ঝড়ে দুই জেলায় ১৭০০ ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো ও কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি

টানা দুই দিনের ভারি বৃষ্টিপাতের পর হঠাৎ তীব্র ঝড়ে দুই জেলা রংপুর ও নীলফামারীতে প্রায় দুই শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে।
নীলফামারী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি জানায়, নীলফামারীতে হঠাৎ তীব্র ঝড়ে ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। এতে বানিয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দারা এখন খোলা আকাশের নিচে দিন কাটাচ্ছে। ঝড়ের আঘাতে আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন, তাদের মধ্যে ৫ জন গুরুতর। গতকাল রোববার সকালে কিশোরগঞ্জ উপজেলার গাড়াগ্রাম ইউনিয়নের পশ্চিম দলিরাম বানিয়াপাড়া গ্রামে কয়েক মিনিটের তীব্র ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। শুধু ঘরবাড়ি নয়, ধান, কলা, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অসংখ্য গাছপালা ভেঙে পড়েছে এবং কিছু দোকানপাটও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় কয়েকটি গ্রামে বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত এমদাদুল হক বলেন, ঝড়ের কারণে আশপাশের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি নিমেষে শেষ হয়ে গেছে। জমির ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে। কয়েক মিনিটের ঝড়ে সবকিছু শেষ হয়ে গেল।
নাসিমা বেগম বলেন, ‘সকালে রান্না করছিলাম, হঠাৎ ঝড়ের শব্দ পেলাম। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘরের চালা উড়ে গেল। এখন সব ঠিক করতে হবে। জানি না কীভাবে করব, আমরা গরিব মানুষ।’
গাড়াগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জোনাব আলী জানান, সকালের ঝড়ে ৩ গ্রামের ৫ শতাধিক ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়েছে। আহত হয়েছে মোট ৩০ জন। গুরুতর আহত ৫ জন কিশোরগঞ্জ হাসপাতালসহ বিভিন্ন চিকিৎসাকেন্দ্রে ভর্তি হয়েছে। বাকি ২৫ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে বলেও জানান তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রীতম সাহা বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য ফায়ার সার্ভিস পাঠানো হয়েছে। গবাদিপশু ও মানুষের চিকিৎসার জন্য একটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে তাদের সহায়তা করা হবে। আপাতত শুকনো খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
রংপুরে ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড ১২০০ ঘরবাড়ি: রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার দুটি ইউনিয়ন ঘূর্ণিঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে। আকস্মিক ঝড়ে প্রায় ১২০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৫ জন।গতকাল রোববার বিষয়টি জানান গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডবে টিনশেড ও আধা-পাকা ঘরবাড়ি, গাছগাছালি ভেঙে পড়ে। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি ঝড় বেশি সময় স্থায়ী হত, ক্ষতির পরিমাণ কয়েকগুণ বেশি হতে পারত।স্থানীয়রা জানান, সকালে কালোমেঘে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো উপজেলা। কিছুক্ষণ পর বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় শুরু হয়। ঝড়ের তান্ডবে টিনশেড ও আধা-পাকা ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে পড়ে। অল্প সময়ের এই ঝড়ে দুই ইউনিয়নের প্রায় ১২ শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৫ জন।
আলমবিবিতর ইউনিয়নের কুতুব হাজীরহাটের বাসিন্দা নাজমুল আমিন (৩৫) বলেন, হঠাৎ ঘূর্ণিঝড়ে আমার পাকা ঘর ভেঙে গেছে। ঘরের টিন উড়ে নিয়ে গেছে অনেক দূরে। ঘরের ভেতরে থাকা আমার ছেলে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মাফির মাথা ফেটেছে ও পা ভেঙেছে। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নোহালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফ আলী বলেন, তার ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৪০০ ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
আলমবিদিতর ইউনিয়নের প্রশাসক ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা আফতাবুজ্জামান চয়ন জানান, ওই ইউনিয়নে প্রায় ৩০০ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সৈয়দ শাহিনুর ইসলাম বলেন, ঝড়ে উঠতি (আধাপাকা) আমন ধানের খেত ন্যুইয়ে পড়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতে প্রায় ১২ শ ঘরবাড়ির ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তাছাড়া ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে জেলা প্রশাসনের কাছে চাল, টিন, নগদ অর্থের আবেদন করা হবে। এরই মধ্যে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে যোগযোগ করা হয়েছে এ বিষয়ে। এছাড়াও আহতদের চিকিৎসা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়িঘর সংস্কারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
