কক্সবাজারে বাড়ছে অপরাধ ডোবায় মিলছে লাশ

* ১১ মাসে জেলায় ১৩২ খুন, ৯৪ ধর্ষণ, ছিনতাই ও অপহরণ বাড়ছে * ১১ মাসে জেলায় খুন, ছিনতাই, অপহরণ ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪৫২৯ মামলা * অপরাধীদের বড় অংশ উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা * হঠাৎ বেড়েছে গরু চুরি

প্রকাশ : ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার অফিস

কক্সবাজার জেলাজুড়ে খুন, অপহরণ, গুপ্ত হত্যা, চুরি, ছিনতাই সহ জ্যামিতিকহারে বাড়ছে অপরাধ। একসাথে হঠাৎ বেড়েই চলছে গরু চুরির ঘটনা। এছাড়া খাল, নদী ও ডোবায় মিলছে লাশ। বৃহস্পতিবার কক্সবাজার সদরের কাছাকাছি এলাকা চৌফলদন্ডি ব্রিজ লাগোয়া পল্লন খালী খালে ভেসে আসা একজনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে লাশের পরিচয় মিলেছে।

পুলিশের তথ্য সূত্র বলছে, গেল ১১ মাসে জেলায় ১৩২ খুন, ৯৪টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ছিনতাই ও অপহরণ। ১১ মাসে জেলায় খুন, ছিনতাই, অপহরণ ও ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে ৪৫২৯টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশের তথ্য সূত্র আরও বলছে, অপরাধের বড় অংশে উখিয়া-টেকনাফে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা জড়িত।

কক্সবাজার যে শহরটা পরিচিত ছিল পর্যটনের স্বর্গরাজ্য হিসেবে। আজ সেখানে রাত নামলেই নেমে আসে আতঙ্ক। সমুদ্রের গর্জনকে ছাপিয়ে যাচ্ছে গুলির শব্দ।

গত মঙ্গলবার রাত ১০ বেজে ১৫ মিনিট। কক্সবাজার শহরের বাইপাস সড়কের উত্তরণ আবাসিক এলাকায় মোটরসাইকেল যোগে এসে যুবদলের সাইফুল ও ফারুকে গুলি করে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা। অভিযোগ পূর্ব শত্রুতার জেরে এই ঘটনা ঘটে। এরপর জেলাজুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

অন্যদিকে গত কয়েকদিন আগে রামু উপজেলার রশিদ নগর এলাকা থেকে ৪টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। রামু থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাম্মদ ফরিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, চুরির স্থানের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায় এক যুবকের চেহারা দেখা যাচ্ছে। তাকে শনাক্ত করতে পুলিশ কাজ করছে।

অপর একটি সূত্র বলছে, এছাড়া উখিয়া, টেকনাফ, চকরিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে আরও কয়েকটি গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। আবার অনেক এলাকায় গরু চুরির আতংকে স্থানীয় লোকজন রাতজেগে পাহারা দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগীসহ নানা সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের অলিগিলিতে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বাসটার্মিনাল পুলিশ বক্স ও সিএনজি পাম্প, কক্সবাজার কারাগার, স্টেডিয়ামের সামনে ও মোহাজের পাড়ার মোড়, সদর হাসপাতালের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশের মোড়, জেলা শিক্ষা অফিসের সামনে (সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়), গোলদিঘীর পাড়ের দক্ষিণ মোড়, অগগমেধা ক্যাং (বৌদ্ধ মন্দির) সড়ক, বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের উত্তর মোড়, বড় বাজার সামনে মোড় (বাজারঘাটা), ভোলাবাবুর পেট্রলপাম্প, লালদিঘীর পূর্বপাড় মসজিদের সামনে, পৌরসভার সামনে, গুমগাছ তলা (শ্যামলী কাউন্টারের পাশে), বিমানবন্দর গেটের সামনে, ঝাউতলা হোটেল রেনেসার সামনের যাত্রী ছাউনিতে, হলিডের মোড়ের যাত্রী ছাউনির সামনে ও পিটিআই স্কুলের সামনের মোড়ে (পিডিবির সামনে)। সূত্রটি দাবি, বিশেষ করে ফজরের নামাজের পর ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে।

# খালে ভাসমান হোটেল কর্মচারীর লাশ উদ্ধার

কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডি ব্রিজ লাগোয়া পল্লন খালী খালে ভেসে আসা ‘আবাসিক হোটেলের এক কর্মচারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয়দের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে লাশটি উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন এস আই সঞ্জীব কুমার পাল।

নিহত হলেন, ঈদগাঁও উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের নাপিত খালী ডুলা ফকির রাস্তার মাথা এলাকার মৃত ইউসুফ আলীর পুত্র মোহাম্মদ কালুর (৪২)। অজ্ঞাত পরিচয়ে উদ্ধারের পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে নিহতের ভাই সাহাব উদ্দিন লাশটি সনাক্ত করেন। নিহত কালু কক্সবাজার শহরের একটি হোটেলের কর্মচারী ছিলেন বলে জানান পুলিশের এই এসআই।

সাহাব উদ্দিন জানান, তার ভাই মোহাম্মদ কালু কক্সবাজার শহরের লালদীঘির পাড়ের একটি আবাসিক হোটেলে চাকরি করত। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কোনো কিছুই ধারণা করতে পারছেন না। কারও সঙ্গে শত্রুতা আছে এমন তথ্যও নেই।

নিহত মোহাম্মদ কালুর স্ত্রী শাহানা জানান, বুধবার সকাল ১১টায় শেষবারের মতো কথা হয়। তখনও তিনি ছিলেন স্বাভাবিক। সকালে শুনতে পাই উনার লাশ খাল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। কি হতে কি হয়ে গেল বুঝতে পারছি না। চাকরির সুবাদে কক্সবাজার শহরেই অবস্থান করছিলেন তিনি। তবে কেন খুরুস্কুলে লাশ পাওয়া গেল, এ বিষয়ে তিনি কিছু ধারণা করতে পারছেন না বলে জানান। বিষয়টি কালু যে হোটেলে চাকরি করত সে হোটেলের মালিক পক্ষ জানতে পারে, কখন কালু সেখান থেকে বেরিয়েছে, কি বলে বেরিয়েছে বা বেরিয়েছে কি না?

তবে কালু যে হোটেলে চাকরি করত সেই হোটেলেটির নাম বলতে চাননি তার স্ত্রী।

খুরুস্কুল ইউনিয়ন পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার জানে আলম জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে খুরুস্কুল চৌফলদন্ডি ব্রিজ লাগোয়া পল্লনখালী খালে লাশটি ভেসে আসে। লাশের পরনে ছিল লাল ও কালু রংয়ের হুডি আর কালো প্যান্ট। স্থানীয়রা জাতীয় সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দিলে সদর থানার এস আই সঞ্জীব কুমার পালের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল লাশটি উদ্ধার করে সদর হাসপাতালের মর্গে নিয় আসে।

এস আই সঞ্জীব কুমার পাল জানান, মৃত্যুর কারণ এখনও জানা যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে জানা যাবে মৃত্যুর কারণ। তবে লাশের শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই বলে তিনি জানান।

সদ্য যোগদানকারী কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এএনএম সাজেদুর রহমান মতবিনিময়কালে সাংবাদিকদের বলেন, ভৌগোলিকভাবে কক্সবাজার একটি বৈচিত্র্যময় জেলা। মানবিক কারণে এখানে এক মিলিয়নের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় পেয়েছেন। তাদের বিষয়ে এপিবিএন’র ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে আলাপ হয়েছে। পর্যটন এলাকা হিসেবে এখানে নানা ধরনের লোকজন আসেন। সবকিছু মাথায় রেখেই আমরা নিজেদের সক্ষমতা তৈরি করছি।

তিনি আরও বলেন, যেখানে এসপি নতুন- ওসি নতুন সেখানে অপরাধীরা একটু সুযোগ নেয়। নতুন হিসেবে আমরা কাউকে চিনি না, তিন মাস সময় দেন সব অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা হবে।