সুসংবাদ প্রতিদিন
নওগাঁয় আখ চাষে লাভবান কৃষক
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আব্বাস আলী, নওগাঁ

নওগাঁয় আখ চাষে পরিশ্রম ও খরচ কম এবং ভালো দাম পেয়ে লাভবান হচ্ছে চাষিরা। একইসঙ্গে আখের জমিতের সাথী ফসল হিসেবে আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষ করেও লাভবান হচ্ছে তারা। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আখের ফলনও ভালো হয়েছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এসব আখ চলে যায় পাশের জেলায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে- জেলায় এ বছর ২১৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ও উন্নত জাতের আঁখ চাষ হয়েছে। যা থেকে উৎপাদিত আখের বাজারমূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকারও বেশি।
অপেক্ষাকৃত উঁচু দোঁ-আশ মাটি, পানি জমে না এমন জমি আঁখ চাষের জন্য উপযোগী। পরিশ্রম ও খরচ কম এবং দাম ভালো পাওয়ায় নওগাঁয় প্রতি বছরই বাড়ছে আখের আবাদ। খরচের প্রায় তিনগুণ লাভ হওয়ায় কৃষকদের কাছেও চাষাবাদে আগ্রহ বাড়ছে। ফলন এবং বাজারে ভালো দর থাকায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে সোনালি হাসি।
নওগাঁ সদর উপজেলার চকবালুভরা গ্রামের কৃষি উদ্যেক্তা রবিউল মাহমুদ। তিনি দেড় বিঘা জমিতে শাকসবজি ও ধানের আবাদ করতেন। তবে এ বছর প্রথম ‘ফিলিপাইন ব্ল্যাক’ জাতের আঁখ চাষ করেছেন। যা কালো-বেগুনি রঙের, উচ্চ মানের চিনিযুক্ত এবং নরম জাতের আখ। এটি চিবিয়ে খাওয়ার জন্য বিশেষভাবে জনপ্রিয়। যা অনেক মিষ্টি ও নরম হওয়ার কারণে বয়স্কদের জন্যও খাওয়া সহজ।
উদ্যোক্তা রবিউল মাহমুদ বলেন- সখের বসেই আঁখ চাষ করা হয়েছে। এ জাতের আঁখ এ এলাকাই নেই। ক্ষেতলাল জেলা থেকে এর চারা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এ বছর লাভের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও আগামী বছর ভাল লাভের আশা করছি। কারণ বাইরের জেলা থেকে চারা সংগ্রহ করায় খরচ বেশি পড়েছিল। এছাড়া তেমন অভিজ্ঞতাও ছিল না এবং প্রায় একমাস দেরিতে রোপণ করা হয়েছিল। দেড় বিঘাতে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার টাকা খরচ পড়েছে। আশা করা যায় প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো বিক্রি হবে। এছাড়া অনেকে চারা কিনতে আসছেন। এছাড়াও রোপণের শুরুর দিকে আঁখের জমিতে সাথী ফসল হিসেবে শাক-সবজি চাষ করে বাড়তি আয় করা হয়।
রানীনগর উপজেলার চকমোন গ্রামের কৃষক দুলাল আকন্দ বলেন- খরচ কম ও দাম ভালো পাওয়ায় গত ৫ বছর থেকে ৩ বিঘা জমিতে আখ চাষ করছি। যেখানে প্রতি বিঘায় খরচ পড়ে অন্তত ৩০ হাজার টাকা। এক বছরের এ ফসল প্রতি বিঘায় বিক্রি হয় প্রায় লক্ষাধিক টাকা। খরচ বাদে তার লাভ থাকবে অন্তত আড়াই লাখ টাকা। অনুকূল আবহাওয়া ও রোগবালাই কম থাকা এবং উচ্চ ফলনশীল জাতের কারণে উৎপাদন ব্যয় কম হচ্ছে। ভালো ফলনের পাশাপাশি বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় আখ বিক্রি করে ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। প্রতি পিস আখ বিক্রি হয় প্রকারভেদে ১৫-৩০ টাকা পর্যন্ত। সুস্বাদু ও সুমিষ্ট হওয়ায় চিবিয়ে এবং রস করেও খাওয়া যায়।
সদর উপজেলার তিলোকপুর গ্রামের ক্রেতা লুৎফর রহমান বলেন- রানীনগরে এক বিঘা জমির আঁখ দেড় মাস আগে ৭০ হাজার টাকায় কিনে নেওয়া হয়। এরইমধ্যে খরচের টাকা উঠে গেছে। আরও প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা বিক্রির হবে। যা পুরোটাই লাভ। এসব আখ খুচরা বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করা হয়। আখ ব্যবসায়ী আতোয়ার হোসেন বলেন- জেলার সবচেয়ে বড় আঁখের হাট রানীনগর উপজেলার রেলগেট বাজার। যেখানে ভরমৌসুমে প্রতিসকালে ২-৩ ঘণ্টায় প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো আঁখ বিক্রি হয়। এছাড়া ত্রিমোহনী হাট, হালালিয়া হাট, নসরতপুরসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রি হয়। নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) খলিলুর রহমান বলেন- চিবিয়ে খাওয়া এবং গুড় তৈরি দুই প্রকার আঁখের আবাদ হয়ে থাকে। আখের জমিতের সাথী ফসল হিসেবে আলুসহ বিভিন্ন শাক-সবজি চাষবাদের জন্য কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয়। এতে বাড়তি ফসল এবং আখের ভালো দাম পেয়ে তারা লাভবান হোন। খরচের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ লাভ করা যায়।
