সুসংবাদ প্রতিদিন

কলাপাড়ায় কচু চাষে সচ্ছলতা ফিরছে কৃষকের

প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এম কে রানা, পটুয়াখালী

সবুজ পাতার সমারোহে ভরে গেছে গোটা মাঠ। কৃষকরা ব্যস্ত কচুক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার আর জমি পরিচর্যায়। চারপাশে এক অন্য রকম দৃশ্য। কেউ গাছের গোড়া শক্ত করে দিচ্ছেন, কেউ আবার বাজারে বিক্রির জন্য লতি সংগ্রহ করছেন। কথা বলে জানা গেল, ধান বা অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভ হয় বলেই দিন দিন কচু চাষের দিকে ঝুঁকছেন পটুয়াখালীর কৃষকরা।

পটুয়াখালী শস্যভাণ্ডার খ্যাত জেলা হলেও এখানকার কৃষকরা দীর্ঘদিন ধান ও বিভিন্ন সবজি চাষের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তবে বন্যা কিংবা রোগবালাইয়ের কারণে প্রায়ই ক্ষতির মুখে পড়তে হতো। কিন্তু কচু চাষ তুলনামূলক সহজ এবং ঝুঁকি অনেক কম। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। আর উৎপাদন খরচও অনেক কম। ফলে পতিত জমি কাজে লাগিয়ে কচু চাষে স্বাবলম্বী হচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলার টিয়াখালী গ্রামের কৃষক আবু সালেহ্ বলেন, আমি প্রায় এক বিঘা জমিতে কচু লাগিয়েছি। খরচ হয়েছে ২৫ হাজার টাকার মতো। কিন্তু আয় হবে দেড় লাখ টাকারও বেশি। এর মধ্যে লতি বিক্রি করে খরচ উঠে গেছে। এখন যা বিক্রি হবে সবই লাভ। ধান করলে হয়তো এতটা লাভ হতো না।

এই এলাকার শুধু আবু সালেহ নন, উপজেলার অর্ধশতাধিক কৃষক এখন কচু চাষে যুক্ত হয়েছেন। কেউ কেউ একাধিক মৌসুমে চাষ করে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়েছেন। কলাপাড়ার চাষি নুরুল ইসলাম জানান, আগে শুধু ধান করতাম। লাভের চেয়ে খরচই বেশি হতো। এখন জমির অর্ধেকেই কচু করি। কোনো রোগবালাই লাগে না, কীটনাশকের খরচ নেই। জৈব সার দিলেই ভালো ফলন আসে। খরচও কম, আর বাজারে দামও ভালো। আরেক চাষি শফিকুল বলেন, ধানের চেয়ে কচুতে খাটুনি কম। পরিবারের সদস্যদের নিয়েই পরিচর্যা করা যায়। বন্যায় ধান নষ্ট হলেও কচু গাছ টিকে থাকে। তাই এখন কচুই আমাদের ভরসা।

কৃষকদের উৎসাহিত করতে পাশে দাঁড়িয়েছে কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আরাফাত হোসেন জানান, আমরা কৃষকদের কন্দাল জাতীয় ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, পরামর্শ দিচ্ছি, সার্বিক সহযোগিতা দিচ্ছি। কৃষকরা ধীরে ধীরে কচু চাষে ঝুঁকছেন। এরইমধ্যে অনেকেই ভালো লাভ তুলেছেন। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক এইচ এম শামীম বলেন, এই বছর ১৩৫ হেক্টর জমিতে কচুর আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর আবাদ বেড়েছে। কৃষকরা আগ্রহী হওয়ায় আগামীতে এ আবাদ আরও বিস্তৃত হবে বলে আমরা আশাবাদী।

কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বিঘা জমিতে কচু চাষে খরচ হয় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। অথচ বিক্রিতে আয় হয় এক লাখ টাকার বেশি। কৃষকরা জানান, কচুর লতি বিক্রি করেই প্রথম দিকে খরচ উঠে যায়। এরপর মূল কচু বিক্রি করে বিপুল পরিমাণ লাভ ওঠে। এ মৌসুমে জেলায় প্রায় ৩ হাজার ২০০ টন কচু উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। এর বাজারমূল্য ধরা হয়েছে প্রায় ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

কৃষকরা মনে করছেন, ধান বা অন্যান্য ফসলের চেয়ে কচু চাষ ঝুঁকিমুক্ত ও লাভজনক। একদিকে পতিত জমি কাজে লাগছে, অন্যদিকে উৎপাদন খরচও কম। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা পেলে আগামী কয়েক বছরে পটুয়াখালীতে কচু হবে অন্যতম সম্ভাবনাময় ফসল।