ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

কৃষকরা সফলভাবে আলু রপ্তানি করছেন

কৃষকরা সফলভাবে আলু রপ্তানি করছেন

দেশের উত্তরাঞ্চল রংপুর, যা এক সময় মঙ্গাপীড়িত বলে পরিচিত ছিল। সেখানে এখন উৎপাদিত হয় বাংলাদেশের কোটি টনের এক-চতুর্থাংশ আলু। শুধু তাই নয়, রংপুরের কৃষক উত্তম চাষাবাদ পদ্ধতি অনুসরণ করে উৎকৃষ্ট আলু উৎপাদন করে রপ্তানি বাজারে সম্পৃক্ত। এতে করে তারা অতি উৎপাদনের ক্ষতি পুষিয়ে তাদের আয় বৃদ্ধি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। টানা তৃতীয় বারের মতো এবারও চারটি উৎপাদনকারী সংগঠন একত্রিত হয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দে গত শুক্রবার এ বছরের আলু রপ্তানি উৎসব পালন করেছে। প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম এর উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম, বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএডিসি পরিচালক (বীজ) সদস্য মো. মোস্তাফিজুর রহান. এফএও এমএম আই জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মো. মাহমুদ হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের অতিরিক্ত পরিচালক এমদাদ হোসেন শেখ। এতে বক্তব্য দেন মিঠাপুকুর ইপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমাতুজ জোহরা, স্বত্বাধিকার কম্বাইন্ড ট্রেড ইন্টরন্যাশনাল মো. শরীফুর রহমান, এফএও মো. শামসুল আলম, আলু চাষি মো. আজিজার রহমান, সারা বাংলা কৃষক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মো. ওবায়দুল হক। উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ওবায়দুর রহমান মণ্ডল, বিনার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আলী, কৃষি বিপণনের উপ-পরিচালক আনোয়ারুল হক, মিঠাপুকুর কৃষি কর্মকর্তা সাইফুল আবেদীন, বরেন্দ্র নির্বাহী প্রকৌশলী হারুন আর রশিদ প্রমুখ। সরাসরি কৃষকের মাঠ থেকে আলু রপ্তানির এ সফলতার পেছনের শক্তি হলো সামগ্রিক কর্মকৌশল ও অংশীদারীত্ব। ‘মিসিং মিডল ইনিশিয়েটিভ (এমএমআই)’ প্রকল্পের আওতায় উত্তর ও দক্ষিণ বঙ্গে বিস্তৃত ৫৫ সংগঠনের কেন্দ্রীয় সংগঠন সারা বাংলা কৃষক সোসাইটি (এসবিকেএস) এবং জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) অংশীদারিত্বে এ সফল উদ্যোগের সূচনা। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি ও রপ্তানিকারকরা এই উদ্যোগের সক্রিয় কুশীলব, তাদের সহযোগিতায় এই সফলতা। প্রকল্পের উদ্যোগে চারটি আলু উৎপাদনকারী সংগঠনের ১০০ জন কৃষককে যাদের অর্ধেকের বেশি নারী ‘উত্তম চাষাবাদ পদ্ধতি’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মৌসুমের শুরুতে প্রতিবারের মতো এবারও এফএও উৎপাদনকারী ও রপ্তানিকারকদের বৈঠকের ব্যবস্থা করে। বীজ সংগ্রহ, মূলধন জোগান, মাটি পরীক্ষা, পরিদর্শন, ফলনোত্তর সংরক্ষণ, প্রশিক্ষণ সবকিছুকে সমন্বিত করে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়। বাংলাদেশ আলু রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিপিইএ) এবং এসবিকেএসের উদ্যোগে মুখোমুখি বৈঠকের ফলস্বরূপ উৎপাদনকারীরা রপ্তানিকারক সরবরাহকৃত ‘সান্তানা’ জাতের বীজ থেকে ৪৫০ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন করেছে।

পাশাপাশি উৎপাদনকারীরা ডায়ামন্ট, কার্ডিনাল, গ্রানোলা এবং এসটেরিক্স জাতের আলুও উৎপাদন করেছে। রপ্তানিকারকদের তথ্য মতে মালয়েশিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা অঞ্চলের দেশগুলোয় এই আলুর বিশেষ চাহিদা বিদ্যমান। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান মতে এ বছর ৪ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে ১১ মিলিয়ন মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হবে। স্থানীয় চাহিদা ৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের ২৩ থেকে ২৫ শতাংশ কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা যায়। ফলনোত্তর ক্ষতি ও অতিরিক্ত উৎপাদনে আলু চাষিদের ক্ষতি টাকার অঙ্কে প্রায় ২৫ থেকে ৩৫ বিলিয়ন (২৯০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার)। অতিরিক্ত উৎপাদনের অভিশাপ থেকে কৃষককে মুক্তির লক্ষ্যে সরকার রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা দিচ্ছে। যদিও এখনও অনেক প্রতিকূলতা বিরাজমান। যেমন-আমদানিকারক দেশের রপ্তানিবিষয়ক শর্ত পূরণ, পছন্দসই জাতের ঘাটতি, কৃষকের চাহিদা মতো মানসম্পন্ন বীজের অভাব। এছাড়া কৃষক পর্যায়ে হোলো হার্ট, বাদামি পচা রোগ, নেমাটোড, পোকামাকড় মুক্ত পরিচ্ছন্ন চাষাবাদের উৎসাহ ও পরীক্ষার অভাব বিদ্যমান। এসব বিপত্তি অতিক্রমে সরকার বাংলাদেশের জন্য উত্তম চাষাবাদ (বাংলা জিএপি) পদ্ধতি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি শর্তাবলী পূরণের লক্ষ্যে এফএও এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে উন্নতমানের পরীক্ষাগার স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করা যায় অচিরেই এর ফলে আলু ছাড়াও অন্যান্য সবজি রপ্তানিতে জোয়ার আসবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম বলেন, আমি এফএও এর মিসিং মিডল ইনিশিয়েটিভ এবং ডিএই, বিএডিসি, আলু রপ্তানিকারক সমিতি (বিপিইএ) এবং উৎপাদনকারী সংগঠনগুলোর যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে আলু রপ্তানি মূল্য সংযোজন ধারাকে শক্তিশালী করার জন্য তাদের প্রশংসা করি। তৃণমূল পর্যায়ে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের উন্নয়নে সবার একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত