গুমের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ ২৩ ডিসেম্বর
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের শাসনামলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুম করে নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১০ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশ আগামী ২৩ ডিসেম্বর। আসামিপক্ষ থেকে অব্যাহতির আবেদন শুনানি করতে সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশের দিন পিছিয়ে ২৩ ডিসেম্বর করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে ৪টি অভিযোগ এনে এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অন্যদিকে, এই মামলায় আসামিদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন তাদের আইনজীবীরা।
এই মামলার ১৭ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহাবুব আলম এবং কে এম আজাদ; কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে); লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান, সাইফুল ইসলাম সুমন ও মো. সারওয়ার বিন কাশেম। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিকসহ এ মামলার সাত আসামি পলাতক রয়েছেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার নিরাপত্তা উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী ও ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচ মহাপরিচালকসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে গত ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর গত ১১ অক্টোবর এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ জন কর্মরত সেনা কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেওয়ার কথা জানায় সেনাবাহিনী। আর্মি অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সেনাবাহিনীর অ্যাডজুটান্ট জেনারেল মেজর জেনারেল মো. হাকিমুজ্জামান বলেন, দু’টি মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে ২৫ জনই সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পর্যায়ের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। তাদের মধ্যে ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত, একজন এলপিআরে গেছেন এবং বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ১৫ জন।
পরবর্তীতে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করে গত ১২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের উপসচিব মো. হাফিজ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪১(১) এর ক্ষমতাবলে এবং দি প্রিজন অ্যাক্ট-এর ধারা ৩ এর বি অনুসারে ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো’। গ্রেপ্তার সেনা কর্মকর্তাদের পরবর্তীতে এই কারাগারে রাখা হয়।
বিজিবির রেদোয়ানুলসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ ২৪ ডিসেম্বর : ২০২৪ সালে জুলাই আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর রামপুরায় গুলি করে ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিজিবি কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলামসহ চারজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে আদেশের জন্য আগামি ২৪ ডিসেম্বর দিন ঠিক করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানি নিয়ে গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ সংক্রান্ত বিষয়ে আদেশের নতুন দিন ঠিক করেন। প্যানেলের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
আদালতে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মো. শাইখ মাহাদী। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও প্রসিকিউটর তারেক আব্দুল্লাহ। অন্যদিকে, আসামি পক্ষের শুনানিতে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার হামিদুল মিজবাহ।
আসামিদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানকালে রামপুরায় গুলি করে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ মামলায় পলাতক দুই আসামির পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ করা হয়েছে। গতকাল এ মামলায় কারাগারে থাকা লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুলসহ গ্রেফতার দুই সেনা কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে সকাল ১০টার দিকে তাদের প্রিজন ভ্যানে করে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের বিশেষ কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
অভ্যুত্থানের সময় রাজধানীর রামপুরা ও বনশ্রী এলাকায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় রেদোয়ানুল ছাড়াও আসামি করা হয়েছে বিজিবির সাবেক কর্মকর্তা মেজর রাফাত-বিন-আলম, পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) রাশেদুল ইসলাম ও সাবেক ওসি মশিউর রহমানকে। তাদের মধ্যে রেদোয়ানুল ও রাফাত এখন সেনা হেফাজতে আছেন। অন্য দুজন পলাতক।
সেতুর টোল আদায়ে অনিয়ম : শেখ হাসিনা-কাদের-আমুসহ ১৭ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কার্যাদেশে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৭ জনের বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পর গতকাল রোববার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের অবকাশকালীন বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন এ আদেশ দেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানজীর আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, যাদের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তারা হলেন—সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, সাবেক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক প্রতিমন্ত্রী (অর্থ ও পরিকল্পনা) এম এ মান্নান, সাবেক সচিব এম এ এন ছিদ্দিক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফারুক জলিল, সাবেক উপ-সচিব মোহাম্মদ শফিকুল করিম, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ফিরোজ ইকবাল, সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আফতাব হোসেন খান, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সালাম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনীর উজ জামান চৌধুরী, পরিচালক সেলিনা চৌধুরী এবং পরিচালক ইকরাম ইকবাল।
দুদকের পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সংস্থার সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান আদালতে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, একক উৎসভিত্তিক দরপত্রের মাধ্যমে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সিস্টেম (সিএনএস) লিমিটেডকে পাঁচ বছরের জন্য মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটি আদায়কৃত টোলের ১৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে (ভ্যাট ও আয়কর ব্যতীত) সার্ভিস চার্জ পায়। এই চুক্তির আওতায় সিএনএস লিমিটেড মোট ৪৮৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার টাকা বিল গ্রহণ করে। দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এর ফলে সরকারের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০৯ কোটি ৪২ লাখ ৪৫ হাজার ৮৯০ টাকা। সংস্থাটির দাবি, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণার মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করেছেন। আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, মামলার এজাহারনামীয় আসামিরা দেশত্যাগ করলে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থেই তাদের বিদেশ গমন বন্ধ করা প্রয়োজন। এর আগে, গত ১২ অক্টোবর দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১-এ শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয়। মামলার বাদী ছিলেন দুদকের সহকারী পরিচালক তানজিল হাসান। মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৬ সালে মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল আদায়ের জন্য বিদ্যমান দরপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল করে একক উৎসভিত্তিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ না দিয়ে শুধু সিএনএস লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনা করে পাঁচ বছরের চুক্তি সম্পাদন করা হয়।
