সাত কলেজ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন, শিক্ষা ভবন অবরোধ

প্রকাশ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর বড় সাত কলেজ ঘিরে সৃষ্ট সংকট আরও জটিল হচ্ছে। এই কলেজগুলো নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের কাঠামোর পক্ষে-বিপক্ষে এখন অন্তত পাঁচটি পক্ষ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্রুত জারির দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর থেকে রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন সাত কলেজের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর স্তরের একদল শিক্ষার্থী। তাঁরা অধ্যাদেশ জারির দাবিতে নানা স্লোগান দিচ্ছেন। এ কর্মসূচির কারণে সচিবালয় অভিমুখে ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। নিয়েছে কড়া অবস্থান। এ কারণে এই পথ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে কলেজের স্বাতন্ত্র বজায় রাখার দাবিতে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ করে আসছেন ঢাকা কলেজসহ একাধিক কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। কলেজ ক্যাম্পাসসহ আশপাশের এলাকার সড়কে বিক্ষোভ করেছেন।

‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’র স্কুলিং মডেলভিত্তিক খসড়া অধ্যাদেশ উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির ভবিষ্যৎকে অনিশ্চিত করে তুলবে দাবি করে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে গত শনিবার বিক্ষোভ করেছেন পাঁচ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর বলেন, শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন। তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল রোববার সকালে ঢাকা কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল থেকে তাঁরা স্কুলিং মডেল বাতিল এবং উচ্চমাধ্যমিকের স্বতন্ত্র কাঠামো বহাল রাখার দাবি জানান। পরে এই পাঁচ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে মিছিল নিয়ে শাহবাগে এসে অবরোধ শুরু করেন। প্রস্তাবিত কাঠামোর বিরোধিতা করে আসছেন কলেজগুলোর শিক্ষকেরা। ইডেন মহিলা কলেজকে কেবল নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখাসহ পাঁচ দফা দাবি জানিয়ে আসছেন এই কলেজের ছাত্রীদের অনেকেই। এর মধ্যে গত শনিবার সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশ প্রস্তাবিত কাঠামোর (স্কুলিং) বিরোধিতায় নামেন। সব মিলিয়ে সাত কলেজ নিয়ে সৃষ্ট সংকট বেশ জটিল রূপ নিয়েছে।

এ রকম পরিস্থিতিতে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ কবে হবে, তা পরিষ্কার করে বলতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে কিছুদিন আগে মন্ত্রণালয় বলেছিল, বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আগে থেকেই ঢাকার এই সাতটি সরকারি কলেজে সংকট বিরাজ করছে। ২০১৭ সালে যথেষ্ট প্রস্তুতি ছাড়াই কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। সরকারি এসব কলেজ হলো—ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, সরকারি বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ।

এর মধ্যে ইডেন ও তিতুমীরে শুধু স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। অন্য পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর তিন স্তরেই পাঠদান করা হয়। এ কলেজগুলোয় শিক্ষার্থী দেড় লাখের মতো। চলতি শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তিযোগ্য আসন ১১ হাজারের মতো। সাত কলেজে মোট শিক্ষক হাজারের বেশি। আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে তাঁদের ক্লাস শুরু হচ্ছে না।

গত জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পৃথক করার ঘোষণা দেয় কর্তৃপক্ষ। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় চূড়ান্ত হওয়ার আগেই অধিভুক্তি বাতিল হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়। এখন ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষকে প্রশাসক করে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থায় কার্যক্রম চলছে।

সম্প্রতি সাত কলেজকে একীভূত করে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সরকারি পরিকল্পনা আলোচনায় আসে। কিন্তু এর কাঠামো নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আন্দোলন চলছে।