ব্যাটারিচালিত রিকশার তাণ্ডব
বাড়ছে দুর্ঘটনা ও যানজট
ঢাকায় অবৈধ প্যাডেল রিকশা ১০ লাখ
প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা ও ইজিবাইকের সংখ্যার সঠিক হিসাব নেই সরকারি-বেসরকারি কোনো সংস্থার কাছে। তেমনি গ্যারেজ, পার্টসের দোকান, আমদানিসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসহ সেক্টরটিতে কী পরিমাণ মানুষের জীবন-জীবিকা সম্পৃক্ত, সেটিরও সঠিক তথ্য নেই। তারপরও গত কয়েক বছরে মূল সড়কসহ পাড়া-মহল্লায় ঝাঁকে ঝাঁকে বেড়েছে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশা। দেশে এস পাওয়ার, বোরাক, মিশুক ও চিকন চাকার রিকশা-এই চার ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশার দাপট রয়েছে। চালকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে বর্তমানে যানজট ও দুর্ঘটনার জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী করা হয় তিন চাকার এই বাহনকে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, ঢাকার দুই সিটিতে বৈধ ‘প্যাডেল’চালিত রিকশার সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ১৪ হাজার হলেও বেশির ভাগই ব্যাটারিতে রূপান্তর হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে সারা দেশে বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটোরিকশা, ইজিবাইকের সংখ্যা ৫০ লাখের কাছাকাছি। এর মধ্যে ঢাকা শহরেই এ সংখ্যা ১২ লাখের মতো। অন্যদিকে ঢাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশার চালকদের মধ্যে নিজেরা মালিক এমন সংখ্যা ৫ শতাংশের মতো। বেশির ভাগই গ্রাম থেকে ঢাকায় এসে ভাড়ায় রিকশা চালাচ্ছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ব্যাটারিচালিত রিকশার মধু আসলেই কারা খাচ্ছে?
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীদারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর খিলগাঁও, মুগদা, মান্ডা বাসাবো, মানিকনগর, রামপুরা, বাড্ডা, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, সবুজবাগ, শ্যামপুর, ডেমরা, মোহাম্মদপুর, বছিলা, উত্তরা, ভাটারা, দক্ষিণখান, উত্তরখান, ময়নারটেক, মিরপুর, পল্লবী এলাকায় প্রায় দেড় হাজার ব্যাটারিচালিত রিকশার গ্যারেজ গড়ে উঠেছে। বেশির ভাগ গ্যারেজ অলিগলির ভেতরে টিনশেড ঘরে তৈরি করা হয়। এ সব গ্যারেজ থেকে ১২ লাখের মতো অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা ঢাকার রাস্তায় চলছে। গ্যারেজগুলোর বেশির ভাগই গত আওয়ামী লীগ আমলে গড়ে উঠেছে।
আবার গ্যারেজ ও রিকশার মালিকদের বেশির ভাগই ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। অভিযোগ রয়েছে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপির কতিপয় নেতাকর্মীসহ স্থানীয় প্রভাবশালীরা এই ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। এর বাইরে ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগে গ্রাম থেকে আসা মানুষরাই সাধারণ প্যাডেল রিকশা চালাতেন, যাদের বেশির ভাগ রিকশার মালিক ছিলেন না। বর্তমানে ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশার ক্ষেত্রেও বেশির ভাগ মালিক রাজনৈতিক দলের সুবিধাভোগী ও প্রভাবশালী গোষ্ঠী। তারা যন্ত্রাংশ আমদানি করে নিজস্বভাবে এসব রিকশা তৈরি করে বিক্রি ও ভাড়া দিচ্ছে। ঢাকা শহরের চালকদের ৫ শতাংশের মতো নিজেরা গাড়ির মালিক।
গ্রামে এ সংখ্যা বেশি। সাধারণত দৈনিক হিসাবে ব্যাটারিচালিত রিকশার ভাড়া ৩৫০ টাকা, স্টিলবডি রিকশা ৪০০ টাকা, মিশুক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, বোরাক ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। তবে বোরাকে বিদ্যুৎ খরচ চালককে বহন করতে হয়। অভিযোগ রয়েছে, গ্যারেজে থাকা বেশির ভাগ রিকশায় চোরাই বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। যাত্রাবাড়ীর ব্যাটারি রিকশাচালক মুজাহিদ বলেন, তার মালিকের বিভিন্ন ধরনের ৫০টি ব্যাটারি রিকশা রয়েছে। আওয়ামী লীগ আমলে প্রতি মাসে ১২০০ টাকার বিনিময়ে তারা টোকেন দিতেন। ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কিছুদিন চাঁদা ছাড়াই রিকশা চালানো গেছে। তবে এখন স্থানীয় প্রভাবশালীরা কিছু টাকা নিচ্ছেন। এছাড়া পুলিশকেও কিছু টাকা দিতে হচ্ছে।
