ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৪০০ পার সংক্রমণ লাখের কাছাকাছি

প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সারাদেশে এডিস মশার প্রকোপ বেড়েছে। আর এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দিনে দিনে মৃত্যু বাড়ছে। চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪০০ ছাড়িয়ে গেছে। আর আক্রান্ত এক লাখের কাছাকাছি। গত বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন। এ বছর ডিসেম্বর মাসের অর্ধকে সময় না যেতেই সংক্রমণের সংখ্যা গত বছরের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু একসময় কেবল বর্ষার রোগ ছিল, তা এখন বছরজুড়ে হচ্ছে। তাই ডেঙ্গু মোকাবিলায় মশা নিধনে পরিবর্তন আনতে হবে। ডেঙ্গু বিস্তার রোধে কেবল মশা নিধন নয়, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও বড় ধরনের পরিবর্তন দরকার। ডেঙ্গুর মতো রোগের সময়ভিত্তিক এবং প্রমাণভিত্তিক প্রবণতা দেখা জরুরি। এটা করতে পারলে রোগ মোকাবিলা করা সহজ হয়। সরকারের রোগ গবেষণার কাজে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর এ দায়িত্ব পালন করার কথা। সরকারি স্তরে এ নিয়ে আদৌ কি ভাবনা আছে?

জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজির আহমেদ বলছেন, বছরের শেষ সময়ে এসে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি হওয়ার যে প্রবণতা, তা জনস্বাস্থ্যের সমস্যায় নতুন বিষয় যুক্ত করেছে। এখন ডেঙ্গু মোকাবিলায় প্রথাগত ভাবনাকে বাদ দিতে হবে। ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যুর সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে এ রোগ মোকাবিলার কৌশল পাল্টাতে হবে। কিন্তু সরকারি স্তরে সেই ভাবনা একেবারে অনুপস্থিত।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান ৩ জন আর এ সময় নতুন করে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৪১১ জন। বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুবিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৬৯ জন। দুই সিটির বাইরে চট্টগ্রাম বিভাগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা ৬১। সব মিলিয়ে এবার এ পর্যন্ত ডেঙ্গু নিয়ে ৯৯ হাজার ৪৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত এডিস মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪০৪ জন। চলতি বছর গত নভেম্বর মাসে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যু ও সংক্রমণ হয়। গত বছর নভেম্বরে সর্বোচ্চ মৃত্যু হলেও সর্বোচ্চ সংক্রমণ হয়েছিল অক্টোবর মাসে। তবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সংক্রমণ অনেক কমে গিয়েছিল। তবে এ বছর এই মাস, অর্থাৎ ডিসেম্বরে সংক্রমণ গত বছরের মতো দ্রুত না- ও কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, নভেম্বর মাসে যে বৃষ্টি হয়েছিল, তার কারণে এ মাসের অন্তত মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত প্রাপ্তবয়স্ক এডিস মশা টিকে থাকবে। এর পাশাপাশি মশা নিধন ও পরিস্কার- পরিচ্ছন্নতার কাজে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো সক্রিয় নয়। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ডেঙ্গুর আক্রমণ বেশি পরিমাণে কমার জন্য আগামী বছরের জানুয়ারির শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। ২০০০ সালে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ওই বছর ৫ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। এর মধ্যে মারা যান ৯৩ জন। ঘটনাটি সাধারণ মানুষের কাছে নতুন ছিল। ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত ও মারা যান ২০২৩ সালে। সে বছর আক্রান্ত হয়েছিলেন তিন লাখের বেশি মানুষ, মারা যান ১ হাজার ৭০৫ জন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সদ্য বিদায়ী পরিচালক অধ্যাপক হালিমুর রশীদ বলেন, ‘ডেঙ্গু বিস্তারের সময় যে পাল্টাচ্ছে, তা আমরা দেখছি। রোগের বিস্তার আসলে মশার বিস্তার। তাই মশার বিস্তার রোধ না করতে পারলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। প্রথাগতভাবে যেভাবে মশকনিধন করছে স্থানীয় সরকার, সেখানে পরিবর্তন আনতে হবে।’