আনারসের যত গুণ
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক

আনারসের প্রথম কামড়ে যে চটকদার স্বাদ আসে, সেই সঙ্গে টান এবং মিষ্টতার অনন্য মিল, তা শুধু গরম দিনের জন্য একটি রিফ্রেশিং ফল নয়। এই রসালো ফলের ভেতরে লুকিয়ে আছে নানা ধরনের পুষ্টি, এনজাইম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা নিয়মিত খেলে শরীরকে ভেতর থেকে নতুন করে অনুভব করাতে পারে। স্মুদি বা দুপুরের নাস্তার পর কিছু আনারস খাওয়া- সবই শরীরের জন্য উপকারী। আসুন জানি, দৈনন্দিনভাবে আনারস খেলে শরীরে কী কী পরিবর্তন ঘটে।
হজম প্রক্রিয়াকে সহায়তা করে: যদি খাবারের পর পেটে ভার অনুভব করেন, আনারস হতে পারে আপনার হজমের বন্ধু। এতে আছে ‘ব্রোমেলেইন’ নামক এনজাইম, যা প্রোটিন ভাঙতে সাহায্য করে এবং হজমকে সহজ করে। এছাড়াও আনারসের ফাইবার হজমকে সমর্থন দেয়, কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং অন্ত্রের ব্যালেন্স বজায় রাখতে সহায়ক। হজম ঠিক থাকলে শরীরে এর প্রভাব দেখা দেয় এনার্জি বাড়ে, পেট শান্ত থাকে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : ভিতরে যদি হজম ঠিক থাকে, তা স্বাভাবিকভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় সহায়তা করে। এক কাপ আনারসে আছে দৈনিক ভিটামিন সি-এর অর্ধেকের বেশি পরিমাণ, যা ইমিউন সেল গঠনে গুরুত্বপূর্ণ। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ব্রোমেলেইন কফ ও শ্লেষ্মা পাতলা করতে এবং প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। প্রতিদিন একটু আনারস খাওয়া মানে আপনার ইমিউন সিস্টেমকে নিয়মিত শক্তিশালী করা।
ত্বককে করে উজ্জ্বল ও মসৃণ : কয়েক সপ্তাহ নিয়মিত আনারস খেলে ত্বকে তার প্রভাব দেখা যায়। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনে সহায়ক, যা ত্বককে ফার্ম ও মসৃণ রাখে। পাশাপাশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি র্যাডিকেলের ক্ষতি কমায়, যা ত্বকের স্থায়ী নীচু রেখা ও অন্ধকার দাগ দূর করতে সাহায্য করে। আনারসের উচ্চ জলবস্তু ত্বককে ভিতর থেকে হাইড্রেটেড রাখে, ফলে ত্বক দেখতে থাকে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক : মিষ্টি হলেও আনারস কম ক্যালোরি যুক্ত এবং ফাইবার ও জল সমৃদ্ধ, যা দীর্ঘ সময় পেট ভর্তি রাখে। দৈনন্দিন রুটিনে এটি অন্তর্ভুক্ত করলে অতিরিক্ত মিষ্টি খাবারের প্রলোভন কমে এবং ক্যালোরি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আনারসকে বলা যায় প্রকৃতির মিষ্টান্ন, যা ওজন নিয়ন্ত্রণে নিঃশব্দে সাহায্য করে।
প্রদাহ ও পেশী ব্যথা কমায় : দীর্ঘদিনের কাজের পর পেশী ব্যথা বা ফোলা অনুভব করলে ব্রোমেলেইন পুনরায় কাজে আসে। এটি প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে, ফলে শরীর কম ক্লান্ত লাগে এবং দ্রুত পুনরুদ্ধার হয়। এজন্য আনারস প্রায়শই ব্যায়ামের পরে বা অতিরিক্ত খাওয়ার পর পরামর্শ দেওয়া হয়।
হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সহায়ক : আনারসে আছে পটাশিয়াম, ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং অতিরিক্ত লবণের প্রভাব কমায়। নিয়মিত আনারস খেলে রক্ত সঞ্চালন ভালো থাকে এবং দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
আনারস খাওয়ার সঠিক সময় : সকালের নাস্তা শেষ হওয়ার পর বা দুপুরের মধ্যভাগে খাওয়াই আদর্শ। দুপুরের খাবারের পরে খাওয়া ব্রোমেলেইন প্রোটিন ও চর্বি হজম করতে সহায়ক। রাতের দিকে এটির তীব্রতা ও প্রাকৃতিক চিনি ঘুমে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
দৈনিক কতটুকু আনারস খাওয়া উচিত : বেনগালুরু ভিত্তিক পুষ্টিবিদ ডা. অঞ্জু সুদ বলেছেন, সাধারণত দিনে দুইটি ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। আনারস তার মধ্যে একটির বিকল্প হতে পারে। দৈনিক প্রায় ১০০ গ্রাম যথেষ্ট, তবে সকাল বা দুপুরের প্রথমার্ধে খাওয়াই ভালো। এটি প্রায় এক মুঠো আনারসের সমান।
