কিডনি সমস্যায় কারণ

প্রকাশ : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আলোকিত ডেস্ক

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ কিডনিজনিত সমস্যায় ভুগছেন। কিডনিতে পাথর, কিডনিতে পানি জমা, কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার মতো সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। আর তাই এই অঙ্গটির সমস্যার কারণ খুঁজছেন গবেষকরা। কেন হয় কিডনির রোগ? সম্প্রতি এর নেপথ্যের কারণ খুঁজে পেলেন তারা।

গবেষকদের মতে, কিডনির ওপর দাপট দেখায় একটি বিশেষ ধরনের স্নেহপদার্থ। এটি শরীরের শক্তি উৎপাদনকারী কোষ মাইটোকনড্রিয়াকে ভেঙে দেয়। ফলে শক্তি তৈরির প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে যায়। কোষকে শক্তিহীন করে এই পদার্থ সরাসরি আঘাত হানে কিডনির ওপর। একে একে নষ্ট করে দেয় কিডনির সুস্থ ও সবল কোষগুলোকে। ফলে যে রোগটি দেয় তা হলো ‘অ্যাকিউট কিডনি ইনজুরি’। এটি হলো সূত্রপাত। কিডনির কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে শেষে কিডনি বিকল হওয়া শুরু হয়।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এবং ইউনিভার্সিটি অফ ইউটা মিলে এই গবেষণা করে। গবেষকরা জানিয়েছেন, এই স্নেহ পদার্থটির নাম ‘সেরামাইড’। এটি সবার শরীরেই থাকে। তবে বাইরের খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার বা জাঙ্ক ফুড বেশি খেলে এর মাত্রা বেড়ে যায়। এই ‘সেরামাইড’ অতিরিক্ত পরিমাণে রক্তে মিশে গেলে সেটি মাইটোকনড্রিয়ার ওপর হামলা করে।

মাইটোকনড্রিয়া হলো শরীরের শক্তি তৈরির ঘর। সেখানে কোষের জন্য শক্তি (এটিপি) তৈরি হয়। কোষের জন্মণ্ডমৃত্যু, ক্যালশিয়াম সঞ্চয় করে রাখা, সংকেত আদানপ্রদানেও এর বড় ভূমিকা আছে। মাইটোকনড্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হলে কোষের শক্তি তৈরির প্রক্রিয়াই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কোষগুলোর সুরক্ষাকবচ নষ্ট হতে থাকে। আর সেই সুযোগেই সেরামাইড আক্রমণ করে কিডনির কোষগুলোকে।

গবেষকদের মতে, সেরামাইডের আধিক্য ঘটলে কিডনির সব মাইটোকনড্রিয়া কোষগুলোকে নষ্ট করে দিতে পারে। ফলে কিডনির সুস্থ কোষগুলো কেজো হয়ে যেতে থাকে। গবেষকরা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করে দেখেছেন, সেরামাইড বেশি হলে কিডনি ফেলিয়োরের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে। আবার সেরামাইডের মাত্রা কমিয়ে ফেললেই, কিডনি সুস্থ হচ্ছে ধীরে ধীরে।

সেরামাইডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে কিডনির অসুখ হওয়ার ঝুঁকি পুরোপুরি কমে যাবে বলেই দাবি করেছেন গবেষকরা। এক্ষেত্রে সেরামাইডের মাত্রা কমাতে হলে বিশেষ ওষুধ খেতে হবে, নাহয় ইঞ্জেকশন নিতে হবে।

কী উপায়ে সেরামাইডকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে, সে চেষ্টাই এখন শুরু হয়েছে। মানুষের ওপর পরীক্ষা করেও দেখা হচ্ছে। গবেষকরা ‘সেরামাইড কন্ট্রোল থেরাপি’ করে দেখছেন সেটি কতোটা কার্যকরী হয়। যত জনের ওপর এই থেরাপি প্রয়োগ করা হয়েছে, তাদের কিডনির রোগ নির্মূল হওয়ার পথে বলেও দাবি করা হয়েছে।

থেরাপিটি করার পরে রোগীর শরীরে কিছু বদল দেখা গেছে। কিডনির ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো মেরামত হয়েছে, কিডনির ক্রনিক রোগে যারা আক্রান্ত তাদের ডায়ালাইসিসের প্রয়োজনীয়তা অনেকটাই কমেছে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে গেছে।

তবে গবেষণাটি আরও বৃহত্তর পর্যায়ে করা উচিত বলেই মনে করছেন গবেষকরা। রোগীর শারীরিক অবস্থা বিচার করেই থেরাপি প্রদান করা হবে। সবার ক্ষেত্রে যদি একই রকম কার্যকরী ফল দেয়, তাহলেই থেরাপিটি কিডনির অসুখ সারাতে প্রয়োগ করা হবে বলেই জানিয়েছেন গবেষকরা।