ক্ষমতায় থেকে দল গঠন মানুষ ভালোভাবে নেয় না

জোনায়েদ সাকি

প্রকাশ : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ছাত্ররা নতুন দল করতে চাইছে। আমরা স্বাগত জানাই।

অভ্যুত্থানের চৈতন্য নিয়ে, আকাঙ্ক্ষা নিয়ে যদি নতুন দল হয়, ছাত্রদের একাংশ যদি দল গঠন করে তাহলে আমরা তাদের স্বাগত জানাব। কিন্তু ক্ষমতায় থেকে দল গঠন বাংলাদেশের মানুষ ভালোভাবে নেয় না। গতকাল শুক্রবার বিকালে রাজধানীর শাহবাগে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি মশিউর রহমান খান রিচার্ড। সঞ্চালনা করেন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ। জোনায়েদ সাকি আহ্বান জানান, ‘রাজপথে আসেন, জনগণের ভেতরে থেকে নতুন দল গড়ে তোলেন। যেমনটা আমরা গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমাদের ইতিহাস সংগ্রামের ইতিহাস। আগামী ইতিহাসও জনগণের স্বার্থের পক্ষে, বৃহত্তর স্বার্থের পক্ষে থাকবে।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের শক্তিকে সংহত করতে হবে। গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে। গণতান্ত্রিক শক্তি গড়ে উঠবে ছাত্রদের মধ্য থেকেই। এ দেশের তরুণরা নতুন চৈতন্য নিয়ে নতুনভাবে গড়ে তুলবে, তবেই সম্ভব নতুন বাংলাদেশ।’ বক্তব্যের শুরুতে ছাত্র ফেডারেশনকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান সাকি। তিনি সংগঠনের সাবেক সভাপতি।ছাত্র ফেডারেশনের উদ্দেশে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ আপনাদের দিকে চেয়ে আছে। প্রস্তুত হন নতুন দেশ গঠনের জন্য। কোনো প্রতিবেশী আমাদের পদানত করতে পারবে না। কোনো শক্তি পারবে না।’ জুলাই গণহত্যার বিচার, শহীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা, আহতদের সুচিকিৎসা ও পুনর্বাসনের দাবিতে অনুষ্ঠিত ছাত্র সমাবেশে সাকি অভিযোগ করেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বাজারে গেলে তাদের অবস্থা খারাপ। জানমালের নিরাপত্তা নেই। দেশের মানুষ দেখতে পাচ্ছে তাদের জীবনে ভয়ংকর সংকট।’ তিনি বলেন, ‘এ সব সংকট দূর করা আপনাদের বড় কাজ। এ সংকট দূর করার জন্য পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থার যে পুনর্গঠন দরকার, সেটা ভালোমতো করেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রয়োজনীয় সহযোগিতা নিন। সেই সহযোগিতা না নিয়ে আপনারা যদি নিজেদের মতো করে কেবল চালাতে চান, তাহলে ব্যর্থ হবেন। কিন্তু ব্যর্থ তো আপনাদের আমরা হতে দিতে পারি না।’

‘কাজেই আমরা যা বলি, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করতে চাই। জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল গঠন করেন, ছাত্রদের জন্য ছাত্র কাউন্সিল গঠন করেন। সবাইকে নিয়ে বাংলাদেশ পরিচালনা করে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করেন’, বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম এ নেতা। সাকি বলেন, ‘আপনারা এখনো সেই কাজ করতে পারেননি। এটা বিব্রতকর, বেদনাদায়ক।

আহত-নিহতদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করা আপনাদের প্রথম কাজ। আপনাদের দ্বিতীয় কাজ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। আপনাদের তৃতীয় কাজ বাংলাদেশের গণতন্ত্রের উত্তরণে কাজ করা। এটা ছাড়া অন্য কিছু করলে মানুষ মেনে নেবে না।’ গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘এখনো সরকারে ফ্যাসিস্টদের দোসররা পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে। এখনো আহতরা চিকিৎসা পায় না। তাহলে বাকি বাংলাদেশে কী চলছে বোঝা যায়।’

সভাপতির বক্তব্যে মশিউর রহমান খান রিচার্ড বলেন, ‘ঘোষণা একটাই সাম্য, মানবিক মর্যাদার বাংলাদেশ। ঘোষণা একটাই, যারা একাত্তরের শহীদদের অসম্মান করতে চায় তাদের পরাস্ত করব। যারা জুলাই গণহত্যায় জড়িত তাদের পরাজিত করতে হবে।’ সভায় শ্রমিকনেতা তাসলিমা আখতার বলেন, ‘আমরা চাই না আরেকটা ফ্যাসিবাদ তৈরি হোক। আমরা চাই তরুণরা দেশের মানুষের জান ও জবানের অধিকারে ছাত্র ফেডারেশনসহ ছাত্রসমাজ ভূমিকা রাখবে।’

যাত্রাবাড়ীতে জুলাই আন্দোলনে আহত আন্দোলনকারী জামাল বলেন, ‘যারা শহীদ হইসে তারা বাইচা গেছে। আমরা যারা আহত তারা চিকিৎসা পাই না। হাসপাতালে চিকিৎসা পাই না।

ডাক্তার দুইটা ওষুধ দেয় তিনটা দেয় না। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে মাত্র এক লাখ টাকা পাইসি। এখনই যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে ভবিষ্যতে কী হবে। আহত ভাইদের পক্ষ থেকে বলছি আমরা অনেক কষ্টে আছি।’ সমাবেশে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্র ফেডারেশনের নেতারা বক্তব্য দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ছাত্র ফেডারেশন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল আমিন শেখ, ঢাকা মহানগর সভাপতি আল আমীন রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শ্রীধাম শীল, নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখা সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, টাঙ্গাইল জেলা সভাপতি ফাতেমা রহমান বীথি প্রমুখ।