নারায়ণগঞ্জে পাসপোর্ট করতে এসে রোহিঙ্গা যুবক আটক
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে পাসপোর্ট করতে এসে ধরা পড়েছেন আজিজ খান নামে এক রোহিঙ্গা যুবক। গতকাল সোমবার দুপুরে বায়োমেট্রিক যাচাইয়ের সময় তার পরিচয় গরমিল ধরা পড়লে অফিসের নিরাপত্তা কর্মীরা তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে সবকিছুই স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল। তিনি নিজেকে হাফেজ পরিচয় দিয়ে ‘আব্দুল আজিজ’ নাম ব্যবহার করেন। বয়স দেখানো হয় ২৫ বছর, জন্ম তারিখ ২০০০ সালের ১০ জানুয়ারি। বাবার নাম হাজী নজিবুল্লাহ এবং মায়ের নাম শুকরা বেগম উল্লেখ করেন তিনি। কিন্তু বায়োমেট্রিক স্ক্যানেই বদলে যায় পুরো চিত্র। তিনি বাংলাদেশের নাগরিক নন, তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থী আজিজ খান। রোহিঙ্গা তথ্য অনুযায়ী তার প্রকৃত জন্ম তারিখ ২০০১ সালের ৫ জানুয়ারি, বাবার নাম সালামত খান। তিনি বাংলাদেশে প্রবেশ করেন ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় পরিচয়পত্রে দেওয়া তথ্যে দেখা যায়, বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছিল মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার ইছাপুরা গ্রাম। এখান থেকেই তিনি চলতি বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেন। স্থায়ী ঠিকানা দেখানো হয় চট্টগ্রামের চন্দনাইশের দক্ষিণ হাশিমপুরে। আর পাসপোর্টের আবেদনে বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ করেন সোনারগাঁওয়ের কাঁচপুর এলাকা। নজিবুল্লাহ ও শুকরা বেগম নামে যাদের বাবা–মায়ের তথ্য দেওয়া হয়েছিল, তাদের ঠিকানা দেখানো হয় চট্টগ্রামের চন্দনাইশের খাজীরপাড়া ও হাশিমপুর এলাকায়। দুজনই চলতি বছরের ১৪ সেপ্টেম্বর এনআইডি সংগ্রহ করেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা জানান, আজিজ খান বেশ কিছুদিন ধরে ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে পাসপোর্ট নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যও অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বানানো হয়েছিল। তাদের সন্দেহ— এ ঘটনায় সংগঠিত কোনো দালালচক্র জড়িত।
নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন— তিনি রোহিঙ্গা। তিনি ১৮ হাজার টাকার বিনিময়ে মুন্সীগঞ্জ থেকে এনআইডি সংগ্রহ করেছেন। তিনি আরও বলেন, আমরা নিয়মিতভাবেই আবেদনকারীদের সব নথি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করি। আজ যে ব্যক্তিকে আটক করা হয়েছে, তিনি ভুয়া এনআইডি ও ভুয়া তথ্য ব্যবহার করে পাসপোর্ট নিতে এসেছিলেন। বায়োমেট্রিক যাচাইয়ে তাঁর প্রকৃত পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরই আমরা তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে সোপর্দ করি। পাসপোর্ট একটি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নথি—এখানে কোনোভাবেই ভুয়া তথ্য গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বা অন্য কোনো বিদেশি নাগরিক ভুয়া পরিচয়ে পাসপোর্ট নিতে এলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রতিটি আবেদন শতভাগ যাচাই নিশ্চিত করতে আমাদের কার্যালয় আরও সতর্কভাবে কাজ করছে। আমরা চাই, শুধুমাত্র সঠিক নাগরিকই যেন বাংলাদেশের পাসপোর্ট পান। আটক আজিজ খানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন দালালচক্র ও সংশ্লিষ্টদের খুঁজে দেখছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে।
উপ-পরিচালক শামীম আহমেদ আরও বলেন, বাংলাদেশি পরিচয়ে বিদেশে যাওয়ার জন্য রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ দালালচক্রের খপ্পরে পড়ছে। ভুয়া জন্মনিবন্ধন, ভুয়া এনআইডি—সবই তৈরি করা হচ্ছে মোটা টাকার বিনিময়ে। এ ধরনের জালিয়াতি রোধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় আরও জোরদার করা হবে।
