সুসংবাদ প্রতিদিন
ফেনীতে পতিত জমিতে বাড়ছে পেয়ারা চাষ
প্রকাশ : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
শাহজালাল ভূঞা, ফেনী

ফেনীর বিভিন্ন স্থানে পরিত্যক্ত ও পতিত ভূমিতে পেয়ারা চাষে সাফল্য মিলেছে। জেলায় পেয়ারা চাষ করে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা সফল হওয়ায় তাদের দেখাদেখি আরও অনেকেই এগিয়ে এসেছেন। ফেনীতে উৎপাদিত বারোমাসি এ ফলের স্বাদ ও পুষ্টিগুণ ভালো থাকায় বাগান সৃষ্টি করতে কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলায় চলতি মৌসুমে ১৮০ হেক্টর ভূমিতে পেয়ারা চাষ হয়েছে; যা থেকে অন্তত ২ হাজার টন ফল পাওয়া যাবে। যার বাজারমূল্য অন্তত ৮ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
জানা গেছে, এক সময় ফেনীতে শখ করেই পেয়ারার আবাদ করা হতো। ঘরের আঙিনা ও আশপাশের খালি জায়গায় শোভা পেত পেয়ারা গাছ। কিন্তু সেই পেয়ারাই এখন হয়ে উঠেছে ফেনীর উদ্যোক্তনদের জন্য আশীর্বাদ। এখন শুধু বাড়ির আঙিনা নয়; ফেনীর বিভিন্ন স্থানে বিস্তীর্ণ পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লাগানো হয়েছে পেয়ারা গাছ। আর সেই গাছের পেয়ারাগুলো উদ্যোক্তনদের স্বপ্ন হয়ে বাতাসের সঙ্গে এখন দোল খাচ্ছে। এসব পেয়ারা হাত বদল হয়ে জেলার চাহিদা পূরণ করে চলে যাচ্ছে আশপাশের জেলায়ও।
কৃষি বিভাগ জানায়, ২০১৫ সালের দিকে ফেনীতে কয়েকজন উদ্যোক্তা স্বল্প পরিসরে পেয়ারার আবাদ শুরু করে। এতে ভালো ফলন পাওয়ায় ফেনীতে ক্রমান্বয়ে বাণিজ্যিক আকারে পেয়ারা আবাদ বাড়তে থাকে। ২০২০ সালে জেলায় ১১৭ হেক্টর জমিতে পেয়ারার আবাদ হয়। সেখানে ফলন হয় ১৩০০ টন। পেয়ারার পুষ্টিগুণ, স্বাদ ও ফলন ভালো হওয়ায় চলতি মৌসুমে জেলায় পেয়ারা আবাদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৮০ হেক্টরে। যা থেকে অন্তত ২ হাজার টন ফলন পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি ফেনী সদর উপজেলার কালিদহ ইউনিয়নের পাহালিয়া অ্যাগ্রো পেয়ারা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে সাত একর জায়গায় পেয়ারার বাগান করা হয়েছে। এখানকার ৩ হাজার ২০০ গাছে থোকায় থোকায় পেয়ারা শোভা পাচ্ছে। মালিক-কর্মচারীরা গাছের পরিচর্যা, ফল তোলায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাগানের পরিচালক ফরিদ উদ্দিন মাসুদ বলেন, কয়েক বছর আগে কালিদাস পাহালিয়া নদীর তীরে পতিত জায়গায় আমরা আটজন উদ্যোক্তা যৌথভাবে সমন্বিত বাগান গড়ে তুলি। এ বাগানে ৩ হাজারের অধিক পেয়ারা গাছ রয়েছে। ২০২১ সালের দিকে কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভালো ফলন পাই। এ বাগানে বারি ৩, বাউ ৩ ও ৫ এবং থাই জাতের পেয়ারায় সবচেয়ে ভালো ফলন পাওয়া গেছে। এসব গাছে বারো মাস ফলন পাওয়া যাচ্ছে। বছরে প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকার পেয়ারা পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দা মাস্টার সঞ্জয় চক্রবর্তী বলেন, এই বাগানে উৎপাদিত পেয়ারা বেশ সুস্বাদু। বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
ফেনী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন বলেন, পেয়ারা গাছ লাগানোর জন্য বেলে ও দোআঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী। ফেনীর বিভিন্ন পতিত স্থানে এ মাটি থাকায় স্থানীয়রা বাণিজ্যিকভাবে বারোমাসি পেয়ারা গাছ লাগিয়ে ভালো ফলন পেয়েছেন। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহযোগিতা দিয়ে আসছি।
