সুসংবাদ প্রতিদিন

বড়াইগ্রামে কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক হোসেন, বড়াইগ্রাম (নাটোর)

গাছের ডালে থোকায় থোকায় ঝুলছে পাকা কমলা। বিভিন্ন আকারের রসালো কমলার ভারে নুয়ে পড়া ডালগুলো ভেঙে পড়া রোধে খুঁটি দিয়ে উঁচু করে রাখা হয়েছে। বাগানে অজস্র কমলা ঝুলে থাকার এমন দৃশ্যে চাষি আব্দুর রউফের চোখে-মুখে দেখা যাচ্ছে খুশির ঝিলিক। সমতলে এমন ব্যতিক্রমী ফলের চাষ তার জীবনে সচ্ছলতার ছোঁয়া এনে দিয়েছে। সফল কমলাচাষি আব্দুর রউফ নাটোরের বড়াইগ্রামের গোপালপুর গ্রামে তার নিজ বাড়িসংলগ্ন জমিতেই এ বাগান গড়ে তুলেছেন।

জানা যায়, কৃষক আব্দুর রউফ প্রথমে ওই জমিতে পেয়ারার চাষ করেছিলেন। কিন্তু রোগবালাই, খারাপ আবহাওয়া আর ভালো দাম না পাওয়ায় ফলন ভালো হওয়া সত্ত্বেও ৮ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হয় তাকে। এতে তিনি একেবারে ভেঙে পড়েন। অনেকেই কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশা নিতে পরামর্শ দেন তাকে। তবে তাতে হাল ছাড়েননি তিনি। লোকসান মাথায় নিয়েই তিনি উপজেলা কৃষি বিভাগের স্মরণাপন্ন হন।

কৃষি কর্মকর্তরা মাটি পরীক্ষা, পরিবেশ পর্যবেক্ষণ এবং অতীত কৃষি অভিজ্ঞতা দেখে তাকে কমলা চাষের পরামর্শ দেন। যা তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। পরামর্শ অনুযায়ী তিনি ধারদেনা করে নিজের তিন বিঘা জমি প্রস্তুত করেন। সে জমিতে কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে দেয়া চায়না জাতের ১২০টি কমলার চারা রোপণ করেন তিনি। এ সময় তিনি কমলা চাষ বিষয়ে কৃষি বিভাগের সহায়তায় নওগাঁয় প্রশিক্ষণ নেন। কমলা চাষি আব্দুর রউফ জানান, তিনি ২০২০ সালে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা তারিক বিন আমিনের মাধ্যমে কমলার চারা রোপণ করেন। তার পরামর্শ অনুযায়ী সার প্রয়োগ, সেচ, পোকামাকড় দমনসহ অন্যান্য কাজ করেছেন। চারা রোপণের দুই বছরের মাথায় গাছে ফুল ফোটে, কিছু গাছে কমলাও ধরে। তবে গত দুই বছর ধরে তিনি পুরোদমে কমলা বিক্রি করে আসছেন। তিনি জানান, প্রতি মৌসুমে একটি গাছ থেকে কমপক্ষে দুই মণ কমলা পাওয়া যায়। সচরাচর তিনি বনপাড়া ফল আড়তে এসব কমলা বিক্রি করেন।

এছাড়া পাইকার ব্যবসায়ীরা বাগানে এসেও কমলা কিনে নিয়ে যান। প্রতি মণ কমলা তিনি ৫০০০-৫৫০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারেন। চলতি মৌসুমে তার বাগানের উৎপাদিত কমলা কমপক্ষে ১২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। বাগানের পরিচর্যাসহ শ্রমিকর মজুরী, পরিবহন খরচ, সেচ, সার ও কীটনাশকের মূল্য বাবদ প্রায় কমপক্ষে দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। মৌসুম শেষে খরচ বাদে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা লাভ থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব আল মারুফ জানান, এ এলাকার মাটি বেলে দোঁ-আশ ও হাল্কা অমøীয় হওয়ায় তা কমলা চাষের উপযোগী। আব্দুর রউফের সফলতাই প্রমাণ করে যে, এ অঞ্চলে কমলা চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। এখন তার দেখাদেখি অন্যান্য কৃষকরাও কমলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।