যা করলে ল্যাপটপের ক্ষতি

প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

আধুনিক জীবনযাপনের অনেক ক্ষেত্রে ল্যাপটপ এখন নিতান্তই জরুরি। কাজ, পড়াশোনা, বিনোদন- প্রায় সবকিছুতেই এটি অঙ্গসংগতি। তবুও বহু ব্যবহারকারী ল্যাপটপ চালু রেখে এমন কিছু কাজ করেন যেগুলো ডিভাইসটির ক্ষতি, ডেটা হারানো বা ব্যক্তিগত নিরাপত্তাহানির কারণ হতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন কোন কাজগুলো চালু থাকা অবস্থায় করা ঠিক নয় এবং কেন তা এড়ানো উচিত।

ল্যাপটপ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সারাক্ষণ ঘোরানো : ল্যাপটপ চলাকালে বারবার এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সরালে অভ্যন্তরীণ হার্ডওয়্যার- বিশেষ করে হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ (HDD) ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। চলমান হার্ড ডিস্কে আচমকাই ঝোঁক বা ধাক্কা দিলে রিড/রাইট হেড ও প্ল্যাটারকে ক্ষতি হতে পারে, ফলে ডেটা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

চালু রেখে ব্যাগে বা মোড়কে রেখে দেওয়া : ল্যাপটপ চালু অবস্থায় বেঁধে রাখা বা মোড়কে রাখলে হিটিং সমস্যা হতে পারে। কার্যকর কুলিং বন্ধ হয়ে গেলে প্রসেসর ও গ্রাফিক্স চিপ অত্যধিক গরম হতে পারে — যা স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। সর্বদা ল্যাপটপটি স্লিপ বা শাটডাউন করে ব্যাগে রাখুন।

পানি বা তরল বস্তু নিয়ে ব্যবহার করা : চালু থাকা অবস্থায় কফি বা পানি ওপর পড়ে গেলে শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনা বাড়ে। তরল যেকোনো অংশে ঢুকলে কী-বোর্ড, মাদারবোর্ড কিংবা ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। ফলে ডিভাইস অনইনও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

ভ্রমণকালে আনলক অবস্থায় রেখে দেওয়া : যদি ল্যাপটপটি অন রেখে কোনো পাবলিক স্থানে অসম্পূর্ণ অবস্থায় থাকে, সাইবার নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে — কেউ ল্যাপটপে হাত দেওয়া বা ব্যক্তিগত ফাইল দেখা শুরু করতে পারে। ভ্রমণের সময় ল্যাপটপ বন্ধ করে লক করা নিরাপদ।

অতিরিক্ত টেম্পারেচারে ব্যবহার করা : গরম পরিবেশে ল্যাপটপ অন রেখে দীর্ঘ সময় কাজ করালে ওভারহিটিং বাড়ে। প্রসেসর থ্রটলিং করতে পারে, পারফরম্যান্স কমে যায় এবং বয়স বেড়ে যায়। ভালো ভেন্টিলেশন নিশ্চিত করুন ও প্রয়োজনে কুলিং প্যাড ব্যবহার করুন।

হঠাৎ রিস্টার্ট না করে কাছাকাছি ধরার অভ্যাস : কাজ চলাকালে কিভাবে শাটডাউন বা রিস্টার্ট করা হয় তা গুরুত্বপূর্ণ। হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলে বা ব্যাটারি শেষ হলে নেটিভ সেভ না করলে ডেটা করাপ্ট হতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ করার সময় নিয়মিত সেভ করুন ও ব্যাকআপ রাখুন।

চালু রেখে খোলা অবস্থায় স্লিপ-হাইবারনেট অপশন বাদ দেওয়া : স্লিপ মোড বা হাইবারনেট সুবিধা থাকলেও মাঝে মধ্যে সম্পূর্ণ শাটডাউন দিলে সিস্টেম রিফ্রেশ হয় এবং সিস্টেম ত্রুটি কমে। দীর্ঘ সময় ব্যবহার না করলে ডিভাইস বন্ধ রেখে নির্দিষ্ট আপডেট অথবা রিস্টার্ট দিন।

প্লাগইন রেখে সফটওয়্যার-ইনস্টল করা বা আপডেট বন্ধ রাখা : অনেকেই সফটওয়্যার আপডেট পেলে পরে করবেন বলে রেখে দেন। কিন্তু নিরাপত্তা আপডেট মিস করলে ভাইরাস কিংবা ম্যালওয়্যার আক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। আপডেট ডাউনলোড ও ইনস্টল করার সময় ডিভাইস প্লাগ-ইন করে রাখুন- এবং প্রয়োজনীয় হলে রিস্টার্ট করে নিন।

ল্যাপটপ চালু রেখে হাত থেকে ফসকে পড়ে গেলে : চালু অবস্থায় ল্যাপটপ ফসকে পড়লে হার্ডওয়্যার যেমন স্ক্রিন, হিঞ্জ, মাদারবোর্ড এবং স্টোরেজ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষত যাদের ল্যাপটপে HDD আছে, চলন্ত ড্রাইভ হলে ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

ব্যবহারবিধি ও রক্ষা পরামর্শ-

রেগুলার ব্যাকআপ : গুরুত্বপূর্ণ ফাইলস ক্লাউড বা এক্সটারনাল ড্রাইভে নিয়মিত ব্যাকআপ রাখুন।

শাটডাউন-স্লিপে সচেতনতা : লং-টার্ম ব্যবহার না করলে ডিভাইস বন্ধ রাখুন; দ্রুত বিরতি হলে স্লিপ মোড ব্যবহার করুন।

ভালো ভেন্টিলেশন : কাজ করার সময় ল্যাপটপের ভেন্ট ও কুলিং ব্লক না হওয়ার মতো সমতল স্থানে রাখুন।

কুলিং প্যাড ব্যবহার : যদি ল্যাপটপ দীর্ঘ সময় হেভি-টাইপ কাজ (গেমিং, ভিডিও রেন্ডারিং) করে, কুলিং প্যাড ব্যবহার করুন।

নিরাপদ পরিবহন : অন থাকা অবস্থায় সার্বজনীন পরিবহন বা ব্যাগে না রাখার চেষ্টা করুন; সর্বদা বন্ধ করে ব্যাগে রাখুন।

মাল্টি-প্রোটেকশন কেস : ফসকে পড়া আটকাতে প্যাডেড কেস বা শক-রেজিস্ট্যান্ট ব্যাগ ব্যবহার করুন।

হ্যান্ডলিং : ল্যাপটপ স্থানান্তর করার সময় দুই হাত ব্যবহার করুন এবং শিশুরা বা পোষ্যদের কাছ থেকে দূরে রাখুন।

ল্যাপটপের সুরক্ষায় ছোটখাটো সতর্কতা অনেক বড় ব্যয় এবং অনিশ্চয়তা থেকে রক্ষা করে। চালু রেখে কিছু কাজ করা স্বল্প সময়ের সুবিধা দিলেও দীর্ঘমেয়াদে ডিভাইসের আয়ু ও ডেটা নিরাপত্তার জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে। তাই কাজের সময় সঠিক ব্যবহারবিধি মেনে চলা জরুরি- আর প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন।