ইসরায়েলের ‘দোসর’ ইয়াসের আবু সাবাব নিহত
* ইসরায়েল অংশ নেওয়ায় ইউরোভিশন থেকে ৪ দেশের নাম প্রত্যাহার * গাজা পুনর্গঠনে ১০ কোটি ডলার দেবে চীন
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
আলোকিত ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ইসরাইলপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠী পপুলার ফ্রন্টের প্রধান নেতা ইয়াসের আবু সাবাব নিহত হয়েছেন। তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে তেল আবিবের পক্ষে কাজ করে আসছিলেন। ২০২৩ সালে ইসরাইল গাজায় আগ্রাসন শুরু করলে বেদুইন উপজাতির ইয়াসের আবু সাবাব জেল থেকে পালিয়ে যান। তিনি মাদকসহ বিভিন্ন অপরাধের কারণে কারাগারে বন্দি ছিলেন। এরপর রাফাতে তিনি ইসরাইলিদের ‘দোসর’ হিসেবে হিসেবে কাজ শুরু করেন। তার বিরুদ্ধে ত্রাণ চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আছে। গত বৃহস্পতিবার ইয়াসের আবু সাবাবের মৃত্যুর তথ্য জানায় বিভিন্ন ইসরাইলি গণমাধ্যম।
গত অক্টোবরে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি হওয়ার পর ইয়াসের আবু সাবাবকে হত্যা বা জীবিত গ্রেফতার করতে যোদ্ধাদের নির্দেশ দেয় হামাস। গত জুনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু স্বীকার করেন গাজায় হামাসবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে তারা অস্ত্র দিচ্ছেন। যারমধ্যে ইয়াসেরের পপুলার ফ্রন্ট ছিল। তবে হামাস বিরোধী সংগঠনকে অস্ত্র দেওয়ার নীতির বিস্তারিত জানায়নি তেল আবিব। যুদ্ধবিরতির পরও গাজার রাফা অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখে দখলদার বাহিনী।ইয়াসের সেখানেই তার বাহিনী পরিচালনা করছিলেন।
যুদ্ধবিরতির পরও রাফা এখনো উত্তপ্ত রয়েছে। সেখানে প্রায় প্রতিদিনই গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। গত ১৮ নভেম্বর ইয়াসের তার ফাইটারদের ‘রাফা সন্ত্রাসী মুক্ত’ করার নির্দেশ দেন। মূলত হামাস যোদ্ধাদের সেখান থেকে নির্মূলের কথা বলেছিলেন তিনি।
রাফার বিভিন্ন সুড়ঙ্গে ১০০ থেকে ২০০ হামাস যোদ্ধা আটকা পড়ে আছেন। তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনকে ইসরায়েল হত্যা করেছে।
ইসরাইলি আর্মি রেডিও জানিয়েছে, ইয়াসের আবু সাবাব আহত অবস্থায় দক্ষিণ ইসরাইলের সোরোকা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সেখানে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ তথ্য অস্বীকার করেছে। ইসরায়েলি এ দোসরের মৃত্যু কীভাবে হয়েছে সেটি এখনো স্পষ্ট নয়।
ইসরায়েল অংশ নেওয়ায় ইউরোভিশন থেকে ৪ দেশের নাম প্রত্যাহার : গাজায় গণহত্যার প্রতিবাদে ইসরায়েলকে পপ সঙ্গীতের জনপ্রিয় প্রতিযোগিতা ইউরোভিশন থেকে নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল। তবে সে দাবি মানা হয়নি। ২০২৬ সালের প্রতিযোগিতাতেও বহাল তবিয়তে অংশ নেবে ইসরায়েল। এ বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি স্পেন, আয়ারল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও নেদারল্যান্ডস। আগামী বছরের প্রতিযোগিতা থেকে ওই চার ইউরোপীয় দেশ নিজেদের নাম সরিয়ে নিয়েছে। গতকাল শুক্রবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে এ বিষয়টি জানা গেছে।
ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে ইউরোভিশনের আয়োজকরা গত বৃহস্পতিবার বৈঠক করেন। গাজার যুদ্ধে ইসরায়েলের ভূমিকা ও কয়েকটি সদস্য দেশের বয়কটের হুমকি—এগুলোই ছিল আলোচনার মূল বিষয়বস্তু।
সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের নিরপেক্ষ তদন্তে নিশ্চিত হয়েছে, গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েল। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুসহ দেশটির শীর্ষ নেতারা এই গণহত্যায় ইন্ধন যুগিয়েছেন। তবে ইসরায়েল সরকার বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, আত্মরক্ষার জন্য গাজায় যুদ্ধ করতে বাধ্য হচ্ছে তারা। তেল আবিবের মত, তারা কোনো আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করছে না। গণহত্যার তো প্রশ্নই ওঠে না।
ইউরোভিশনের মূল আয়োজক দ্য ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ) ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে ভোট আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেয়। যার ফলে দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপেরও কোন সুযোগ থাকেনি।
রয়টার্স তবে তারা জানায়, প্রতিযোগিতার নিরপেক্ষ অবস্থানকে আরও সুসংহত করতে ‘সুনির্দিষ্ট পরিবর্তন’ আনা হবে। ইবিইউ’র সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করেন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজাক হারজগ।দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সার জানান, তিনি বয়কটকারী দেশগুলোর আচরণে ‘লজ্জিত’। ইবিইউ’র সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ৫৬।
গাজায় গণহত্যার প্রেক্ষাপটে বেশ কয়েকটি দেশ ইউরোভিশনে ইসরায়েলের অংশগ্রহণ নিয়ে তাদের উদ্বেগ-আপত্তির কথা প্রকাশ করেছে। এই সংঘাতে ৭০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ না করার সিদ্ধান্ত প্রকাশ্যে এলে সবার আগে স্পেন ওই প্রতিযোগিতা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেয়।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আক্রমণ শুরুর পর থেকেই এ বিষয়টির বিরুদ্ধে সোচ্চার স্পেন। ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন ও ফিলিস্তিনকে স্বাধীন দেশের মর্যাদা দেওয়ার মতো উদ্যোগ নিয়েছে মাদ্রিদ। স্পেনের সরকারী গণমাধ্যম আরটিভিই প্রতিযোগিতা থেকে নাম প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়।
১৯৫৬ সাল থেকে শুরু হয় ইউরোভিশন। এই অনুষ্ঠানে বেশ কয়েকটি দেশ থেকে প্রতিযোগীরা এসে সেরা গানের খেতাব জয়ের চেষ্টা চালায়। গতবারের প্রতিযোগিতার দর্শক ছিল ১৬ কোটি ৬০ লাখ।
প্রতিযোগিতার আয়োজক একে রাজনীতি মুক্ত রাখার চেষ্টা করে। তবে সুইজারল্যান্ড ও সুইডেনে আয়োজিত সর্বশেষ দুই আসরে ফিলিস্তিনপন্থিরা বিক্ষোভ করেছেন। মজার বিষয় হলো, ইউক্রেনে হামলা চালানোর দায়ে ২০২২ সালে রাশিয়াকে ইউরোভিশন থেকে নিষিদ্ধ করা হয়।
গাজা পুনর্গঠনে ১০ কোটি ডলার দেবে চীন : গাজা পুনর্গঠন ও মানবিক সংকট লাঘবের জন্য ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে ১০ কোটি ডলার সহায়তা দেবে চীন। গত বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছে ফিলিস্তিন অথরিটি (পিএ)। মানবিক সহায়তার জন্য চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চিঠি পাঠিয়েছেন ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
ফিলিস্তিনি সংবাদ সংস্থা ওয়াফা বলছে, চিঠিতে ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকার সমর্থন এবং পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলি দখলদারিত্ব কমাতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন তিনি। বেইজিংয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অনুদানের ঘোষণা দেন শি।
সিনহুয়া জানায়, ফিলিস্তিনি ইস্যুর একটি সর্বসম্মত, ন্যায়সংগত ও টেকসই সমাধান নিশ্চিত ফ্রান্সের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার ঘোষণা দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি। বৈশ্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তনের মধ্যেও দুই দেশের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি, পারস্পরিক সহায়তা ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের রাজনৈতিক ভিত্তি অটুট রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
গত সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহানের সঙ্গে একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে সহ-সভাপতিত্ব করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। দ্বিরাষ্ট্র সমাধান এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের স্বীকৃতির পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন জোরদার করার লক্ষ্য সে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
