যুদ্ধবিরতির মধ্যে ইসরায়েলের হামলায় ৯৭ ফিলিস্তিনি নিহত

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পরও গত শুক্রবার থেকে গতকাল পর্যন্ত ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলিদের নির্বিচার হামলায় ৯৭ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ২৩০ জন। ইসরায়েলি বাহিনী ৮০ বার যুদ্ধবিরতি চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করেছে। এতে দুই বছরের হামলায় গাজায় ৬৮ হাজারের কাছাকাছি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। ইসরায়েলের দাবি, এতে ১ হাজার ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রায় আড়াইশ মানুষকে জিম্মি করে গাজায় নেওয়া হয়। হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তরের তথ্য দিয়ে আল- জাজিরা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সম্প্রতি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে হামাস ও ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা মেনে যুদ্ধবিরতি কার্যকরও হয়েছে। যুদ্ধবিরতির আওতায় ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় অভিযান বন্ধ করার কথা। বিনিময়ে গাজায় জিম্মি থাকা ব্যক্তিদের (জীবিত ও মৃত) ছেড়ে দেবে হামাস। যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের আওতায় জটিল এ প্রক্রিয়া চলছে।

৪৫ জনকে হত্যা করে গাজায় যুদ্ধবিরতি পুনঃকার্যকরের ঘোষণা ইসরাইলের : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ব্যাপক বোমাবর্ষণের পর যুদ্ধবিরতি পুনঃকার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে দখলদার ইসরাইল। এর আগে রোববার দিনভর গাজার বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায় ইসরাইলি সেনারা। এতে অন্তত ৪৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর টাইমস অব ইসরাইলের। ইসরাইল জানিয়েছে, হামাসের হামলায় রোববার সকালে রাফাতে তাদের দুই সেনা নিহত ও তিনজন গুরুতর আহত হয়। যদিও হামাস জানিয়েছে, রাফার সংঘর্ষ সম্পর্কে তারা অবগত নয়। তা সত্ত্বেও দখলদাররা গাজার বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালায়। দিনের শেষদিকে আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ঘোষণা দিয়ে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) বলেছে, ‘রাজনৈতিক পর্যায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী এবং গাজায় সিরিজ হামলার পর, প্রতিরক্ষা বাহিনী আবারও যুদ্ধবিরতি কার্যকর শুরু করেছে। যা হামাস ভঙ্গ করেছিল।’

যুদ্ধবিরতির মধ্যে এবার গাজায় ইসরাইলের দুই সেনা নিহত : দ্য টাইমস অব ইসরাইলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলের দুই সেনা নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন মেজর ইয়ানিভ কুলা (২৬) ও সার্জেন্ট ইতাই ইয়াভেটজ (২১)। একই ঘটনায় সেনাবাহিনীর এক রিজার্ভ সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। নিহত ও আহত সেনারা নাহাল ব্রিগেডের ৯৩২তম ব্যাটালিয়নের সদস্য।

রোববার ইসরাইল গাজায় একাধিক বিমান ও স্থল হামলা চালায়, যা চলতি মাসের যুদ্ধবিরতি চুক্তির সবচেয়ে বড় পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তাদের ওপর হামলার প্রতিশোধ হিসেবেই এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগে গাজায় যুদ্ধবিমান, অন্যান্য আকাশযান ও আর্টিলারি হামলা চালানো হয়েছে। হামলার লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে ছিল অস্ত্রভাণ্ডার ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ব্যবহৃত সামরিক অবকাঠামো। দেশটির সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হামাসের ব্যবহৃত একটি সুড়ঙ্গকেও ১২০টি রকেট দিয়ে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে।

অন্যদিকে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসসাম ব্রিগেড জানিয়েছে, তারা যুদ্ধবিরতি চুক্তি মেনে চলছে এবং রাফাহ অঞ্চলে কোনো সংঘর্ষের খবর তাদের জানা নেই। বিবৃতিতে সংগঠনটি জানায়, ‘রাফাহ এলাকায় কোনো সংঘর্ষ বা অভিযানের খবর আমাদের জানা নেই। ওই অঞ্চল বর্তমানে দখলদার বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা ‘রেড জোন’, এবং সেখানে থাকা আমাদের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ যুদ্ধ পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকেই বিচ্ছিন্ন।’ ইসরাইলি বাহিনী রাফাহে হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে এবং অভিযোগ করেছে যে হামাস তাদের সেনাদের লক্ষ্যবস্তু করেছে।

গাজায় ইসরায়েলি হামলার পরও যুদ্ধবিরতি কার্যকর আছে, দাবি ট্রাম্পের : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর গাজায় প্রাণঘাতী হামলা চালানোর পরও ইসরায়েল-হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর রয়েছে। গত রোববার সাংবাদিকদের এ কথা বলেন ট্রাম্প। হামাসের বিরুদ্ধে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠনটির ‘অবস্থানে’ ইসরায়েলি বাহিনী প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছে। এয়ারফোর্স ওয়ান উড়োজাহাজে বসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ট্রাম্প। গাজায় যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর আছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আছে।’ ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দেন, যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের সঙ্গে হামাসের নেতৃত্ব জড়িত নয়; বরং ‘কিছু বিদ্রোহী’ দায়ী। ইসরায়েল বলেছে, তারা হামাসের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে। এরপর আবার গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে শুরু করেছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, ইসরায়েলি সেনাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু করেছে হামাস। এ কারণেই তারা হামাসের অবস্থানে হামলা চালিয়েছে।

গাজায় হামাসের নিয়ন্ত্রণাধীন উদ্ধারকারী সংস্থা সিভিল ডিফেন্স বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৫ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, হতাহতের খবরগুলো তারা যাচাই করছে। ট্রাম্প আশা প্রকাশ করেছেন, তার মধ্যস্থতায় হওয়া এই যুদ্ধবিরতি টিকে থাকবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করতে চাই যে হামাসের সঙ্গে এটা (যুদ্ধবিরতি) শান্তিপূর্ণভাবে চলবে।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আপনারা জানেন, তারা বেশ বেপরোয়া আচরণ করছে। তারা কিছু গুলিও চালিয়েছে। আর আমরা মনে করি, এতে হয়তো (হামাসের) নেতৃত্ব জড়িত নয়।’

ট্রাম্পের বক্তব্যের আগে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গাজা প্রসঙ্গে কথা বলেন। তিনি গাজায় নতুন করে সহিংসতাকে খুব বড় কিছু মনে করছেন না। ভ্যান্স সাংবাদিকদের বলেন, যুদ্ধবিরতিতে ‘উত্থান-পতন’ থাকবে। ভ্যান্স আরও বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটা টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বোচ্চ সুযোগ তৈরি করেছে। তবে এরপরও উত্থান-পতন থাকবে। আর আমাদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে।’

গাজায় দুই বছরের ভয়াবহ যুদ্ধের অবসানে ১০ অক্টোবর যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রাণঘাতী হামলা চালিয়েছিল হামাস। জবাবে সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। দুই বছরের এই যুদ্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ৬৮ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার বেশির ভাগ অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে বন্দী ও জিম্মি বিনিময়ের রূপরেখা নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি গাজা পুনর্গঠনের জন্য একটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী রূপরেখাও প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়েছে। হামাসকে নিরস্ত্র করতে ভ্যান্স পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলোকে একটি ‘নিরাপত্তা কাঠামো’ তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন। শান্তিচুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হামাসকে নিরস্ত্র করা।