আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে ইসি
প্রকাশ : ১৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আরিফুল ইসলাম

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ উপলক্ষে আগামী সোমবার আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রাক প্রস্তুতিমূলক সভা করতে যাচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচন ভবনে ওই সভায় দেশের সব আইনশৃৃঙ্খলা প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে চিঠি দিয়েছে ইসি।
ইসি সূত্র জানায়, সোমবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে নির্বাচন ভবনে সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভার কার্যপত্র থেকে জানা যায়, আলোচ্য বিষয়ে রাখা হয়েছে ১৩টি এজেন্ডা। এর মধ্যে উল্লেখ্য যোগ্য হচ্ছে- ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও নির্বাচন এলাকায় শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাসমূহের কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণ; সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা ও সংখ্যালঘুদের নিরপত্তা; অবৈধ অস্ত্র ব্যবহার রোধ ও নিয়ন্ত্রণ; এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যেমে ভুল ও মিথ্যা তথ্যের প্রচারণা রোধ কৌশল নির্ধারণ; ভোটকেন্দ্র ড্রোন ক্যামেরা নিষিদ্ধকরণ ইত্যাদি।
আইনশৃঙ্খলা বৈঠকের কার্যপত্র থেকে আরও জানা যায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খসড়া ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা রাখা হয়েছে ৪২ হাজার ৬১৮টি। খসড়া ভোট কক্ষ ২ লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। সংসদ নির্বাচনে ভোট দেওয়ার উপযোগী এখন পর্যন্ত ১২ কোটি ৬২ লাখ ৩৬ হাজার ১৭১ জন। এছাড়া আগমী সংসদ নির্বাচনে কতজন রিটার্নিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন এবং কারা দায়িত্ব পালন করবে, তা চূড়ান্ত করবে কমিশন।
ইসি কর্মকর্তারা জানায়, ভোটের জন্য ইসি প্রস্তুত; কিন্তু বড় মাথাব্যথার কারণ হচ্ছে- বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক করা। সেটি না করতে পারলে কোনোভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন করা ইসির পক্ষে সম্ভব না। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শ নিয়ে ইসিকে ভোটের দিকে যেতে হবে।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব ধরনের প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ‘ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব প্রস্তুতি ডিসেম্বরের মধ্যে নিতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন তিনি’।
তিনি বলেন, প্রস্তুতির মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে। যেমন- আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে (পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড) ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে। তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ যেন এ সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয়, তাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয়। প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যেন নির্বাচন সামনে রেখে আগামী মাসগুলো কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনে ১৬ হাজার ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখ নিয়োজিত থাকবে। এই ৮ লাখ সদস্যের মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার আনসার সদস্য এবং পুলিশ সদস্য থাকবে ১ লাখ ৪১ হাজার। সংসদ নির্বাচনের সময়ে ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়া বিপুলসংখ্যক বিজিবি ও র্যাব মাঠে থাকবে।
এদিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখা বড় চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন। তবে তিনি আশা প্রকাশ করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। নির্বাচনের সময়ে আরও ভালো হবে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যে বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে দেশে। তারপরও আমি বলব, গত বছরের জুলাই-আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলার অনেক উন্নতি হয়েছে। আমরা ঘুমাতে পারছি। আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা ঘুমাতে পারছেন না, তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ইলেকশন আসতে আসতে আরও ভালো হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সবাইকে নিয়ে আমরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই, মানুষ যাতে নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন।’
আইনশৃঙ্খলা রক্ষার চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশন মোকাবিলা করতে পারবে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘নির্বাচনি সিস্টেম, নির্বাচন কমিশন এবং যারা নির্বাচন পরিচালনা করেন, সেই প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং অফিসার সবাই মিলে যে সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে পারে, এ বিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি করা বড় চ্যালেঞ্জ।
মানুষ ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার অভ্যাস ভুলে গেছে। মানুষকে কেন্দ্রমুখী করা, সবাইকে নিয়ে আসাও চ্যালেঞ্জ হয়ে গেছে।’
দেশে রাষ্ট্র, সরকার, দল, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান একাকার হওয়ার পর সরকারের পতন হলে সব একসঙ্গে ধসে পড়ে বলে মন্তব্য করেন এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সে ধরনের একটা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এটা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে। সেসব দেশের সঙ্গে তুলনা করলে আমি বলব, বাংলাদেশে অবস্থা অনেক ভালো।’
ইসি সূত্র জানায়, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মাঠ প্রশাসনসহ পাঁচটি বিশেষ সমন্বয় ও তদারকি কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা সমন্বয় কমিটির নেতৃত্বে আছেন নির্বাচন কমিশনার (অব.) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ; তিনি একই সঙ্গে প্রবাসী ভোট ও দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক সমন্বয় কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন। মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে থেকে নির্বাচন খারাপ করার কাজটি করেছে।
তবে এবার হয়তো তারা অতখানি শক্তিশালী অবস্থানে থাকবে না এবং ভালো নির্বাচনের জন্য কাজ করবে। তিনি স্বীকার করেন, কিছু কিছু বাহিনী ‘ট্রমা’র মধ্য দিয়ে গিয়েছে এবং গত ১৫-১৬ বছর ধরে যে ‘সাংস্কৃতিক পরিবর্তন’ ও হয়েছে, তা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব নয়।
তিনি জানান, ঘাটতিগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে এবং জাতীয়ভাবে নির্বাচন কমিশনের যা যা সক্ষমতা আছে- সেদিকে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে (রোভার-স্কাউটদের) রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ‘আমরা আমাদের সম্পূর্ণ সক্ষমতাকে যেন কাজে লাগাতে পারি, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।
