চট্টগ্রামে দুই কাস্টমস কর্মকর্তার গাড়ি ভাঙচুর, প্রাণনাশের হুমকি
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো

চট্টগ্রাম নগরীতে প্রাইভেটকার থামিয়ে কাস্টমসের দুই কর্মকর্তার ওপর হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় হামলা চালানো দুর্বৃত্তরা কাস্টমস কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে গুলি করতে বলার কথাও শুনা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর ডবলমুরিং থানার সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের চৌধুরী সুপার শপের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
কাস্টমসের দুই কর্মকর্তা হলেন- রাজস্ব কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান খাঁন ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বদরুল আরেফিন ভূইয়া। তারা দ্রুত গাড়ি চালিয়ে প্রাণে বেঁচেছেন। এতে গাড়ির কাচ ভাঙচুর হলেও তারা তেমন আহত হননি।
কাস্টমস কর্মকর্তাদের ধারণা, সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কয়েকটি অনিয়ম ধরেছিলেন। যার কারণে কয়েক মাস আগে থেকে হুমকি পাচ্ছিলেন। দুই মাস আগে জিডিও করেছিলেন থানায়। এর জের ধরে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। এদিকে দুই মাস আগে জিডি করলেও হুমকিদাতাদের শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। কাস্টমস কর্মকর্তারা এতে উদ্বেগ প্রকাশ করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
ঘটনাস্থলের দুইটি সিসিটিভি ফুটেজ আসে সমকালের হাতে। তাতে দেখা যায়, ‘তিন যুবক একটি মোটরসাইকেলে করে কাস্টমস কর্মকর্তাদের বহনকারী প্রাইভেটকারকে অতিক্রম করে সামনে আসেন। সিডিএ আবাসিক এলাকার ১ নম্বর সড়কের চৌধুরী সুপার শপের সামনে গিয়ে গাড়িটি আটকান। একপর্যায়ে দুই যুবক নেমে এসে যাত্রীর সামনের আসনের দিকে গাড়িটি আঘাত করেন। আরেক যুবক ‘গুলি কর, গুলি কর’ করে অন্য যুবককে বলতে থাকেন। এই সময় গাড়ি টান দিয়ে চলে যান কাস্টমস কর্মকর্তারা।’ এতে তাদের সামনের আসনের যাত্রী বসার দিকের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। ওই যুবকরা মোটরসাইকেলে উঠার সময় গালিগালাজ করে এক যুবক অন্য যুবককে কেন গুলি করেননি জানতে চান।
এ ঘটনায় বিকেলে থানায় মামলা দায়ের করেছেন আসাদুজ্জামান খাঁন। তাতে তিনি উল্লেখ করেন, তিনি ও বদরুল আরেফিন সকালে আগ্রাবাদ শুল্ক গোয়েন্দা দপ্তরে যান। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কাজ শেষে তারা ভাড়ায় চালিত একটি প্রিমিও প্রাইভেটকারে করে কাস্টমস হাউসের উদ্দেশে রওনা হন। সকাল ১০টা ২০ মিনিটের দিকে গাড়িটি ডবলমুরিং থানার সিডিএ ১ নম্বর রোডে ‘রয়েল অটো কেয়ার’ দোকানের সামনে পৌঁছালে পেছন থেকে একটি মোটরসাইকেল এসে তাদের গতিরোধ করে। মোটরসাইকেলে থাকা তিনজনের মধ্যে দুজনের মাথায় হেলমেট ছিল, একজন ছিলেন হেলমেট ছাড়া। গাড়ি থামার সঙ্গে সঙ্গেই মোটরসাইকেল থেকে নেমে এদের একজন হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে চালকের পাশের বাম দরজায় কোপ দেন। লাথিও মারেন দরজায়। এতে দরজার কাচ ভেঙে যায়। এ সময় দুর্বৃত্তরা বারবার চিৎকার করে বলতে থাকে- ‘গুলি কর, গুলি কর।’ আতঙ্কিত দুই কর্মকর্তা জীবন রক্ষার্থে দ্রুত গাড়ি নিয়ে অফিসে চলে যান। সেখানে গিয়ে ঘটনাটি কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, ‘বিভিন্ন অনিয়ম চিহ্নিত করে প্রায় প্রতিদিন ১০ থেকে ১২টি মামলা করছি। এজন্য বিভিন্ন অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন করে হুমকি দিতেন। এসব কাজ বন্ধ করতে বলতেন। এমনকি হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।’ হুমকির বিষয়ে গত ৬ অক্টোবর বন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন বলে জানান তিনি। জিডিতে গত ৫ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এক ব্যক্তি ফোন করে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি ও জানে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আসাদুজ্জামান।
ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মো. তারেক মাহমুদ বলেন, ‘কিছুদিন আগে সাজ্জাদ পরিচয়ে ফোন করে আসাদুজ্জামানকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন। তবে কোন সাজ্জাদ, তা বলেননি। কাস্টমসে অনিয়ম ধরার কারণেই এই হামলা হতে পারে।’ আরেক ডেপুটি কমিশনার এইচ এম কবির বলেন, ‘ঘটনাটি শোনার পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এটি নিশ্চিত না হলে স্বাভাবিক কাজে ব্যাঘাত ঘটবে।’
সম্প্রতি এই দুই কর্মকর্তা বিভিন্ন কনটেইনারে আসা আমদানি নিষিদ্ধ পপি বীজ ও ঘন চিনি জব্দ করেছিলেন। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় আনা বিভিন্ন পণ্য জব্দ করে মামলা দিয়েছিলেন তারা। তাদের কঠোর অবস্থানের কারণে কাস্টমসে কসমেটিকস আমদানি ঘিরে গড়ে উঠা সিন্ডিকেট ভেঙে যায়। এই কারণে সিন্ডিকেটের লোকজন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল। তারাই নামে-বেনামে হুমকি দিচ্ছিলেন বলে কাস্টমস কর্মকর্তাদের অভিযোগ।
জানতে চাইলে নগরীর ডবলমুরিং থানার বাবুল আজাদ বলেন, ‘ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। তদন্ত করে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’
তবে তিনি চাপাতি দিয়ে গাড়ি কোপানোর ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘দুর্বৃত্তরা প্রাইভেটকারের যাত্রীর জানালায় লাথি মেরেছেন।’ আসাদুজ্জামান খাঁনের জিডির তদন্ত কর্মকর্তা বন্দর থানার এসআই মো. জাহিদ হাসান শান্ত সমকালকে বলেন, ‘জিডিটি তদন্তের পর্যায়ে আছে। আমরা এখনো কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। কারা হুমকি দিয়েছে সেটি শনাক্তের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
