সবজির বাজার চড়া
কমেছে কাঁচা মরিচের দাম
প্রকাশ : ১১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

চলমান উচ্চমূল্যের সবজির বাজারে যখন সাধারণ মানুষ হাঁসফাঁস করছেন বাজার করতে, কেনাকাটা করতে পারছেন না হাত খুলে, এমন পরিস্থিতির মধ্যে আজও সবজির দাম চড়া রয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি বাদে সব সবজির দাম প্রতিকেজি ৮০ টাকার ওপরে। আবার যেসব সবজির দাম কিছুটা কমে ছিল, তার মধ্যে বেশ কয়েকটির দাম নতুন করে বেড়েছে। তবে হুট করেই বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম আজ অনেকটাই কমেছে। অপর দিকে বেড়ে গেছে মুরগির মাংসের দাম। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
আকাশছোঁয়া সবজির দামের কারণে বাজারে স্বস্তি ফিরছে না। স্বল্প আয়ের মানুষেরা হাঁসফাঁস করছেন। প্রতিনিয়তই তাদের মেলাতে হচ্ছে নিজেদের আয়-ব্যয়ের হিসাব। বাজার করতে এসেছিলেন বেসরকারি একজন চাকরিজীবী। তিনি বলেন, ‘বাজারের যে পরিস্থিতি, তাতে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কীভাবে টিকে থাকবো সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে সব কিছুর দাম বেশি, কম বলে কিছু নাই। যেভাবে আগে কিনতাম সেভাবে এখন পারি না। কেন পারি না? কারণ আমার ইনকাম তো একই আছে, সেটা কি বাড়িয়েছে আমার কোম্পানি বা সরকার? কিন্তু জিনিসপত্রের দাম তো ঠিকই বাড়ছে। এভাবে হলে আমরা কীভাবে চলব?’
আরেক ক্রেতা বলেন, ‘কোনও কিছু যদি আগে দুই কেজি কিনতাম সেটা এখন কিনি এক কেজি। কারণ দুই কেজি কেনার পয়সা আমার নেই। এটাই সত্য। উচ্চ বাজারমূল্য প্রতিদিন আমার মতো সাধারণ মানুষের ওপর চাপ তৈরি করছে।’ আজকের বাজারে প্রতিকেজি ভারতীয় টমেটো ১৪০ টাকা, দেশি গাজর ৮০ টাকা, চায়না গাজর ১৩০-১৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ১০০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ১২০-১৪০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১৮০ টাকা, শিম ২৬০ টাকা, দেশি শসা ১০০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৮০-১২০ টাকা, পটোল (হাইব্রিড) ৮০ টাকা, দেশি পটোল ১৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, ধুন্দল ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বরবটি ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, মুলা ৮০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা, ধনেপাতা (মানভেদে) ৩০০ টাকা, শসা (হাইব্রিড) ৭০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আর মানভেদে প্রতিটি লাউ ৮০-১২০ টাকা, চালকুমড়া ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর এক হালি কাঁচা কলা ৪০-৫০ টাকা। এছাড়া এক হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা করে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, কেজিতে ভারতীয় টমেটো, চায়না গাজর, সাদা গোল বেগুন, কালো গোল বেগুন, শিম, দেশি শসা, ঢেঁড়স, দেশি পটোল, ধুন্দলের দাম ২০ টাকা করে বেড়েছে। কেজিতে ১০ টাকা করে বেড়েছে শসার (হাইব্রিড) দাম। আর কেজিতে ২০ টাকা করে কমেছে মুলা ও কচুরমুখীর দাম। এছাড়া অন্যান্য সবজির দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
এছাড়া হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া কাঁচা মরিচের দাম আজ প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। সপ্তাহখানেক আগে কাঁচা মরিচের দাম ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজি। কোথাও ছিল ৪০০ টাকা। এখন কাঁচা মরিচের নেমে এসেছে ২৪০ টাকায়।
এদিকে সবজির দাম বাড়ার পেছনে বৃষ্টি ও ঋতুর পরিবর্তনকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, ‘অসময়ে বৃষ্টি হওয়ার ফলে সবজির দাম বেড়েছে। এছাড়া একটা সিজন থেকে আরেকটা সিজন আসছে। এরকম সিজন পরিবর্তন হলে চলে যাওয়া সিজনের সবজির দাম বাড়তি থাকে।’
এছাড়া বাজারে বেড়েছে ক্রস পেঁয়াজ, চায়না আদার দাম। এছাড়া কমেছে বগুড়ার আলু, দেশি ও চায়না রসুনের দাম। আকার ও মানভেদে ক্রস জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে- ৮০-৮৫ টাকায়। এর মধ্যে ছোট পেঁয়াজ ৭০ টাকা ও বড় সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা করে। দেশি পেঁয়াজ ৮০ টাকা, লাল আলু ২৫ টাকা, সাদা আলু ২৫ টাকা, বগুড়ার আলু ৩০-৩৫ টাকা, দেশি রসুন ৮০-১০০ টাকা, চায়না রসুন ১৩০-১৪০ টাকা, চায়না আদা ১৮০-২০০ টাকা, ভারতীয় আদা মানভেদে ১৬০-১৮০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেখা যায়, প্রতিকেজিতে ক্রস জাতের পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫-১০ টাকা করে। আর কেজিতে চায়না আদার দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। এছাড়া প্রতি কেজিতে বগুড়ার আলুর দাম কমেছে ৫ টাকা, দেশি রসুনের দাম কমেছে ২০ টাকা, চায়না রসুনের দাম কমেছে ১০-২০ টাকা করে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে কিছুটা কম থাকলেও আজকের আবার বেড়েছে মুরগির মাংসের দাম। আজ বাজারে বয়লার, কক, লেয়ার ও দেশি মুরগির দাম বেড়েছে। এসব মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
বাজারে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে। খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা কেজি দরে। ব্রয়লার মুরগি ১৭৫-১৮৫ টাকা, কক মুরগি ২৮০-২৯০ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি ডজন মুরগির লাল ডিম ১৩০ টাকা এবং সাদা ডিম ১২০ টাকা, হাঁসের ডিম ১৮০-২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
দেখা যায়, প্রতিকেজিতে বয়লার মুরগির দাম বেড়েছে ৫-১২ টাকা, কক মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা, লেয়ার মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা এবং দেশি মুরগির দাম বেড়েছে ২০ টাকা করে। এছাড়া অন্যান্য মাংস ও ডিমের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত।
দাম বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে আল-আমিন চিকেন হাউজের বিক্রেতা বলেন, ‘এখন ওয়েদার একটু ঠান্ডা, তাই মুরগির দাম বেশি। কারণ এখন মুরগি মরবে না। তাই দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে খামারিরা। যেহেতু এখন মোটামুটি ঠান্ডা ওয়েদার চলে আসছে, তাই বলা যায় মুরগির দাম এরকমই থাকবে।’
এছাড়া বাজারে আকার ও ওজন অনুযায়ী রুই মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কাতল মাছ ৩০০-৬০০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৭০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০-১৪০০ টাকা, কাচকি মাছ ৪০০-৫০০ টাকা, কৈ মাছ ২৫০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৪০০-৬০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, বেলে মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, মেনি মাছ ৬০০-৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে মুদিপণ্যের দামে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আজকে প্রতিকেজি প্যাকেট পোলাও চাল ১৫৫ টাকা, খোলা পোলাও চাল মানভেদে ৯০-১৩০ টাকা, ছোট মসুর ডাল ১৫৫ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১০৫ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৪০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৭০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা, মাষকলাই ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯৮ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৭২ টাকা, কৌটাজাত ও কালো গোল মরিচ ১১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
