রসায়নে নোবেল তিন দেশের তিন বিজ্ঞানীর

প্রকাশ : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

এ বছর রসায়নে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সাসুমু কিতাগাওয়া, রিচার্ড রবসন ও ওমর এম ইয়াগি। তারা এই পুরস্কার অর্জন করেছেন ধাতব-জৈব কাঠামো (মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কস) আবিষ্কারের জন্য তাদের এ পুরস্কার দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ সময় বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নোবেল কমিটি এ পুরস্কার ঘোষণা করে। নোবেল কমিটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব লাইভে এই ঘোষণা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস জানিয়েছে, রসায়নে নোবেলজয়ী তিন বিজ্ঞানী এক ধরনের নতুন আণবিক কাঠামো উদ্ভাবন করেছেন।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানায়, ‘তাদের তৈরি এই কাঠামো মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে বড় বড় ফাঁপা স্থান রয়েছে, যেখানে অণুগুলো অবাধে প্রবেশ ও বের হতে পারে। গবেষকরা এই কাঠামো ব্যবহার করছেন মরুভূমির বাতাস থেকে পানি আহরণে, পানির দূষণকারী উপাদান অপসারণে, কার্বন ডাই-অক্সাইড ধারণে এবং হাইড্রোজেন সংরক্ষণে।’

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধাতু-জৈব কাঠামোর (মেটাল-অর্গানিক ফ্রেমওয়ার্ক) উন্নয়নের মাধ্যমে নোবেলজয়ীরা রসায়নবিদদের নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছেন, যা তাদের গবেষণার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়তা করবে।

জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের সাসুমু কিতাগাওয়া, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রিচার্ড রবসন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ওমর এম. ইয়াগি প্রত্যেকে রসায়নে নোবেল পুরস্কারের এক-তৃতীয়াংশ করে পাবেন। পুরস্কারের অর্থমূল্য হিসেবে বিজয়ীরা পাবেন ১১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনার, যা তারা তাদের ভবিষ্যতের গবেষণায় কাজে লাগানোর সুযোগ পাবেন।

গত বছর রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন ৩ জন রসায়নবিজ্ঞানী। এরা হলেন ডেভিড বেকার, ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার। এদের মধ্যে ডেভিড বেকার যুক্তরাষ্ট্রের এবং ডেমিস হাসাবিস এবং জন জাম্পার যুক্তরাজ্যের নাগরিক। ‘কম্পিউটেশনাল প্রোটিন ডিজাইন’- এ অবদান, অর্থাৎ নতুন ধরনের একটি প্রোটিন তৈরির জন্য নোবেল দেওয়া হয়েছিল ডেভিড বেকারকে। আর ডেমিস হাসাবিস ও জন জাম্পারকে নোবেল দেওয়া হয়েছিল ‘প্রোটিন স্ট্রাকচার প্রেডিকশন’ বিষয়ে অবদান রাখার জন্য। দুই ব্রিটিশ বিজ্ঞানী এমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করেছেন যা দিয়ে ৫০ বছরের পুরোনো ‘প্রোটিনের জটিল কাঠামো অনুমান করার’ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।

গত ৬ অক্টোবর চলতি ২০২৫ সালের প্রথম নোবেল ঘোষণা করা হয়। সেদিন চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেলজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় সাহিত্যে এবং ১০ অক্টোবর বিকাল ৩টায় শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এর পর ১৩ অক্টোবর বিকাল ৩টা ৪৫ মিনিটে ঘোষণা করা হবে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম। নোবেল পদার্থবিদ্যা পুরস্কার ১৯০১ সালে আলফ্রেড নোবেলের ইচ্ছানুসারে প্রবর্তিত হয়। আলফ্রেড নোবেল ছিলেন সুইডিশ বিজ্ঞানী, আবিষ্কারক, ও উদ্ভাবক। মৃত্যুর আগে তিনি তার বিশাল সম্পত্তি থেকে একটি তহবিল গঠন করার নির্দেশনা দেন, যার মাধ্যমে প্রতি বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য এবং শান্তিতে অসামান্য অবদানের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় নোবেল পুরস্কার প্রদান শুরু হয়। প্রথম নোবেল পদার্থবিদ্যা পুরস্কার বিজয়ী ছিলেন জার্মান বিজ্ঞানী উইলহেলম রন্টজেন, যিনি এক্স-রে আবিষ্কারের জন্য এই সম্মাননা পান। এই পুরস্কারটি পৃথিবীর সর্বোচ্চ বিজ্ঞানসম্মত স্বীকৃতিগুলোর মধ্যে অন্যতম, যা পদার্থবিজ্ঞানে গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা ও আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসেবে প্রদান করা হয়।

১৯০১ সাল থেকে ২০২৩ পর্যন্ত থেকে ১১৭ বার পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে মোট ২২৫ জন বিজ্ঞানী এই সম্মানজনক পুরস্কার লাভ করেছেন। তবে, এই বিশাল অর্জনের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো জন বারডিনের অনন্য রেকর্ড। তিনি একমাত্র বিজ্ঞানী, যিনি পদার্থবিদ্যায় দুইবার নোবেল পুরস্কার জিতেছেন—১৯৫৬ সালে এবং ১৯৭২ সালে।