শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানান চবি উপাচার্য
প্রকাশ : ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো
আত্মনির্ভরশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠনের দাবি জানান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইয়াহ্ইয়া আখতার। গতকাল মঙ্গলবার মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে চবি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে মহাসমারোহে ও আনন্দঘন পরিবেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উদযাপিত হয়েছে। এ উপলক্ষে ১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্য, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, স্মরণ চত্বর ও বিভিন্ন হলসহ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সব গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় দৃষ্টিনন্দন আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়।
১৫ ডিসেম্বর দিবাগত রাত ১২:০১ মিনিটে বিজয় দিবসের সূচনালগ্নে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বিএনসিসির উদ্যোগে স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে বিউগলের সুরে শহীদদের স্মরণ করা হয়। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে চবি উপাচার্য, উপ-উপাচার্যদ্বয়, অনুষদসমূহের ডিন, রেজিস্ট্রার ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের সাথে নিয়ে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে লাখো শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পুস্পার্ঘ অর্পণ শেষে সকাল ১০:৩০ টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয় বিজয় বিজয় র্যালি। র্যালিটি স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্য চত্বর থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়। চবি সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ মিলনায়তনে বেলা ১১ টায় ‘বর্তমান বাংলাদেশে বিজয় দিবসের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভার প্রধান অতিথি চবি উপাচার্য বলেন, যে ঐক্য নিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা বাংলাদেশীরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, একটি রাজনৈতিক দল সে অর্জনকে লুটপাট ও অত্যাচার চালিয়ে ম্লান করে দিয়েছে।
পরবর্তীতে শেখ হাসিনা সরকার একই কায়দায় দুনীতি, অর্থ পাচার, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ, ক্ষমতার অপব্যবহার ও ফ্যাসিবাদী কায়দায় রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে দেশের সাধারণ মানুষের কণ্ঠ রোধ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। জুলাই-আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে এ ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। তিনি আরো বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আমাদেরকে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে সংস্কারের অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে। এ সুযোগ আমাদের যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, আজকের এ মহান বিজয় দিবস আমাদের জাতীয় জীবনের এক অনন্য মাইলফলক। এ দিন আমাদের ত্যাগ, সাহস ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিজয় দিবসের তাৎপর্য আমাদের কাছে বহুমাত্রিক। চবি উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, দেশ স্বাধীন করলাম আমরা আপামর জনতা, কিন্তু সেখানে আমরা দেখি ৯৩ হাজার সেনাবাহিনীকে নিয়ে পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজী ভারতীয় জেনারেল অরোরার নিকট আত্মসমর্পণ করেন।
কেন সেদিন আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধের সবার্ধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীকে রাখা হয়নি? এ প্রশ্নের উত্তর আমি সারা জীবন খুঁজে পাইনি। আমরা দেখেছি এমএজি ওসমানীর নাম নিশানা পর্যন্ত এতদিন স্বাধীনতা আন্দোলনের মধ্যে ছিলনা। এর অজ্ঞাত কারণ আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ভারতীয় বংশোদ্ভুত শর্মিলা বসুর থিসিস ‘ডেড রেকনিং’ এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের শহীদদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এ বিতর্ক পরিসমাপ্তির জন্য বাংলাদেশের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশের জন্য বর্তমান সরকারের প্রধান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি বিনীত আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, ভারতের ওয়েবসাইটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হিসেবে দেখানো হয়েছে। তিনি ভারত সরকারের নিকট এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে দেখানোর অনুরোধ জানান। উপ-উপাচার্য বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক চাহিদা-অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য মৌলিক সংষ্কার চান এবং একটি একমুখী শিক্ষানীতি প্রণয়ন ও সব বিভাগীয় শহরে আন্তজার্তিক মানের হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) এরপর চবি স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্যে পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন চবি বিভিন্ন অনুষদের ডিনরা, চবি শিক্ষক সমিতির নেতা, হলের প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষক, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টর, বিভিন্ন বিভাগীয় সভাপতি, ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক, অফিসার সমিতির নেতা, চবি ক্লাব (ক্যাম্পাস), সমন্বয় কর্মকর্তা বিএনসিসি, চবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজ, চবি, উস প্রাইমারি অ্যান্ড হাই স্কুল, কর্মচারী সমিতি ও কর্মচারী ইউনিয়নের নেতারা, সাংবাদিক সমিতি এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনসমূহ। আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন চবি রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন চবি ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা এবং পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন চবি শিক্ষার্থী প্রিয়াংকা পিংকি।
