আওয়ামীপন্থিদের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসন ভবনের সব কার্যালয়ে তালা
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আওয়ামীপন্থি ছয়জন ডিনের পদত্যাগ দাবিতে প্রশাসন ভবনের সব দপ্তরে তালা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে থাকা উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, প্রক্টর, রেজিস্ট্রারসহ সব দপ্তরের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জরুরি বৈঠকে বসবেন উপাচার্য।
কার্যালয় তালাবদ্ধ করার ঘটনায় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিনের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও ছাত্রশিবিরের নেতাদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ও আইন অনুষদের ডিনদের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন তারা।
আওয়ামীপন্থি ডিনদের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও প্রশাসন সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাহউদ্দিন আম্মার, সিনেট সদস্য আকিল বিন তালেব, রাকসুর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক ইসলাম, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাকিবুল হাসান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মো. গোলাম মোস্তফা, ইরফরমেশন সায়েন্স ও লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী অনিক হাসান আলভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে চলতি মাসের ১৭ তারিখে চলমান মেয়াদের ডিনদের নির্বাচনি মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে প্রশাসন তাদের মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দেন উপাচার্য। এতে আওয়ামীপন্থি ছয়জনের পদত্যাগের দাবিতে আল্টিমেটাম দেন রাকসু জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার। তাদের এই দাবি আরও জোরদার করা হয় জুলাইয়ের সাহসী যোদ্ধা শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পরে। গত কয়েকদিনের প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আওয়ামীপন্থি শিক্ষকদের শাস্তির দাবিতে আল্টিমেটাম দেওয়া হয়। হুঁশিয়ারি মোতবেক আজ দুপুর ১টার দিকে তিন ডিনের কার্যালয়ে তালা দেওয়া হয় এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার ক্লাস নিচ্ছেন জানতে পেরে তার বিভাগেও যান তারা। পরে বিকেলে ডিন ও শিক্ষকদের অপসারণের দাবিতে প্রশাসন ভবনের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যসহ একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ে তালা দেয় রাকসু প্রতিনিধি ও একদল শিক্ষার্থী। পরে সেখানে উপস্থিত হন শাখা ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা।
এ সময় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খানের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রশাসন ভবনে উপাচার্যের সম্মেলনকক্ষে তাদের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আলোচনা চলে। এতে তাদের সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জরুরি সভায় বসে সিদ্ধান্ত জানানোর আশ্বাস দেওয়া হয়।
কার্যালয়ে তালা লাগানো আওয়ামী লীগপন্থি তিনজন ডিন হলেন- আইন অনুষদের অধ্যাপক আবু নাসের মো. ওয়াহিদ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধ্যাপক এ এস এম কামরুজ্জামান এবং সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধ্যাপক এস এম এক্রাম উল্ল্যাহ। অন্য তিন ডিন হলেন- বিজ্ঞান অনুষদের নাসিমা আখতার, প্রকৌশল অনুষদের বিমল কুমার প্রামাণিক এবং ভূবিজ্ঞান অনুষদের এ এইচ এম সেলিম রেজা।
এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘ডিনদের মেয়াদ শেষ হলেও সমাবর্তন, সামনে ভর্তি পরীক্ষাসহ নানা কারণে তাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। সামনে ভর্তি পরীক্ষা রেখে এখন তাদের অব্যাহতি দেওয়া অনেক জটিলতা তৈরি করবে। উপাচার্য মহোদয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন।’
৬ ডিনের পদত্যাগপত্র লিখে আনলেন আম্মার: গতকাল রোববার দুপুরে রাকসু নেতা আম্মার ছয় ডিনের পদত্যাগপত্র লিখে আনেন। তার পদত্যাগপত্রে উপাচার্য বরাবর লেখা হয়েছে যে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং পরবর্তী রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় তাদের (ডিনদের) ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময়ের কিছু সিদ্ধান্ত, বক্তব্য এবং অবস্থান শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, অধিকার ও স্বার্থের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ছিল। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। পত্রে আরও বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক স্বার্থ এবং শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তারা (ডিনরা) স্বেচ্ছায় পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ডিনদের ফোন করার পর আম্মার বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগগুলোয় আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের খোঁজ করতে যান। ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগে তিনি সাবেক উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার এবং সাবেক উপ-উপাচার্য মো. সুলতান-উল-ইসলামকে খুঁজতে যান, কিন্তু না পেয়ে বিভাগের সভাপতির কাছে যান। তাকে জানানো হয়, এই দুই শিক্ষক বিভাগে নেই। এরপর তিনি সিরাজী ভবনের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে সহকারী অধ্যাপক এন এ এম ফয়সাল আহমেদকে খুঁজতে যান। তিনিও তখন বিভাগে উপস্থিত ছিলেন না।
রাকসুর জিএস সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘ডিনদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ক্যাম্পাসে নেই। ফোনে তারা জানিয়েছেন, তারা আর এই দায়িত্বে থাকতে চান না। ছয়টি অনুষদের ডিনদের কেউ অসুস্থ, কেউ চিকিৎসা নিচ্ছেন অথবা কেউ বৈঠকে থাকায় ক্যাম্পাসে উপস্থিত ছিলেন না। এ কারণে তাদের কার্যালয়ে তালা দেওয়ার পথে যাইনি। শিক্ষার্থীদের প্রতিটি মিনিট গুরুত্বপূর্ণ। উপাচার্য দ্রুত নতুন ডিন নিয়োগ দিলে সেটিই ভালো হবে। তালা দেওয়ার সংস্কৃতি আমরা আর চাই না; বরং সরাসরি পদক্ষেপ নিতে চাই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মো. মাহবুবর রহমান বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আমরা চাই না কোনো শিক্ষক লাঞ্ছিত হোক।
