খুলনায় কমেছে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
বাসস

খুলনার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর উপস্থিতি কমেছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কিছু রোগী থাকলেও বিভাগের অন্তত ৭টি জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। এর আগে গেল বছরের এই সময় খুলনায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। সে তুলনায় চলতি বছরে স্বস্তিতে রয়েছে খুলনাবাসী।
খুলনার হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সবচেয়ে বড়ো সরকারি হাসপাতাল খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কম। সেখানে মোট ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৪৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১১ জন। চলতি বছর মোট চিকিৎসা নিয়েছে ৩৮৭ জন। এছাড়াও শহরের অন্যান্য হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রয়েছে ২১ জন। নগরীর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, বেসরকারি খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আদ্ব-দ্বীন হাসপাতাল এবং ইসলামি ব্যাংক হাসপাতাল মিলে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছে ২১ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন কোনো রোগী ভর্তি হয়নি। খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও ডেঙ্গুর ফোকাল পার্সন ডা. হোসেন আলী বলেন, গত বছরের তুলনায় চলতি বছর ডেঙ্গু রোগীর চাপ কম। সে কারণে আলাদা ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে ডেঙ্গু রোগীদের সুচিকিৎসার স্বার্থে আলাদা ওয়ার্ডের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১০ জেলার হাসপাতালগুলোতেও গত শনিবার সকাল পর্যন্ত ১৮৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিল। গত বছর এই সময় পর্যন্ত যা ছিল দ্বিগুণ। এরমধ্যে ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ১৩ জন।
সবচেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। খুলনা বিভাগে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৮ জনের। যা গত বছর ছিল ১৭ জন। চলতি বছরের গতকাল পর্যন্ত বিভাগের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল মিলে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৪ জন। এরমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৩ হাজার ২ শত ৪৬ জন। এদিকে, ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কম থাকায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে নগরীর পিকচার প্যালেস মোড়ে মাইকিং ছাড়া তেমন কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। তবে মাঝে মধ্যে কর্পোরেশনের মশা নিধন টিমকে দেখা গেছে স্প্রে করতে।
কেসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. শরীফ শাম্মিউল ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পেতে আমরা সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি। চলতি বছর ডেঙ্গুর প্রকোপ কম। তবুও নগরীর পাঁচটি স্পটে আমরা নিরবচ্ছিন্ন মাইকিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি। এছাড়া লিফলেট বিতরণের মাধ্যমেও ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। তবে চিকনগুনিয়া নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে সরবরাহকৃত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমেছে।
এ পরিসংখ্যানে দেখানো হয়েছে, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে গত ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালে মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে ১৩ হাজার ৯৩৮ জন। একই সময় ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ১৫৭ জনের। সুস্থতার ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছেন ১২ হাজার ৯৫৪ জন। বর্তমানে রোগী ভর্তি আছে ৮১৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে মোট ২৯৩ জন। একই সময়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রোগী ভর্তির সংখ্যা ৪ হাজার ৮৩২ জন। তার মধ্যে সুস্থ হয়ে ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি গেছেন ৪ হাজার ৬৪৪ জন। এসব হাসপাতালে গতকাল শেষ ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৭ জন। বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন ১৭৬ জন রোগী। এসময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ১২ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এ বছরের প্রথম দিন থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ১৮ হাজার ৭৭০ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৭ হাজার ৬০৮ জন সুস্থতার ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এইসময়ে সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে ১৬৯ জন। বর্তমানে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৯৯৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ভর্তি হয়েছেন ৩৬০ জন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্ষা ফুরিয়ে গেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব নিজ নিজ বাড়ির পাশের ঝোপ-জঙ্গল ও ডোবা-নালা নিজ দায়িত্বে পরিষ্কার করতে হবে। এতে ডেঙ্গু মশার প্রজনন কমবে। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও কমবে।
