ঢাকা মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সাগরে কোরআনের বিস্ময়

সাগরে কোরআনের বিস্ময়

আধুনিক বিজ্ঞানের যুগে বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে আবিষ্কার করেছেন, দুই সমুদ্রের পানি পরস্পর সম্মিলিত হয় না। যেমন রোম সাগর ও আটলান্টিক মহাসাগরের পানি একটি অপরটির সঙ্গে একীভূত হতে পারে না। সেখানে রয়েছে বিস্ময়কর এক অদৃশ্য অন্তরায়। অথচ যে যুগে এ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর কোনো যন্ত্রসামগ্রী ছিল না; ১৪শ’ বছর আগে এমন যুগেই কোরআন বলে দিয়েছেÑ ‘তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন। উভয়ের মাঝখানে রয়েছে এক অন্তরায়, যা তারা অতিক্রম করে না। অতএব, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে? উভয় সমুদ্র থেকে উৎপন্ন হয় মণিমুক্তা ও প্রবাল। অতএব, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কোন কোন অবদানকে অস্বীকার করবে?’ (সুরা আর-রাহমান : ১৯-২৫)।

দুই সমুদ্র বলতে মিঠা ও লোনা সমুদ্র বোঝানো হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে উভয় প্রকার দরিয়া সৃষ্টি করেছেন। কোনো কোনো স্থানে উভয় দরিয়া একত্রে মিলিত হয়ে যায়, যার নজির পৃথিবীর বিভিন্ন ভূখ-ে পরিদৃষ্ট হয়। কিন্তু যে স্থানে মিঠা ও লোনা উভয় প্রকার দরিয়া পাশাপাশি প্রবাহিত হয়, সেখানে বেশ দূর পর্যন্ত উভয়ের পানি আলাদা ও স্বতন্ত্র থাকে। একদিকে থাকে মিঠা পানি, অপরদিকে লোনা পানি। কোথাও কোথাও এ মিঠা ও লোনা পানি ওপরে নিচেও প্রবাহিত হয়। পানি তরল ও সূক্ষ্ম পদার্থ হওয়া সত্ত্বেও পরস্পরে মিশ্রিত হয় না। আল্লাহ তায়ালা বলেনÑ ‘বল তো কে পৃথিবীকে বাসোপযোগী করেছেন এবং তার মাঝে নদনদী প্রবাহিত করেছেন এবং তাকে স্থির রাখার জন্য পর্বত স্থাপন করেছেন এবং দুই সমুদ্রের মাঝখানে অন্তরায় রেখেছেন? অতএব, আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো উপাস্য আছে কি? বরং তাদের অধিকাংশই জানে না।’ (সুরা আন-নামল : ৬১)। অন্যত্র বর্ণিত হয়েছেÑ ‘তিনি সমান্তরাল দুই সমুদ্র প্রবাহিত করেছেন একটি মিষ্টি, তৃষ্ণা নিবারক ও একটি লোনা, বিস্বাদ। আর উভয়ের মাঝে রেখে দেন একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল।’ (সুরা আল-ফুরকান : ৫৩)।

জ্যাক ভি. কোস্টা নামের এক ফরাসি বিজ্ঞানী সমুদ্রের ভেতরের পানি গবেষণা বিষয়ে প্রসিদ্ধ। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, রোম সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর রাসায়নিক দিক থেকে একটি অন্যটির চেয়ে ভিন্ন রকম। তিনি এ বাস্তব সত্যটি অনুধাবন করার জন্য জিব্রাল্টার দুই সমুদ্রের মিলন কেন্দ্রের কাছাকাছি সমুদ্রের তলদেশে গবেষণা চালান, সেখান থেকে তথ্য পান যে জিব্রাল্টার উত্তর তীর (মারুকেশ) আর দক্ষিণ তীর (স্পেন) থেকে আশাতীতভাবে একটি মিষ্টি পানির ঝরনা উথলে ওঠে। এ বড় ঝরনাটি উভয় সমুদ্রের মধ্য দিয়ে ৪৫ সূক্ষ্ম কোণে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হয়ে চিরুনির দাঁতের আকৃতি ধারণ করে বাঁধের মতো কাজ করে। এ ক্রিয়াকলাপের ফলে রোম সাগর এবং আটলান্টিক মহাসাগর একটি আরেকটির সঙ্গে মিশতে পারে না। দুটি সমুদ্রের মিলনস্থলে যে পৃথকীকরণ বা পর্দা রয়েছে তা খালি চোখে বোঝার উপায় নেই। কেননা, বাহ্যত সব সাগর একই রূপের মনে হয়।

শুধু তিনি নন; বরং অনেক মেরিন বিজ্ঞানীই এই রহস্য ভেদ করতে ব্যর্থ হন। ১৯৪২ সালে শতাধিক মেরিন স্টেশন বসিয়ে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হয়, কোন জিনিস দুই সাগরের মিলন কেন্দ্রে বাধা সৃষ্টি করে আছে? তারা সেখানে আলো পরীক্ষা করেন, বাতাস পরীক্ষা করেন এবং মাটি পরীক্ষা করেন, এর মধ্যে কোনো বাধা বা পর্দা সৃষ্টি করার কারণ খুঁজে পাননি। এখানে পানির একটি হালকা, একটি ঘন রং পরিলক্ষিত হয়, যা খালি চোখে প্রত্যক্ষ করা সম্ভব নয়। এমনকি বিজ্ঞানীরা আরও গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধির জন্য এবং আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের দূরে থেকে অনুধাবনের পদ্ধতির মাধ্যমে বা এর মাধ্যমে ছবি ধারণ করেন। ভূমধ্যসাগরের পানি গাঢ় নীল এবং আটলান্টিক সাগরের পানি হালকা নীল, আর জিব্রাল্টার সেল যা পাহাড়াকৃতির এবং তার রং হলো খয়েরি।

ঘনত্ব-উষ্ণতা এবং লবণাক্ততার দিক থেকে ভূমধ্যসাগরের পানি আটলান্টিকের তুলনায় অনেক বেশি। আরও মজার ব্যাপার হলো, ভূমধ্যসাগরের পানি জিব্রাল্টার সেল বা সাগর তলের উঁচু ভূমির ওপর দিয়ে আটলান্টিক সাগরের মধ্যে শতাধিক কিলোমিটার প্রবেশ করেছে এবং তা ১ হাজার মিটার গভীরে পৌঁছার পরও তার উপরোক্ত বৈশিষ্ট্যের ও রঙের কোনো পরিবর্তন সাধিত হয়নি। যদিও উভয়ের মাঝে রয়েছে প্রচ- ঢেউ, প্রবল খরস্রোত এবং উত্তাল তরঙ্গ। তথাপিও পরস্পর মিশ্রিত হয় না এবং একে অন্যকে অতিক্রম করতে পারে না। যেহেতু উভয়ের মাঝে রয়েছে একটি পর্দা। যেমন বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে প্রাগুক্ত আয়াতে। সাগরের এ বিস্ময়কর সৃষ্টিরহস্য উদ্ঘাটন করতে গিয়ে অনেক গবেষক কোরআনের প্রাগুক্ত আয়াতে এর অলৌকিকতার সন্ধান পেয়েছেন। তাদের কেউ কেউ এ সূত্রে সত্য ইসলামও গ্রহণ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়। ফ্রান্সের সমুদ্রবিজ্ঞানী ড. কোস্টাও ইসলাম গ্রহণ করেছেন বলে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

কেন এ অদৃশ্য পর্দা?

মিষ্টি পানি হলো সুপেয় নদীর পানি। এ পানি মানুষের তৃষ্টা নিবারণের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। নদীর মিষ্টি পানি না থাকলে সভ্যতা মরে যেত। আর লোনা পানি হলো সাগরের অতল জলরাশি। নদীর পানির মিষ্টতার মতো সাগরের পানির লবণাক্ততাও বিশাল অতি প্রয়োজনীয়। সাগরের পানি মিঠা হলে বাতাস দূষিত হয়ে যেত। জলে-স্থলে সব প্রাণী মরে যেত। সাগরের পানি লবণাক্ত হওয়ায় বাতাস সর্বদা আর্দ্র থাকে এবং এতে মারা যাওয়া প্রাণীর দেহ পচে না। সাগরের মরদেহ পচে গেলে বাতাস দূষিত হতো এবং এর প্রাণবৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত