টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইনে পিছিয়ে রংপুর

প্রকাশ : ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রংপুর ব্যুরো

সারা দেশে চলমান টাইফয়েড টিকা ক্যাম্পেইন কর্মসূচিতে পিছিয়ে রয়েছে রংপুর। প্রায় ৪৯ লাখ শিশুকে টাইফয়েড টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৫ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। যা দেশের অন্য বিভাগের তুলনায় কম। গতকাল শনিবার রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এ তথ্য তুলে ধরা হয়। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ও ইউনিসেফের সহযোগিতায় রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় এ কর্মশালা। এতে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মুহাম্মদ হিরুজ্জামান।

মহাপরিচালক বলেন, চলমান টাইফয়েড টিকাদান ক্যাম্পেইনের আওতায় দেশের প্রায় পাঁচ কোটি শিশুকে টিকা প্রদান করা হবে। টাইফয়েড জ্বর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অঙ্গহানি, অন্ধত্ব, শ্রবণশক্তি হ্রাস এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। টাইফয়েড টিকা শরীরে নিজস্ব প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। গণমাধ্যমের ভূমিকা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ হিরুজ্জামান বলেন, টাইফয়েড টিকাদান কার্যক্রমের সফল বাস্তবায়নে গণমাধ্যমকর্মীদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। টিকা গ্রহণ সম্পর্কে জনগণের মধ্যে বিদ্যমান দোদুল্যমানতা ও বিভ্রান্তি পরিহারে গণমাধ্যম নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে পারে। সচেতনতার অংশ হিসেবে তিনি গণমাধ্যকর্মীদের লেখনির পাশাপাশি টিকা সম্পর্কিত গুজব প্রতিরোধেও কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার (রুটিন দায়িত্ব) মো. আবু জাফর। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা ও ইউনিসেফ রংপুরের সোশ্যাল অ্যান্ড বিহ্যাভিয়ার চেঞ্জ অফিসার মনজুর আহমেদ। জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক মকবুল হোসাইনের সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানে গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. মারুফ নাওয়াজ, রংপুর জেলা তথ্য অফিসের পরিচালক ড. মো. মোফাকখারুল ইকবাল ও বাংলাদেশ বেতার রংপুরের আঞ্চলিক পরিচালক মো. আব্দুর রহিমসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার (রুটিন দায়িত্ব) মো. আবু জাফর বলেন, শিশুদের ঝরে পড়া ও বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির অন্যতম কারণ হচ্ছে অসুস্থতা। টাইফয়েড টিকা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কারণ এটি জীবনরক্ষাকারী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। টিকা রেজিস্ট্রেশনের গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারের পরিসংখ্যানিক উপাত্ত তৈরিতে এবং শিশুদের ভবিষ্যৎ প্রয়োজনে টিকা সনদ কাজে লাগতে পারে। রংপুর বিভাগের টিকা রেজিস্ট্রেশনে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের আহ্বান জানান।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে সাংবাদিকরা টাইফয়েড টিকাদান কার্যক্রম গতিশীল করতে কমিউনিটি পর্যায়ে ব্যাপক প্রচার, বিভাগীয় তথ্যকেন্দ্র স্থাপন, ধর্মীয় উপাসনালয়ে টাইফয়েড জ্বরের ভয়াবহতা ও টিকার গুরুত্ব তুলে ধরা, মনিটরিং বৃদ্ধি প্রভৃতি বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন। এসময় জানানো হয়, দেশব্যাপী ৯ মাস হতে ১৫ বছর কম বয়সি সব শিশুদের এক ডোজ টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন (টিসিবি) টিকা দেওয়া হবে। ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ ক্যাম্পেইন চলবে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত। টিকা ক্যাম্পেইনে দেশের অন্য বিভাগগুলোর তুলনায় রংপুর পিছিয়ে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়, রংপুর বিভাগের আট জেলায় ৪৮ লাখ ৯৯ হাজার ৮২২ জন শিশুকে টাইফয়েড টিকার আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছে ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৮১ জন, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৩৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৮৫ হাজার ৬৮৫ জনকে টিকা প্রদান করা হয়েছে।