হাসিনাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ
প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের শাসনামলে টাস্কফোর্স ফর ইন্টারোগেশন সেলে (টিএফআই সেল) গুম করে নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ১০ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। আসামিদের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ এনে এই মামলায় প্রসিকিউসন পক্ষে অভিযোগ গঠনের প্রার্থনা করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। অন্যদিকে, এই মামলায় আসামিদের অভিযোগ থেকে অব্যহতি চেয়ে আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আসামিদের অব্যাহতির আবেদন খারিজ করে গতকাল বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ এই আদেশ দেন। সেই সঙ্গে এই মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ২১ জানুয়ারী দিন ধার্য করা হয়েছে।
এই মামলার ১৭ আসামির মধ্যে গ্রেফতার ১০ সেনা কর্মকর্তা হলেন: ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, মো. কামরুল হাসান, মো. মাহাবুব আলম এবং কে এম আজাদ; কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন ও আনোয়ার লতিফ খান (অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে); লে. কর্নেল মো. মশিউর রহমান, সাইফুল ইসলাম সুমন ও মো. সারওয়ার বিন কাশেম।
এই মামলায় পলাতক সাত আসামি হলেন- ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ ও র্যাবের সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. খায়রুল ইসলাম।
জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে শতাধিক গুম-খুনের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানি ৪ জানুয়ারি : গুম করে শতাধিক মানুষ খুনের মামলায় মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি আগামী ৪ জানুয়ারি। এই মামলায় জিয়াউল আহসানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি দিন ধার্য করে গতকাল আদেশ দেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর এই মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিলের পর তা উপস্থাপন করে তিনটি অভিযোগ আমলে নেওয়ার আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। এরপর ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নেওয়ার আদেশ দিয়ে ২১ ডিসেম্বর জিয়াউল আহসানকে হাজিরের নির্দেশ দেন।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানকে গত বছরের আগস্টের মাঝামাঝি রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক ছিলেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।
চানখাঁরপুলে হত্যা মামলার সাক্ষীর নিরাপত্তায় পুলিশ নিয়োগের নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের : চব্বিশের জুলাই আগস্টের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সাক্ষী মো. মহিবুল হকের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিন মাসের জন্য একজন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ মামলার শুনানিতে প্রসিকিউটর তারেক আব্দুল্লাহ ট্রাইব্যুনালকে বলেন, চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় মহিবুল হকের ওপর নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে হামলা করে। বর্তমানে তিনি লোহাগড়ার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ভুক্তভোগী ট্রাইব্যুনালে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন।
এরপর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ চানখাঁরপুল এলাকায় শহীদ মোহাম্মদ ইশমামুল হকের বড় ভাই মামলার সাক্ষী মো. মহিবুল হকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তিন মাসের জন্য একজন অস্ত্রধারী পুলিশ সদস্য নিয়োগের নির্দেশ দেন।
চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় গত শুক্রবার মহিবুল হকের ওপর হামলার ঘটনায় স্থানীয় থানায় একটি মামলা হয়েছে।
