সনি হত্যায় কারাভোগ শেষে ‘অস্ত্র বাণিজ্যে’ জড়ান টগর

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন নাহার সনি হত্যা মামলায় কারাভোগ শেষ হওয়ার পর মুশফিক উদ্দীন টগর অস্ত্র বাণিজ্যে জড়ান বলে জানিয়েছে র‌্যাব। গত বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার আজিমপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তারের করা পর র‌্যাব বলছে, সীমান্তবর্তী এলাকা হতে অবৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করে ঢাকায় এনে বিভিন্ন মানুষকে সরবরাহ করতেন টগর। সনি হত্যা মামলায় সাজাভোগের পর টগর ২০২০ সালের ২০ অগাস্ট কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান। গত বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে ৩২ এমএম ১টি রিভলবার, ১টি ম্যাগাজিন, ১টি কাঠের পিস্তলের গ্রিপ, ১৫৫ রাউন্ড .২২ রাইফেলের গুলি, ০১টি ৭.৬২ এমএম মিসফায়ার গুলি, ১টি শর্টগানের খালি কার্তুজ, মানুষের মুখায়বের দুটি মুখোশ ও ২টি মোবাইল জব্দ করা হয়।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন বলেন, ‘টগরকে গ্রেপ্তারে প্রথমে আমরা সনি হত্যার বিষয়টা মূল্যায়ন করিনি। আমরা অস্ত্র উদ্ধারে গিয়েছিলাম, পরে অবগত হই তিনি ওই মামলার আসামি।’ টগর সনি হত্যা মামলায় প্রথম গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২০০২ সালের ২৪ জুন। ২০২০ সালে কারামুক্তির পর থেকে তিনি ‘স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন’ বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা আরেফীন। গতকাল শুক্রবার ঢাকার কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। তার দেওয়া তথ্যঅনুযায়ী আমাদের অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম চলমান থাকবে।’ তার বিরুদ্ধে লালবাগ থানায় অস্ত্র মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফায়েজুল আরেফীন।

এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, ‘সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে বুঝতে পারি, তার কাছে আরও অস্ত্রের সন্ধান থাকতে পারে। মাত্র গতকালই তাকে আমরা গ্রেপ্তার করেছি। আমরা কিছু নম্বর পেয়েছি, সেগুলো নিয়ে কাজ করব।’ রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে তার ভাষ্য, যিনি অপরাধী, তিনি অপরাধীই। তাকে কোনো দলও গ্রহণ করে না। ‘আমরা তাকে অপরাধী হিসেবেই বিবেচনা করছি। তার কাছে যা পাচ্ছি, সেটার বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত করছি।’ টগরের নামে বিরুদ্ধে মুগদা থানায় একটি মাদকের মামলা রয়েছে জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা আরেফীন বলেন, ‘সনি হত্যা মামলায় সাজা খাটা শেষ করে তিনি মুক্তিপ্রাপ্ত। বর্তমানে অস্ত্রমামলায় নতুনভাবে তাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।’ টগর অস্ত্র এনে কাকে দিয়েছেন, সে তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। ২০০২ সালের ৮ জুন বুয়েটে দরপত্র নিয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান কেমিকৌশল বিভাগের ৯৯ ব্যাচের শিক্ষার্থী সনি।

বুয়েট ছাত্রদল সভাপতি মোকাম্মেল হায়াত খান মুকি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের টগর গ্রুপের সংঘর্ষের মধ্যে পড়েছিলেন তিনি। দীর্ঘ আন্দোলনের পর আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। বিচারে নিম্ন আদালতে মুকি, টগর ও নুরুল ইসলাম সাগরের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয় আদালত। ২০০৬ সালের ১০ মার্চ হাই কোর্ট তাদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।

এছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এসএম মাসুম বিল্লাহ ও মাসুমকে খালাস দেয় হাই কোর্ট। মুকি পরে পালিয়ে যান অস্ট্রেলিয়ায়, সাগরও পলাতক রয়েছেন। আর টগর গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন, যাকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করল র‌্যাব।