মালয়েশিয়ায় তোপের মুখে ডোনাল্ড ট্রাম্প

* দুই বছর যুদ্ধ চালিয়েও ইসরায়েল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে: হামাস * গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে কাতারের ভূমিকার প্রশংসা করলেন ট্রাম্প

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

৪৭তম আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে মালয়েশিয়ায় গিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনের পক্ষ নেওয়ায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দেশটির রাজধানী কুয়ালামপুরের ইন্ডিপেন্ডেন্স স্কয়ার ও আমপাং পার্কের সামনে হাজারও বিক্ষোভকারী জড়ো হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’সহ নানা স্লোগান ও প্ল্যাকার্ড হাতে সেখানে অবস্থান করেছেন। একটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল- ‘আমাদের সময়ের হিটলার ডোনাল্ড ট্রাম্প।’ আরেকটি ব্যানারে লেখা ছিল- ‘ট্রাম্প, আপনি মালয়েশিয়ায় স্বাগত নন।’

আসমা হানিম মাহুদ নামের এক নারী দেশটির কেলানতান রাজ্য থেকে ৩০০ কিলেমিটার পাড়ি দিয়ে এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য এসেছেন। শুক্রবার মার্কিন দূতাবাসের সামনে আরেকটি বিক্ষোভেও তিনি অংশ নেবেন। আল-জাজিরাকে তিনি বলেন, ট্রাম্পের সহায়তায়ই গাজায় ইসরাইল এতো বেশি বর্বরতা ঘটিয়েছে। এটা খুব সহজেই বোধগম্য। এটা বুঝতে রকেট সায়েন্স পড়তে হয় না। মালয়েশিয়ার বারনামা নিউজ এজেন্সি বলছে, পুলিশ জানিয়েছে- রোববার এক থেকে দেড় হাজার বিক্ষোভকারী এতে অংশ নিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, ইসরাইলের হামলায় গাজায় এ পর্যন্ত ৬৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তবে এ মাসের শুরুতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত ও কার্যকর হয়েছে। তবে এরপরও বেশ কয়েকবার ইসরাইল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে।

দুই বছর যুদ্ধ চালিয়েও ইসরাইল লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে- হামাস : ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের শীর্ষ নেতা খলিল আল-হাইয়া বলেছেন, দুই বছরের বেশি সময় ধরে ইসরাইল গাজায় গণহত্যা চালালেও কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারেনি। গত শনিবার কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। খলিল আল-হাইয়া বলেন, ‘দখলদার শক্তি (ইসরাইল) দুই বছর যুদ্ধ চালিয়েও তাদের লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।’ এ সময় তিনি ইসরাইলের ঘোষিত লক্ষ্যগুলো উল্লেখ করেন। যার অন্যতম হলো—গাজা উপত্যকা সম্পূর্ণ দখল করা এবং সেখানকার ২০ লক্ষাধিক বাসিন্দাকে জোরপূর্বক উৎখাত করা, যা ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে শুরু হওয়া গণহত্যার মূল উদ্দেশ্য ছিল।

ইসরাইল দাবি করেছিল, এই যুদ্ধের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল বন্দিদের মুক্ত করা, কিন্তু সেটিও তারা বাস্তবে অর্জন করতে পারেনি।

হাইয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্তব্য টেনে বলেন, ট্রাম্প বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষ’ এবং যোগ করেন যে, প্রতিদিন আমেরিকান কর্মকর্তারা এমন ধরনের একই রকম বিবৃতি দিচ্ছেন। এছাড়াও তিনি চুক্তিভঙ্গের দিকেও ইঙ্গিত করেছেন, বিশেষ করে ইসরাইলেল গাজায় ত্রাণ সামগ্রী প্রবেশে বাধা দেওয়ার কথা। তার ভাষ্য, ‘যেন আমরা এখনও যুদ্ধের মাঝেই আছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানবিক পরিস্থিতি আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে, এবং দখলদার শক্তি গাজার মধ্যে সহায়তা পৌঁছাতে অবৈধ বাধা সৃষ্টি করে যাচ্ছে।’ শীর্ষ এই হামাস নেতা আরও বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষে ইসরাইলকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। আর হামাস ইসরাইলকে ফের আগ্রাসনের কোনো অজুহাত দেবে না।’

হাইয়া জানান, যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ব্যাপক ধ্বংসের ফলে মৃত জিম্মিদের লাশ উদ্ধার করা কঠিন হলেও হামাস চুক্তির শর্তানুসারে বাকি জিম্মিদের লাশ ফিরিয়ে দেবে। প্রতিরোধ বাহিনীর অস্ত্র ইস্যু নিয়ে হাইয়া বলেন, ‘এই অস্ত্র দখল ও আগ্রাসনের অস্তিত্বের সঙ্গে যুক্ত। দখলদারিত্ব শেষ হলে এই অস্ত্র রাষ্ট্রের অধীনে চলে যাবে।’

গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নে কাতারের ভূমিকার প্রশংসা করলেন ট্রাম্প : ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাস্তবায়নে ভূমিকার জন্য কাতারের প্রশংসা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত শনিবার মালয়েশিয়ায় আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়ার পথে দোহায় এয়ার ফোর্স ওয়ানে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আবদুর রহমান আল থানি।

ট্রাম্প বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা অনেক কিছু একসঙ্গে করেছি। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা — যা আমরা অর্জন করেছি, তা অবিশ্বাস্য। কাতার এতে বড় ভূমিকা রেখেছে, এজন্য আমি তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ পরে এক্স পোস্টে কাতারের আমির বলেন, ‘ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ ছিল মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিকল্পনা, গাজা যুদ্ধের অবসান চুক্তির অগ্রগতি এবং দুই দেশের কৌশলগত সহযোগিতা জোরদার নিয়ে আলোচনা করার একটি ভালো সুযোগ।’

ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকবে, আর যদি না থাকে, তবে হামাসকে মোকাবিলা করা কঠিন কিছু নয়। গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে কাতারের সেনাবাহিনীও অংশ নেবে বলে ইঙ্গিত দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, তারা একসঙ্গে টেকসই শান্তির লক্ষ্যে কাজ করছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে এখন ৫৯টি দেশ যুক্ত রয়েছে। অনেক দেশই এতে স্বাক্ষর করেছে। এটি একটি স্থায়ী শান্তি হওয়া উচিত।’ এদিকে ইসরাইলে সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, গাজায় বহুজাতিক নিরাপত্তা বাহিনী গঠনে জাতিসংঘের প্রস্তাব বা আন্তর্জাতিক অনুমোদনের প্রয়োজন হতে পারে। রুবিওর সঙ্গে আলোচনা শেষে ইসরাইলি কর্মকর্তারা জানান, শান্তিরক্ষী বাহিনী এমন দেশ দিয়েই গঠিত হবে, যাদের নিয়ে ইসরাইল ‘স্বস্তি বোধ করে’।