পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ পাস

প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট পুলিশ কমিশন গঠনে অধ্যাদেশ পাস করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ কমিশনের প্রধান থাকবেন দেশের সুপ্রিম কোর্টের কোনো একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অধ্যাদেশ পাস হয়।

এক সংবাদ সম্মেলনে বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তিনি বলেন, আজকে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশ পাস করা হয়েছে। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি পুলিশ কমিশন গঠন করা হবে। এই কমিশনের প্রধান থাকবেন সুপ্রিম কোর্টের কোনো একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি। যিনি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেছেন। সদস্য হবেন গ্রেড ওয়ানের নিচে নয় এরকম কোনো সরকারি কর্মকর্তা, গ্রেড ওয়ানের নিচে নন এমন কোনো অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তিনি কর্মরত হতে পারেন, অবসরপ্রাপ্ত হতে পারেন। মানবাধিকার এবং সুশাসন বিষয়ে কাজ করেছেন, অন্তত ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এমন। পুলিশ কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, পুলিশকে জনবান্ধব-জনমুখী করা হলো এর মূল উদ্দেশ্য। এই কমিশন সরকারের সঙ্গে মিলে কাজ করবে। পুলিশ যেন প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারে সেই ব্যাপারে কী কী করণীয় এই বিষয়ে কমিশন সরকারকে সুপারিশ দেবে। পুলিশ যাতে মানবাধিকার সংবেদনশীল হয়, সে বিষয়ে পুলিশের আধুনিকায়ন কোথায় কোথায় দরকার, কী ধরনের প্রশিক্ষণ দরকার, এগুলো তারা চিহ্নিত করবে। তিনি আরও বলেন, কমিশনের আরও দুটো গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে, নাগরিকদের যে অভিযোগগুলো থাকবে পুলিশের ব্যাপারে, সেগুলোর তদন্ত নিষ্পত্তি করা। পেশাগত বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে যদি কোনো অভিযোগ থাকে সেগুলোরও নিষ্পত্তি করা। এই হচ্ছে পুলিশ কমিশন অধ্যাদেশের মূল ফিচার। উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ান হাসান বলেন, পুলিশিং কার্যক্রমে দক্ষতা ও উৎকর্ষ আনয়ন, শৃঙ্খলা এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় সুপারিশ দেবে কমিশন। নাগরিকের অভিযোগ অনুসন্ধান ও নিষ্পত্তি, পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি, তথ্য প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কল্যাণমূলক ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন বা কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সরকারকে সুপারিশ দেওয়া আর পুলিশ সংক্রান্ত যে সমস্ত আইন নীতি ও গবেষণা করতে হবে এগুলোর বিষয়েও সরকারকে সুপারিশ প্রদান করা হবে এই কমিশনের কাজ।

গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশে দুটি সংশোধনী এনেছে সরকার : গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) দুটি সংশোধনী এনেছে সরকার- একটি কোন কোন ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে না সংক্রান্ত এবং অন্যটি প্রবাসীদের পোস্টাল ভোট কীভাবে গণনা করা হবে তা নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় এ অধ্যাদেশ পাস হয়।

বন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষায় দুটি অধ্যাদেশ চূড়ান্ত অনুমোদন : পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত দুটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাদেশ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে ‘বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ এবং ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ ।

প্রায় ১০০ বছর ধরে কার্যকর দ্য ফরেস্ট অ্যাক্ট, ১৯২৭ আধুনিক পরিবেশগত প্রেক্ষাপট ও জলবায়ু পরিবর্তনের বাস্তবতায় অপ্রতুল হয়ে ওঠায় নতুন ‘বন ও বৃক্ষ সংরক্ষণ অধ্যাদেশ, ২০২৫’ প্রণয়ন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রাকৃতিক বন রক্ষা, বনভূমির রেকর্ড ও সীমানা সংরক্ষণ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা, প্রযুক্তিনির্ভর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অবৈধ দখল প্রতিরোধ, অবক্ষয়িত বন পুনরুদ্ধার, আগ্রাসী প্রজাতি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্তনযোগ্য ও কর্তন নিষিদ্ধ বৃক্ষের তালিকা হালনাগাদের বিধান রাখা হয়েছে।

অন্যদিকে, মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নসংক্রান্ত সীমাবদ্ধতা ও আন্তর্জাতিক নীতিমালার হালনাগাদ প্রেক্ষাপটে ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২’-এর পরিবর্তে নতুন ‘বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ আনা হয়েছে। এতে আবাসস্থল রক্ষা, শিকার, পাচার, হত্যা ও বাণিজ্যিক ব্যবহার নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় করা হয়েছে। বিলুপ্তপ্রায় জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা, বন্যপ্রাণী উদ্ধার, পুনর্বাসন, গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, নতুন অধ্যাদেশে মানুষ-বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান নিশ্চিত করতে ‘বন্যপ্রাণী ট্রাস্ট ফান্ড’ গঠনের বিধান রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সংরক্ষণ কার্যক্রমে বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় জনগোষ্ঠী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সম্পৃক্ততাও নিশ্চিত করা হয়েছে।

পরিবেশ ও বন বিষয়ে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, পাস হওয়া এই দুটি অধ্যাদেশ দেশের বনসম্পদ, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে পরিবেশগত নিরাপত্তা আরও জোরদার হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ প্রকৃতি সংরক্ষণে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।