সুসংবাদ প্রতিদিন

তামাক চাষ ছেড়ে পেঁপেতে বাজিমাত

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এ.এইচ.এম.আরিফ, কুষ্টিয়া

কুষ্টিয়ার মিরপুরে ‘টপ লেডি’ জাতের পেঁপে চাষ করে প্রথমবারেই দুই লাখ টাকা লাভের আশা করছেন- উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার কৃষক জামিরুল ইসলাম। মাত্র ৩৫ শতাংশ জমিতে পেঁপে চাষ করেছেন তিনি। সব মিলিয়ে ৫০ হাজার টাকা খরচ করেছেন এবং দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রির আশা করছেন তিনি। এরই মধ্যে পেঁপে বিক্রি শুরু করেছেন তিনি। জমি থেকেই কাঁচা পেঁপে পাইকারি ১৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে বেশ খুশি তিনি।

রোববার সকালে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বলিদাপাড়া এলাকার তার বাগান ঘুরে দেখা যায়, গাছের গোড়া থেকে ডগা পর্যন্ত পেঁপে ধরেছে। ছোট-বড়-মাঝারি এবং ফুলও ধরেছে। এক একটি গাছে এ মৌসুমে প্রায় ১ মণ করে পেঁপে সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করেন জামিরুল ইসলাম।

জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন জামিরুল ইসলাম। ধান চাষের পাশাপাশি বেশ কয়েক বছর ধরে তামাকের চাষ করেন তিনি। তামাকে পরিশ্রম এবং বিক্রির ক্ষেত্রে হয়রানির কারণে চায়ের দোকান খুলেছেন। কৃষি পেশা ছেড়ে দিতে চেয়েছিল সে। তবে স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে নিরাপদ উপায়ে উচ্চমুল্য সবজি চাষের উপরে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে তিন দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তাদের সহায়তায় পেঁপের চাষ করেছেন। তামাকের পরিবর্তে পেঁপে চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন বলে জানান তিনি।

জামিরুল জানান, “আপনারা যে গাছে পেঁপে দেখছেন, আমি কিন্তু পেঁপে দেখতে পারছি না। আমি দেখছি টাকা। আমার মনে হচ্ছে গাছে টাকা ঝুঁলছে। এক একটি পেঁপে মানে ১০/২০ টাকার নোট।” তিনি বলেন, “আমি মূলত এই জমিতে তামাক চাষ করতাম। কিন্তু উপজেলা থেকে ট্রেনিং নিয়ে এবার প্রথম পেঁপের চাষ শুরু করেছি। কীভাবে পেঁপের চাষ করতে হবে, কখন কি পরিচর্যা করতে হবে সবকিছু হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছে কৃষি অফিসের লোকজন। আমি নিজেই ওয়ানটাইম চায়ের কাপে পেঁপের চারা উৎপাদন করে রোপন করেছি। জমি চাষাবাদ ও পরিচর্যা করেছি। কৃষি অফিস থেকে আমাকে ২০ শতক জমির জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচ দিয়েছে। বাকিটুকু নিজের খরচে করেছি।” জামিরুল বলেন, “আমার এই জমিতে ৪০০ পেঁপে গাছ রয়েছে। প্রায় গাছেই আশা করছি- ১ মণের কাছাকাছি করে পেঁপে পাব। এটা বিক্রির জন্য আমাকে বাজারেও নিতে হচ্ছে না। ব্যাপারীরা এসে বাগান থেকেই পেঁপে নিয়ে যাচ্ছে। আশা করছি. এই মৌসুমেই আমি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার পেঁপে বিক্রি করব। যেখানে আমার খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মতো।”

স্থানীয় কৃষক আয়নাল জানান, এক এক গাছে যে এত পেঁপে ধরে তা কখনও জানতাম না। আমরা জামিরুল এর বাগান দেখে বুঝছি এখন যে পেঁপে চাষ কতটা লাভজনক। তামাকের চেয়ে অনেক বেশি লাভজনক এই পেঁপে চাষ।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহাবুল ইসলাম জানান, আমরা কৃষকদের সার্বক্ষণিক উচ্চমুল্য সবজি ও ফল চাষে পরামর্শ প্রদান করছি। সেই সঙ্গে কৃষক জামিরুল ইসলামকে পেঁপে চাষে পরামর্শ প্রদান করেছি। নিয়মিত তার বাগান পরিদর্শন করে ব্যবস্থাপনা প্রদান করছি। পেঁপে চাষটা বেশ লাভজনক হওয়ায় এরই মধ্যে আরও ১০ বিঘা জমিতে পেঁপের চাষ বৃদ্ধি পেঁয়েছে এই এলাকায়।”

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “পেঁপে একটি পুষ্টিকর এবং উচ্চমুল্য সবজি। এটি বেশ লাভজনক হওয়ায় কৃষকদের মাঝে বর্তমানে পেঁপে চাষে আগ্রহ বাড়ছে। আমরা যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় পেঁপে চাষে কৃষকদের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে সহায়তা করছি।”

যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, খোরপোশ কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। এজন্য কৃষকদের নিরাপদ উপায়ে উচ্চমুল্য ফসল উৎপাদনে প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপকরণ ও সহায়তা প্রদান করছি। সেই সাথে বাজারজাত এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য উদ্যোক্তা সৃষ্টি করছি। মিরপুর উপজেলা কৃষক জামিরুল ইসলাকে আমাদের প্রকল্প থেকে নিরাপদ উপায়ে পেঁপে চাষে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেই সাথে তাকে চাষাবাদের জন্য সার, বীজ, পরিচর্যার খরচ দেওয়া হয়। যার ফলে তিনি পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে পেঁপে চাষ করে বেশ সফল হয়েছেন। তার দেখাদেখি এলাকার আরও কৃষকরা পেঁপে চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।