বেরোবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন নভেম্বরে
অনশনে শিক্ষার্থীরা
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
রংপুর ব্যুরো

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ছাত্র সংসদ নির্বাচন আগামী নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী। তিনি বলেন, আমি ইউজিসির সদস্য তানজিম উদ্দিন স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বলেছেন আগামী নভেম্বরের মধ্যেই বেরোবিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল রোববার সকালে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের শুরু করা আমরণ অনশনের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। উপাচার্য শওকাত আলী বলেন, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেই আবু সাঈদের হত্যার বিচার এবং ছাত্র সংসদ নিয়ে কথা বলেছি। সেটি শিক্ষার্থীরাও জানে। তাই তাদের ধৈর্য ধরতে বলব।
আশা করি স্বায়ত্তশাসিত চার বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে আমরাই প্রথম ছাত্র সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করব, ইনশাআল্লাহ। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উত্তর গেটে সকালে অনশনে বসেছেন অনেকেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, তারা আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ছাত্র সংসদ চান। কারণ ছাত্র সংসদ তাদের অধিকার। প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও ছাত্র সংসদ না থাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যর্থতা বলেও অভিযোগ করেন তারা। অনশনে অংশ নেওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী নয়ন মিয়া বলেন, লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির জন্য হাসিনা দানবে পরিণত হয়েছিল।
তাই আমরা চাই ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হোক। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলে কোনো নির্বাচিত সরকার আর ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে পারবে না। তাই আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে উঠবো না। ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আশিক বলেন, দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছাত্র সংসদ নির্বাচন। এমনকি কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ৯ দফার অন্যতম ছিল— প্রত্যেক ক্যাম্পাসে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন করা। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে গেলেও, আবু সাঈদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দৃশ্যমান কিছু দেখতে পাইনি। ছাত্র সংসদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবর আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু প্রায় তিন মাস সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। আমাদের দাবি ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে। অনশনরত শিক্ষার্থীরা হাতে প্ল্যাকার্ডে লেখেন, ‘জুলাইয়ে অর্জিত স্বাধীনতা, ছাত্র সংসদ পেলে পাবে পূর্ণতা’, ‘এক দফা এক দাবি, ছাত্র সংসদ কখন দিবি’, ‘সাঈদ যেদিন বুক পেতেছে, ভয় সে দিন দূর হয়েছে’, ‘ছাত্র সংসদ আমাদের অধিকার’ ইত্যাদি। এর আগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনকে পাঁচ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি পূরণে কোনো কার্যকর ঘোষণা না আসায় তারা আমরণ অনশনে বসেছেন। এ প্রসঙ্গে উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, আবু সাঈদের সহযোদ্ধাদের দাবি থাকতেই পারে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের এই দাবিকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছে। লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির কারণে কাউকে যেন প্রাণ দিতে না হয়। এজন্য শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের পক্ষে আমরাও আছি। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা বেশ উদ্বিগ্ন। এ জন্য শুধু শুধু কাজটাকে ত্বরান্বিত করার জন্য অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু আমাদের এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের জন্য গেজেটের মাধ্যমে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। তাই আমি রোডম্যাপ দিতে পারি না। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে আমরা নভেম্বরের মধ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে পারব।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন কখনও হয়নি। ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর যাত্রা শুরুর পর থেকেই আওয়ামী শাসনামল হ?ওয়ায় ক্ষমতার জোরে সরকারি দলের ছাত্র সংগঠনের আধিপত্য দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। তাদের হাতে নির্যাতন, হয়রানি ও চাঁদাবাজির শিকার হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী।
গত বছরের ১৬ জুলাই বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের জড়িত থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০৮তম সিন্ডিকেট সভায় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র-শিক্ষকসহ সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততার অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রামাণিত হলে ১১১তম সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘সর্বোচ্চ শাস্তি আজীবন বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল’ এবং প্রয়োজনে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী শাস্তি বিধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বেরোবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে তাদের অধিকার আদায়, গণতান্ত্রিক চর্চা, ন্যায্য দাবি, আদায়সহ বিভিন্ন কারণে ছাত্র সংসদের দাবি জানিয়ে আসছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শহিদ আবু সাঈদের এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতেও কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিটি আরও জোরালো হয়ে উঠেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল জাতীয় সংসদে পাস হওয়া বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদের কোনো বিধান রাখা হয়নি। যার কারণে নির্বাচন করতে হলে প্রথমে ছাত্র সংসদ আইনের খসড়া অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে পাস করে তা অনুমোদনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। বিধানটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সংযুক্ত হলে তারপরেই ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজন সম্ভব হবে এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় আইনের-২০০৯-এ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নীতিমালা যুক্ত করার জন্য কাজ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই মুহূর্তে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের নিমিত্তে ছাত্র সংসদণ্ডসংক্রান্ত স্বতন্ত্র ব্যাংক হিসাব নম্বরে অর্থ সংরক্ষণ করা, ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। নীতিমালা অনুমোদন হলে শিগগিরই ছাত্র সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে।
