ঢাকা শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ

হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ

ইসলামে হককে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ। হাক্কুল্লাহ হলো মহান আল্লাহতায়ালার হক এবং হাক্কুল ইবাদ হলো বান্দার হক। মুআয ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি গাধার ওপর নবী (সা.) এর পেছনে সওয়ার ছিলাম। তিনি বললেন, হে মুআয! তুমি কি জানো, বান্দার ওপর আল্লাহর হক কী এবং আল্লাহর ওপর বান্দার হক কী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই অধিক জানেন। তিনি বললেন, বান্দার ওপর আল্লাহর হক এই যে, সে তাঁরই ইবাদত করবে, এতে তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর ওপর বান্দার হক এই, যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করবে না, তিনি তাকে আজাব দেবেন না। অতঃপর আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি লোকদেরকে (এ) সুসংবাদ দেব না? তিনি বললেন, তাদেরকে সুসংবাদ দিও না। কেননা, তারা (এরই ওপর) ভরসা করে বসবে। (বোখারি : ২৮৫৬)।

‘হাক্কুল্লাহ’ মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি আমাদের হক, আল্লাহতায়ালার দেওয়া আদেশ-নিষেধ মেনে চলা। তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করা। তার ইবাদত করা। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন, ‘তোমরা ইবাদত করো আল্লাহর, তাঁর সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক করো না। আর সদ্ব্যবহার করো মাতা-পিতার সঙ্গে, নিকটাত্মীয়ের সঙ্গে, এতিম, মিসকিন, নিকটাত্মীয়-প্রতিবেশী, অনাত্মীয়-প্রতিবেশী, পার্শ্ববর্তী সাথি, মুসাফির এবং তোমাদের মালিকানাভুক্ত দাস-দাসীদের সঙ্গে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না, তাদের যারা দাম্ভিক, অহংকারী। (সুরা নিসা : ৩৬)। আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সঙ্গে শরিক করাকে ক্ষমা করবেন না, আর এ ছাড়া অন্যান্য পাপ যাকে ইচ্ছা তিনি ক্ষমা করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শরিক করল, অবশ্যই সে চরম ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হলো। (সুরা নিসা : ১১৬)।

‘হাক্কুল ইবাদ’ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষকে ভালোবাসা, সবার সেবা করা, সাহায্য-সহযোগিতা করা হাক্কুল ইবাদের অন্তর্বুক্ত। একজন মুসলিম অপর মুসলিমের সঙ্গে দেখা হওয়া মাত্রই যে হক, তা হচ্ছে, সালাম বিনিময় করা। পরিবার, সমাজ ও মানবসেবা হলো হাক্কুল ইবাদের অন্যতম দিক। হাদিস শরিফে মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি দুনিয়ায় অপরের একটি প্রয়োজন মিটিয়ে দেবে, পরকালে আল্লাহ তার ১০০ প্রয়োজন পূরণ করে দেবেন এবং বান্দার দুঃখ-দুর্দশায় কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ালে আল্লাহ তার প্রতি করুণার দৃষ্টি দেন।’ (মুসলিম : ২৫৬৬)।

অভাবি মানুষকে সহয়তা করা, তাদের তরে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া। বস্ত্রহীনকে পোশাক-আশাক দিয়ে সহয়তা করাÑ এটি হাক্কুল ইবাদ। হাদিস শরিফে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, হুজুর (সা.) এরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমান অপর মুসলমানকে বস্ত্রহীনতায় বস্ত্র দিলে আল্লাহপাক তাকে জান্নাতের সবুজ বস্ত্র পরাবেন।’ (তিরমিজি : ২৮৩৫)। হাদিস শরিফে আরও এরশাদ হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে মুসলমান অপর কোনো মুসলমানকে বস্ত্রহীন অবস্থায় বস্ত্রদান করবে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে সবুজ বর্ণের পোশাক পরাবেন, খাদ্য দান করলে তাকে জান্নাতের ফল খাওয়াবেন, পানি পান করালে জান্নাতের শরবত পান করাবেন।’ (আবু দাউদ : ১৭৫২)।

অন্নহীনকে খাবার দেওয়া হাক্কুল ইবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ ব্যক্তির খোঁজখবর নাও, বস্ত্রহীন লোকদের বস্ত্র দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করে দাও।’ (বোখারি : ২৪১৭)। রাসুল (সা.) ক্ষুধার্তকে খাবার দান করতে কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা ভিক্ষুক (ক্ষুধার্তকে) কিছু না কিছু দাও, আগুনে পোড়া একটা খুর হলেও। ’ (আহমাদ : ১৬৬৯৯) । তিনি আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সে ব্যক্তি পূর্ণ মোমিন নয়, যে নিজে পেট পুরে আহার করে। কিন্তু তার প্রতিবেশী ক্ষুধার্ত থাকে।’ (বায়হাকি : ৩৩৮৯)।

তিনি আরও বলেন, ‘ক্ষুধার্তকে খাবার দান করো। তাহলে শান্তির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ’ (তিরমিজি : ১৯৮৪)। মহান আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে হাক্কুল্লাহ ও হাক্কুল ইবাদ মেনে চলার ও বুঝবার তৌফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, দত্তবাড়ী দারুল হিফজ ইসলামিয়া মাদ্রাসা, সিরাজগঞ্জ

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত