লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতার ঘরে আগুন

নাশকতার ‘বিশ্বাসযোগ্য’ প্রমাণ পায়নি পুলিশ

প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

লক্ষ্মীপুর সদর থানায় বিএনপি নেতার ঘরে আগুন লাগার ঘটনায় গতকাল রোববার দুপুর পর্যন্ত মামলা হয়নি। পুলিশ বলছে, নাশকতা থেকে এ ঘটনা ঘটেছে এমন বিশ্বস্ত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একই কথা বলছে ফায়ার সার্ভিসও। তবে বিএনপি নেতার দাবি, দরজা বাইরে থেকে তালা লাগানো লাগানো ছিল। এ কারণে তিনি দরজা দিয়ে বের হতে পারেননি।

গত শনিবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) হোসাইন মোহাম্মদ রায়হান কাজেমীর সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, আগুনের ঘটনায় পরিবারের সদস্যদের বরাত দিয়ে বলা হয় মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুর্বৃত্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনার সঙ্গে কোনো দুর্বৃত্ত কিংবা কোনো ‘মবের’ সংযোগের বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

এ ঘটনার কোনো প্রমাণ থাকলে সাংবাদিকদের পুলিশের কাছে সরবরাহ করার অনুরোধ করেছে পুলিশ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে আগুন লাগা বা লাগানোর বিষয়টি নিবিড়ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তে ঘরের দরজায় তালা দিয়ে আগুন লাগানোর তথ্য পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত জানানো হবে।’

গত শুক্রবার গভীর রাতে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরমনসা গ্রামের সূতারগোপ্তা এলাকায় দরজায় তালা লাগিয়ে ও পেট্রল ঢেলে বেলাল হোসেন নামের এক বিএনপি নেতার ঘরে আগুন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

এতে আগুনে পুড়ে মারা যায় তাঁর সাত বছর বয়সী মেয়ে আয়েশা আক্তার। দগ্ধ হয়েছেন বেলাল হোসেন (৫০) ও তাঁর আরও দুই মেয়ে বীথি আক্তার (১৭) এবং স্মৃতি আক্তার (১৪)। এর মধ্যে বীথি আক্তার ও স্মৃতি আক্তারকে চিকিৎসার জন্য জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। বেলালকে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আগুনে বেলাল হোসেনের ঘরটিও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

বেলাল হোসেন লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক এবং সূতারগোপ্তা বাজারের সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ী। গত শনিবার বিকালে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি বলেন, ‘ঘরের দুই দরজায় তালাবদ্ধ ছিল। এ জন্য দুই মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে আমি নিজে ঘরের টিনের বেড়া ফাঁকা করে বের হয়েছি। এ সময় ছোট মেয়ে তাকে আনার জন্য চিৎকার করছিল। কিন্তু আমি আগুনের তীব্রতা আর ধোঁয়ায় কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না। একপর্যায়ে আগুনের এত তীব্রতা বেড়ে গেলে ঘরে ঢুকতে পারিনি।’

তবে বেলালের এ বর্ণনার আলামত পায়নি ফায়ার সার্ভিস। জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার রণজিৎ কুমার দাস বলেন, ‘খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত অবস্থায় এক শিশুকে উদ্ধার করা হয়। দরজায় তালা লাগিয়ে আগুন দেওয়ার বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত নই। ঘটনাস্থলে এমন কোনো আলামত পাইনি।’

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওয়াহিদ পারভেজ বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মামলা হয়নি। বসতঘরের দুই দরজায় তালা দেওয়ার বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। পুলিশের একাধিক টিম তদন্তে কাজ করছে।’