পরিবেশ অধিদপ্তর

ম্যাজিস্ট্রেট সংকটে অভিযান ব্যাহত বরিশালে

প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

ম্যাজিস্ট্রেট সংকটে অভিযান পরিচালনা করতে পারছে না বরিশাল পরিবেশ অধিদপ্তর। বিভাগের ছয় জেলায় ৪৯১টি বৈধ ইটভাটা ও অনিবন্ধিত ২২৪টি ইটভাটায় নিয়ম না মেনে কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে যেমন ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের, তেমনি প্রভাব পড়ছে জীববৈচিত্র্যে। সম্প্রতি গণমাধ্যমকে এসব কথা জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আব্দুল হালিম। তিনি বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট সংকটে প্রয়োজন অনুযায়ী অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের কাছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে পাওয়া যায় না। তাই আমরা বিভিন্ন সময় হেড অফিস থেকে ম্যাজিস্ট্রেট এনে অভিযান পরিচালনা করছি। তারপরও চেষ্টা করছি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার। এরই মধ্যে আমরা জেলা উপজেলায় কয়েকটি ভাটায় অভিযান পরিচালনা করে জরিমানার পাশাপাশি ইট ধ্বংস ও একটি ইটভাটা বন্ধ করে দিয়েছি।

এদিকে অভিযোগ রয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের ‘ম্যানেজ’ করে ছাড়পত্র ছাড়াই বরিশালে একের পর এক গড়ে উঠেছে ইটভাটা। সেসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট। এতে উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল।

পরিবেশ অধিদপ্তর বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের দেয়া তথ্য মতে, বিভাগে বৈধ ইটভাটার সংখ্যা ৪৯১টি। আর অনিবন্ধিত ইটভাটা ২২৪টি। এই তথ্য নিবন্ধনের আবেদনের ওপর তৈরি করে প্রস্তুত। অথচ পুরো বিভাগের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থার তথ্যে রয়েছে বিশাল ফারাক। এর মধ্যে বরিশালের হিজলা উপজেলায় মোট ১৯টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়েছে ১৩টি। ছাড়পত্র নেয়নি ছয়টি। মোট ইটভাটার মধ্যে ১৪টি জিগজ্যাগ।

কিন্তু বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলেছে, হিজলা উপজেলায় মোট ৫৬টি ইটভাটা রয়েছে এবং নিয়মিত ইট পুড়ছে। এ অবস্থা শুধু হিজলা উপজেলার নয়, পুরো বিভাগের ৬ জেলার ৪২টি উপজেলার। প্রতিটি ভাটায় কয়লা ব্যবহার করে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও সামনে নামমাত্র কয়লা রেখে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। তাছাড়া যারা আবেদন করেনি তারা অবৈধভাবে ইটভাটা চালালেও অবৈধ তালিকায় তাদের নাম নেই।

জানা গেছে, অঞ্চলভিত্তিক প্রভাবশালীদের সরাসরি হস্তক্ষেপ বা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই শত শত ইটভাটা পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে। এদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করে না পরিবেশ অধিদপ্তর। শুধু তাই নয়, প্রতি বছর উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়নে আগে ১১টি ভাটা থাকলেও ২০২২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২৪টিতে। বাকেরগঞ্জ উপজেলার কলসকাঠি ইউনিয়নে আগে ২১টি ভাটা থাকলেও বর্তমানে ৩২টি ইটভাটা হয়েছে। সেখানে প্রকাশ্যেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। বাকেরগঞ্জের একটি ইটভাটার মালিক হাবিবুর রহমান বলেন, কয়লায় ইট পোড়ালে ইটের দাম বেড়ে যায়। বাধ্য হয়ে কাঠ পোড়াতে হচ্ছে। ইটভাটায় পরিবেশের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এক বছরেও পাইনি। এতে নানা জটিলতা রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের সঙ্গে চুক্তি না করলে ছাড়পত্র পাওয়া যায় না।

এদিকে পরিবেশবাদীরা বলেছেন, জলবায়ু সংকটের এই সময়ে এভাবে কাঠ ব্যবহার করে ভাটার চুল্লি চালু রাখলে বায়ুমণ্ডলের যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল। সরকারি দপ্তরকে নখদন্তহীনভাবে দায়িত্ব পালন না করে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানান তারা। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) বরিশাল জেলার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট লিংকন বাইন বলেন, ইটভাটা পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ প্রতি বছরই ইটভাটার সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে জিগজ্যাগ দেখিয়ে ইটভাটার অনুমোদন নিয়ে ড্রাম-চিমনিতে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কাঠ পুড়িয়ে ইট তৈরির কারণে বন উজাড় হচ্ছে। ফসলি জমি, গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পরিবেশ মারাত্মভাবে হুমকির মুখে পড়ছে। কিন্তু ছাড়পত্র দেয়ার পর তদারকির যে দায়িত্ব রয়েছে, সেটা সঠিকভাবে পালন করছে না পরিবেশ দপ্তর। এটা তাদের ব্যর্থতা। তাদের নীরবতার পেছনে কোনো স্বার্থ কাজ করছে কি না, খতিয়ে দেখা দরকার।

পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. আব্দুল হালিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট সংকট। তার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করছি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া অবৈধ ইটভাটার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক না কেন ছাড়পত্র ছাড়া কোনোভাবেই চালানোর সুযোগ নেই। সে যেই হোক, আমরা ব্যবস্থা নেব।