সুসংবাদ প্রতিদিন
পার্বত্য অঞ্চলে রক্তফলের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা
প্রকাশ : ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
মো. হান্নান, রাঙামাটি

পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে লতানো গাছে ঝুলে থাকা আঙুরের মতো ফল। প্রথম দেখায় মনে হয় হয়তো বুনো জলপাই কিংবা ছোট জাম। কিন্তু দাঁতে কামড় দিতেই বের হয় টক-মিষ্টি রসে ভরা একধরনের লাল তরল, যা দেখতে অনেকটা মানুষের রক্তের মতো। এটি রক্তফল নামেই পরিচিত।
এ ফলের স্বাদ টক-মিষ্টি, যা জিভে একেবারে ভিন্ন স্বাদ ছড়িয়ে দেয়। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, বি-৬, ফাইবার এবং প্রচুর আয়রন। পাহাড়ি চিকিৎসায় এ ফলের রস ও লতা ওষুধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষত রক্তশূন্যতা দূর করতে এবং হজম শক্তি বাড়াতে স্থানীয়রা এটি নিয়মিত খেয়ে থাকেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, শুধু সুস্বাদুই নয়, পুষ্টিগুণের দিক থেকেও এ ফলের সম্ভাবনা অপরিসীম।
ফেব্রুয়ারি থেকে লতায় ফুল আসে, এপ্রিল থেকে সে?প্টেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। কাঁচা অবস্থায় ফল সবুজ, পাকার আগে হালকা হলুদ, আর পাকলে রক্তের মতো লালচে রঙ ধারণ করে। খোসা ছাড়িয়ে ভেতরের বিচি চুষে খেতে হয়। আর বিচিটাই লাল রসে ভরা থাকে। রাঙামাটির নানিয়ারচরের কৃষক র?বি চাকমা জানালেন, আমার একেকটি গাছে বছরে প্রায় ২০-২৫ হাজার ফল ধরে। গত কয়েক মৌসুমে একটি গাছ থেকেই ৫০-৬০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি।
বর্তমানে স্থানীয় বাজারে প্রতি কেজি রক্তফল বিক্রি হচ্ছে- ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়। ফলে কৃষকদের কাছে এ ফল এখন বাড়তি আয়ের বড় উৎস হয়ে উঠছে।
পাহাড়ের মানুষ শুধু খাবার হিসেবেই নয়, নানা আচার-অনুষ্ঠানেও রক্ত ফল ব্যবহার করে। বিয়েবাড়ি কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠানে অতিথিদের আপ্যায়নে এ ফল বিশেষভাবে রাখা হয়। স্থানীয় ভাষায় গানেও রক্ত ফলের উল্লেখ আছে, যা পাহাড়ি সংস্কৃতির সঙ্গে ফলটির নিবিড় সম্পর্ককে প্রকাশ করে। যদিও এখনও এ ফল নিয়ে কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি, তবে কাপ্তাই কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে শিগগিরই এ ফল নিয়ে গবেষণা শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ভিটামিন ও খনিজ উপাদান যদি আধুনিকভাবে ব্যবহার করা যায়, তবে এটি দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। এ ফল শুধু পাহাড়ি মানুষের খাদ্য নয়, এটি পাহাড়ি সংস্কৃতির এক অংশ। টক-মিষ্টি স্বাদ, লাল রসে ভরা বিচি আর পুষ্টিগুণের কারণে রসকো ফল দ্রুতই পরিচিতি পাচ্ছে। সঠিক গবেষণা ও বাজারজাতকরণ হলে এই বুনো ফল একদিন পাহাড়ের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সম্পদে পরিণত হতে পারে।
