধান করেছে, তারা উদাহরণ হয়ে আছে।
বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ও প্রতিবেদনের সহ-লেখক ইফফাত মাহমুদ বলেন, আমাদের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, তাপের কারণে দীর্ঘমেয়াদি এক্সপোজার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদনশীলতাও মারাত্মকভাবে কমিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্যই এটি মানবসম্পদ ও উৎপাদনশীলতা হারানোর ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব ঝুঁকি কমাতে এবং মানুষের জীবনমান ও জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে হলে তথ্যভিত্তিক নীতি গ্রহণ ও সুনির্দিষ্ট বিনিয়োগ খুবই জরুরি। তিনি বলেন, উষ্ণায়ন একটা সমস্যা। এটা যেহেতু অর্থনীতিতে ক্ষতি করছে, তাহলে আমরা কেন যে পরিমাণ টাকা নষ্ট হচ্ছে তার চেয়ে অনেক কম টাকা খরচ করে এটার সমাধান করছি না।
বিশ্বব্যাংক সুপারিশে বলেছে, দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা শক্তিশালী করা, নগরীতে সবুজায়ন বৃদ্ধি, নির্ভুল আবহাওয়া ও স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ এবং বহু খাতে প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। পাশাপাশি, বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সরকারি-বেসরকারি বিনিয়োগের ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে বিশ্বব্যাংক।
প্রতিবেদনটিতে ১৯৭৬ থেকে ২০২৩ সালের জাতীয় তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার প্রবণতা বিশ্লেষণ করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৪ সালে পরিচালিত দুই দফা সমীক্ষায় ১৬ হাজারেরও বেশি মানুষের তথ্য নেওয়া হয়েছে।
