সুসংবাদ প্রতিদিন
কুষ্টিয়ায় লতিকচু চাষে বাজিমাত
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
এ.এইচ.এম.আরিফ, কুষ্টিয়া

বারি পানি কচু-১ জাতের লতি কচুর চাষ করে উদ্যোক্তা গৃহবধূ আসমা খাতুন তার নিজের ভাগ্যবদল করেছেন। বর্ষায় পানিতে ডুবে যাওয়া নিচু জমিতে কৃষকের সাধারণত চাষাবাদের আগ্রহ থাকে সীমিত। তবে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাঁড়ারা গ্রামের সেই জমিগুলোতে এখন সার্থকভাবে চাষ হচ্ছে লতিকচু। স্যাঁতসেঁতে জমিতে কচুর সফল আবাদ উদ্যোক্তা আসমা খাতুনকে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
যশোর অঞ্চলের টেকসহ কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় বাণিজ্যিকভাবে লতিকচু চাষে উদ্যোগ নেন তিনি। চলতি বছরের ২০ মার্চ মিরপুর কৃষি অফিসের মাধ্যমে উন্নত জাতের বারি পানি কচু-১ এর চারা সংগ্রহ করে খাঁড়ারা ব্লকে ২০ শতক জমিতে তিনি এর চাষাবাদ শুরু করেন আসমা। অল্প সময়ে ভালো ফলন আর সুস্বাদু ও অন্যান্য ফসলের উৎপাদন খরচের চেয়ে লতিকচু চাষে খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ার কচু চাষে অনেক ভালো সাফল্য পেয়েছেন তিনি।
রবিবার সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, আসমা খাতুন খুবই খুশি। মাত্র ১৫ হাজার টাকা খরচ করে তিনি এই কচু চাষ করে অন্য ফসলের চেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন। এরইমধ্যে তিনি কচুর লতি বিক্রি করছেন। প্রতি সপ্তাহে দুবার করে কচুর লতি বিক্রি করেন তিনি। প্রতিবারে ৫০ কেজি করে তিনি কচুর লতি বাজারে নিয়ে যান। প্রতি কেজি ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে তিনি এ কচুর লতি বিক্রি করে বেশ আর্থিকভাবে সফল তিনি। কচুর লতি উত্তোলন করে এখন পর্যন্ত ৬০ হাজার টাকার বিক্রি করেছেন। আবহাওয়া ভালো থাকলে আরও ১ লাখ টাকার কচু বিক্রির সম্ভাবনা আছে।
তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান সোহাগ বলেন, লতিকচুর ফলন ভালো, স্বাদ উন্নত এবং বাজারে এর চাহিদা বেশি। এজন্য কৃষকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। মিরপুরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মোঃ ময়নুল ইসলাম বলেন-মিরপুরের বহলবাড়ীয়া ইউনিয়নের খাঁড়ারা ব্লকের জমিতে লতিকচুর চাষ হচ্ছে এবং প্রতিবছরই এখানে আবাদ বাড়ছে। সাধারণ কৃষকরাও ছাড়াও নারীরাও এই লতিকচু চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তেমনি আমি এই নারী উদ্যোক্তা আসমা খাতুনকে ৩ দিনের টেনিং এর মাধ্যমে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করেছি।
উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো: মকিবুল ইসলাম বলেন, কচুচাষ এখন শুধু নিজস্ব ভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি পরিণত হয়েছে বাণিজ্যিক কৃষির একটি স্থায়ী মডেলে। মিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান- বর্ষায় নিচু জমিতে লতিকচুর চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। সরকারিভাবে যশোর অঞ্চলের টেকসহ কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। কৃষকরা এখন এই ফসলকে অর্থকরী সবজি হিসেবে বিবেচনা করছে। সঠিক পরিচর্যায় অতিদ্রুত এর ফলন পাওয়া যায়।
পুরুষদের পাশাপাশি এখন অনেক নারী উদ্যোক্তাও তৈরি হচ্ছে। আসমা খাতুন তেমনি একজন সফল নারী উদ্যোক্তা। আমাদের মিরপুর কৃষি অফিসের সঠিক দিকনির্দেশনা ও বাজার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আসমা খাতুন নিয়মিত আয় করতে পারছেন, যা অর্থনৈতিকভাবে আসমাকে স্বাবলম্বী করে তুলেছে।
