সুসংবাদ প্রতিদিন

শীতকালীন আগাম সবজি আবাদে লাভবান কৃষক

প্রকাশ : ০২ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  মজিবুর রহমান, শরীয়তপুর

শরীয়তপুর জেলার শস্যভান্ডার খ্যাত জাজিরা উপজেলার কৃষকরা গত এক দশক থেকেই শীতকালীন আগাম সবজি আবাদ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন। আগাম সবজির তুলনামুলক বেশি দাম পাওয়ায় দিনে দিনে তাদের আগ্রহও বাড়ছে। এ মৌসুমেও বর্ষার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জমির ধরণ ও উপযোগিতা অনুযায়ী উফশী জাতের সবজি আবাদ ও পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় কৃষি বিভাগ কৃষকদের পাশে থেকে সবজির উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ফলন বাড়াতে মালচিং ও বেড পদ্ধতি, মাচা পদ্ধতি ও নেট হাউজের মাধ্যমে নিরাপদ সবজি আবাদের জন্য মাঠ পর্যায়ে সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও কারিগরি সহায়তা প্রদান করে আসছেন। কৃষক ও কৃষি বিভাগে আশা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সবজি বাজারে আসতে শুরু করবে। এতে যেমন ক্রেতারা শীতকালীন সবজির স্বাদণ্ডগন্ধ নিতে পারবেন তেমনি কৃষকরাও তুলনামূলক বেশি দাম পেয়ে লাভবান হবেন। জাজিরা উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় এক হাজার ৪২০ হেক্টরে শীতকালীন সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে জমির ধরণ ও উপযোগিতা অনুযায়ী ৩২০ হেক্টর জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত জাতের বেগুন, করলা, টমেটো, শশা, লাউ, লালশাক, ধনেপাতাসহ নানা সবজি। কৃষি বিভাগ কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ফলন বাড়াতে কাজ করছে।

উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের উত্তর কেবলনগর গ্রামের সবজি চাষি আজিজুল চৌকিদার বলেন, বিগত ৮-১০ বছর ধরে শীতকালীন আগাম বেগুন ও করলা চাষ করে আসছি ভরা মৌসুমের তুলনায় দাম বেশি পেয়ে বেশ লাভবান হচ্ছি। তবে সব জমিতে আগাম সবজি আবাদ করা যায় না। যে সকল জমি থেকে বর্ষার পানি দ্রুত নেমে যায়, সেই সব জমিতে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আগাম শীতকালীন সবজি আবাদ করে আসছি। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমি দুই বিঘা জমিতে ৫০ হাজার টাকা খরচ করে বেগুন ও করলা চাষ করেছি। আশা করছি, এক সপ্তাহের মধ্যে সবজি বাজারে তুলতে পারব। কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে দুই বিঘা জমির সবজি দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারব।

মুলনা ইউনিয়নের ছাব্বিশপাড়া গ্রামের কৃষক সানোয়ার হোসেন ফকির বলেন, কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সার্বিক সহায়তায় ৭-৮ বছর ধরে শীতকালীন ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষ করছি। এর মধ্যে তিন বিঘা জমিতে আগাম সবজি ও ৫ বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করেছি। উৎপাদন ব্যয় কমাতে কৃষি বিভাগের পরামর্শে বেড ও মাচা পদ্ধতিতে আবাদ করায় আমার যেমন শ্রমিক সাশ্রয় হয়েছে তেমনি জমিতে আগাছার পরিমাণও উল্লেযোগ্য হারে কম। এতে করে আগাম সবজির যেমন উৎপাদন ব্যয় কিছুটা কমে তেমনি দামও বেশি পাই। জমির ধরণ ও উপযোগিতা অনুযায়ী আগাম লালশাক, ধনেপাতা, করলা ও শশা আবাদ করছি। আগাম সবজি আবাদ এখন আমাদের নতুন করে স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ওমর ফারুক বলেন, জাজিরার জমি উর্বর পলিযুক্ত দোআঁশ মাটি হওয়ায় সবজি চাষের জন্য খুব উপযোগী। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সবজি আবাদ হয় এই উপজেলায়। কৃষকদের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে ফলন বাড়াতে আমরা প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা ও প্রণোদনা দিয়ে থাকি। পাশাপাশি উন্নত জাতের বীজ, বেড ও মাচা পদ্ধতি, নেট হাউজসহ আধুনিক কৌশল ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি। এর ফলে কৃষকরা একদিকে কম খরচে চাষ করছেন, অন্যদিকে অধিক ফলন পাচ্ছেন। আমরা আশা করছি, এই ধারাবাহিকতা জাজিরার কৃষকদের স্বপ্নপূরণের পথকে আরো সম্প্রসারিত করবে। জাজিরার কৃষকরা এখন আর শুধু মৌসুমের উপর নির্ভরশীল নন। তারা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও পরামর্শকে কাজে লাগিয়ে আগাম সবজি উৎপাদনে এগিয়ে চলছেন। জাজিরার মাঠে মাঠে সবজির সম্ভার যেমন- কৃষকদের নতুন সম্ভাবনার বার্তা দিচ্ছে, তেমনি ক্রেতা-ভোক্তার চাহিদা পূরণেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে রাখবে সহায়ক ভূমিকা।